গিয়াস উদ্দীন সেলিম নির্মাণ করতে যাচ্ছেন বাংলাদেশে সরকারের অনুদানের ছবি ‘কাজল রেখা’। আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে এর শুটিং শুরু হবে। লোককাহিনি অবলম্বনে নির্মিতব্য এই ছবিতে কারা কারা অভিনয় করবেন, তা নিয়ে শুরু থেকেই সবার মধ্যে একটা আগ্রহ ছিল। এত দিন নাম প্রকাশ করতে চাননি পরিচালক। এবার জানা গেল ছবির প্রধান তিন চরিত্রের নাম। কাজল রেখা চরিত্রে অভিনয় করবেন মন্দিরা চক্রবর্তী, সুচ কুমার চরিত্রে শরীফুল রাজ ও কঙ্কণ দাসী চরিত্রে রাফিয়া রশীদ মিথিলা। পরিচালক জানান, সবার সঙ্গে শিল্পীদের পরিচয় করিয়ে দিতে আগামী ২ মার্চ রাজধানীতে মিট দ্য প্রেস অনুষ্ঠান করা হবে।
শরিফুল রাজ ও মিথিলি বিনোদনজগতে পরিচিত হলেও কাজল রেখা চরিত্রের মন্দিরা চক্রবর্তী একেবারেই নবীন। জানা গেছে, শান্ত–মারিয়ম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ২০১২ সালে ‘চ্যানেল আই সেরা নাচিয়ে’ দ্বিতীয় রানারআপ হন। এর পর থেকে টুকটাক বিজ্ঞাপন ও নাটকে অভিনয় করেছেন। প্রথম সিনেমায় অভিনয় করতে যাচ্ছেন তিনি।
মন্দিরা জানান, প্রায় এক বছর ধরে চরিত্রটির ওপর গ্রুমিং করছেন। মাস দেড়েক আগে জেনেছেন কাজল রেখা তিনিই। তিনি বলেন, ‘একদিন হঠাৎ করেই সেলিম ভাই আমাকে বললেন, “তুমি কাজল রেখা চরিত্রটি করতে চলেছ।” বোঝেন ওই সময় আমার অবস্থা কেমন হয়েছিল!’
শোনার পর কিছুটা নার্ভাস হয়ে যান মন্দিরা। বলেন, ‘“মনপুরা” দেখার পর থেকেই সেলিম ভাইয়ের কাজ সম্পর্কে ধারণা তৈরি হয় আমার। তার মতো একজন বড় পরিচালকের বড় প্রজেক্টের নাম ভূমিকায় অভিনয় করব আমি, নার্ভাস লাগছিল। আবার এক্সসাইটেডও হয়েছি। কারণ, আমার প্রথম ছবিই সেলিম ভাইয়ের স্বপ্নের প্রজেক্ট।’
ছোটবেলায় মায়ের মুখ থেকে কাজল রেখা রূপকথার গল্প শুনেছেন মন্দিরা। এরপর পরিচালকের কাছে। তাই চরিত্রটি নিয়ে বেশ আত্মবিশ্বাসী এই নবাগত। তিনি বলেন, ‘প্রায় এক বছর ধরে গ্রুমিং করছি। প্রথম প্রথম চরিত্রটি নিয়ে একটু সমস্যা হতো। একটা সময় এসে চরিত্রটি করতে নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। এখন মনে হয়, আমি পারব।’
মন্দিরা প্রসঙ্গে গিয়াস উদ্দীন সেলিম বলেন, ‘কাজল রেখা চরিত্রটি খুঁজে বের করতে অনেক সময় নিয়েছি। চরিত্রটির জন্য অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। শেষ পর্যন্ত মন্দিরাকে পেয়েছি। তাঁকে নিয়ে প্রায় আট মাস ধরে গ্রুমিং করেছি আমরা। মন্দিরাই আমার কাজল রেখা।’
এদিকে ছবিতে রাজ ও মিথিলার চুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে পরিচালক বলেন, রাজ আরও আগেই চুক্তি করেছেন। মিথিলা চুক্তি করেছেন আজ সোমবার।
সুচ কুমার চরিত্রটি কেমন হবে জানতে চাইলে রাজ বলেন, ‘এটি ৪০০ বছর আগের গল্পের চরিত্র। তখনকার সময়ের গল্পের চরিত্র হয়ে কাজ করতে হবে। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে চরিত্রটিতে। তবে চিত্রনাট্যটি পড়ার সময় কাজল রেখার সেই রূপকথার গল্পের মজাটা পাচ্ছি। নিজের মধ্যে একটা অ্যাডভেঞ্চার কাজ করছে। যেহেতু সেলিম ভাইয়ের কাজ এটি। ভালো কিছু হবে।’
মিথিলা জানান, গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে তাঁর প্রথম কাজ এটি। অনেক দিন ধরেই কাজটির জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন তিনি। চরিত্রের লুকও সেট হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এটি একটি রূপকথার গল্পের চরিত্র। চরিত্রের মধ্যে অনেক কিছু ফ্যান্টাসির মতো মনে হবে। আবার আমাদের গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের সঙ্গেও মানিয়ে রান করবে গল্পটি। প্রস্তুতি নিতে গিয়ে দেখলাম, খুবই মজার একটি চরিত্র এটি।’
মিথিলা বলেন, ‘কঙ্কণ বেশ শক্তিশালী চরিত্র। আমি যেমন নই, তেমন একটি চরিত্র। খুবই পছন্দ হয়েছে আমার। প্রথম কাজ হিসেবে এই চরিত্র করার মধ্য দিয়ে সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে দারুণ একটা অভিজ্ঞতা হবে আমার।’
২০০৯ সালে ‘মনপুরা’ ছবি মুক্তির পরপরই ‘কাজল রেখা’ ছবির চিত্রনাট্য লেখেন গিয়াস উদ্দীন সেলিম। প্রায় এক যুগ ধরে কাজটি করার চেষ্টা করেছেন তিনি। কিন্তু পারেননি।
তিনি বলেন, ‘এটি ষোড়শ শতাব্দীর “মৈমনসিংহ গীতিকা”র গল্প। সেই সময়কে ধরে কাজটি করতে গেলে অনেক বড় আয়োজন লাগে, বাজেট লাগে। এ কারণে বারবার বাধা পেয়ে কাজটি করতে পারিনি। এখন এসে সব মিলিয়ে একটা পরিবেশ পেয়েছি।’
পরিচালক জানান, নেত্রকোনার দুর্গাপুর, সিলেটের হাওর, কক্সবাজার সমুদ্রে শুটিং হবে। এরই মধ্যে ঢাকার বাইরে বাড়িঘরের সেট তৈরি শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই কাজটির শুটিং করতে হবে। কারণ, লোকেশন তৈরি, পোশাক–আশাক, সওদাগরের নৌকাসহ তখনকার সময়কার নানা জিনিস দিয়ে খাপ খাইয়ে শুটিং তাড়াতাড়ি শেষ হবে না। অনেক চ্যালেঞ্জ আছে কাজটিতে।’