ঈদের আগের দিনই ববিতা জানিয়ে রেখেছিলেন, এবার ঈদে আবার এক হবেন তাঁরা। একটা দিন সবাই মিলে নিজেদের মতো করে কাটাবেন। আয়োজনে কী কী থাকবে, তা–ও আগেভাগেই ঠিক করে রেখেছিলেন। শেষ পর্যন্ত আড্ডায় আড্ডায় একটা সুন্দর দিন পার করলেন তিন বোন, ঢালিউডের তিন কন্যা, সুচন্দা, ববিতা ও চম্পা।
দেশের মধ্যে কোথাও গেলে সাধারণত একসঙ্গেই যান তিন বোন। কিন্তু গেল দুই বছর ছিল ব্যতিক্রম। করোনায় কারোরই ঈদে দেখা হওয়ার সুযোগ ছিল না। তারও আগের তিন বছর নানা কারণে ঈদে এক হওয়া হয়নি। একজন দেশে থাকলে বাকি দুজন হয়তো দেশের বাইরে। সুচন্দা বললেন, ‘দেখা যায় ববিতা ছেলের কাছে যায়, চম্পা তার হাজবেন্ডের সঙ্গে বাইরে যায়, এ রকম করে হয়নি।’ তবে তিন বোনই এবার দেশে ছিলেন। ‘জামাই, নাতি–নাতনি সবাই ছিল। অস্ট্রেলিয়ায় আমার একটা ভাই থাকে, তার স্ত্রীও আসছিল।’ অবশ্য নিজেদের কারোর বাসায় নয়, তাঁরা এক হন বড় বোন সুচন্দার মেয়ের বনানীর বাসায়। দুপুরের আগে একে একে এসে পৌঁছান তিন বোন; হাসি, আনন্দ ও আড্ডায় কখন যে গভীর রাত হয়ে যায়, টেরও পাননি তাঁরা। রাত দেড়টায় একে একে সুচন্দার মেয়ে রাফাইয়াত মালিক লিসার ডিওএইচএসের বাসা ছাড়েন তাঁরা।
ববিতা গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে বললেন, ‘অনেক সুন্দর একটা দিন কাটালাম। মনে রাখার মতো। ৩০-৩৫ জন নিজেদের পরিবারের সদস্য। লিসার কয়েকজন বন্ধুও এসেছিল। সবচেয়ে বেশি মজা হয়েছে ঈদি নিয়ে। ছোটবেলায় আমি সালামি নিয়ে মজা করতাম। এখন তো আমাকে শুধু দিতেই হয়। আমি শুধু একজনের কাছ থেকে পাই, তিনি বড় আপা (সুচন্দা)। সালামি পাওয়ার জন্য সবাই ডাবল ডাবল সালাম করে। ব্যাগ ভরে নতুন টাকা নিয়ে যেতে হয়েছে। আত্মীয়স্বজন, নাতি–নাতনি, কাজের লোক, দারোয়ান, ড্রাইভার সবাইকে দিতে হয়েছে। জামাইদের একটু বেশি দিয়েছি।’
ববিতা বললেন, ‘বিকেলে বাড়ির সামনের খোলা জায়গায় চটপটি, ফুচকা, ১০–১২ রকমের মিষ্টিও খেয়েছি। গল্প করেছি। সবাইকে ভূতের গল্পও শুনিয়েছি। সবাই মিলে অনেক ছবি তুলেছি। ছবি তোলার কারণও আছে।’ কী কারণ? জানতে চাইলে ববিতা বললেন, ‘আমরা কেউই পৃথিবীতে থাকব না। সবাইকে চলে যেতে হবে। স্মৃতি হিসেবে থাকল। ভারতে বচ্চন ও কাপুর খানদানের গ্রুপ ফটো দেখি। আমরাও তাই ভাবলাম, পুরো বংশের যারাই আছে, তাদের ছবি এক ফ্রেমে থাকুক। একটা সময় যে একান্নবর্তী পরিবার ছিলাম, সেটাও মনে করিয়ে দেওয়া আরকি। যদিও এখন সবাই দূরে দূরে সরে গেছি। পারিবারিক গেট টুগেদার হওয়া দরকার। পরিবারের সবার খোলা মনে আলাপ করা দরকার, যার যার মনে যা যা কিছু আছে। যে যতই ব্যস্ত থাকি, পরিবার ও আত্মীয়স্বজনকে সময় দেওয়া উচিত।’
এ ধরনের আয়োজনে তিনজনই বাসা থেকে সবার পছন্দের পদ রান্না করে নিয়ে আসেন। সুচন্দার কোরমা, চম্পার চায়নিজ আর ববিতার গরুর মাংসের পদ বরাবরই প্রশংসা কুড়িয়েছে। দুপুরে একরকম খাওয়া, বিকেলে আরেক রকম আর রাতে আরেক রকম—এভাবেই কেটেছে।
সুচন্দা জানালেন, ‘আমার ছোট মেয়ের বাড়ির গেট টুগেদার আমাদের ছোটবেলায় ফিরিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। তখন একই বাড়িতে থাকলেও ঈদের আগে কেউ কারও জামা দেখতে পেতাম না, লুকিয়ে রাখতাম। আমি কী পরব, কীভাবে সাজব, সেসব আমাদের কাছে বিরাট ব্যাপার ছিল। এবারও অনেকটা সে রকম হয়েছে। তিন বোনই কয়েক সেট নতুন জামা নিয়ে গেছি। কাপড়চোপডও মজা করে পরেছি। সকালে এক রকম, বিকেলে এক রকম, রাতে আরেক রকম। এত মজা হয়েছে, বলে বোঝাতে পারব না। জানি না, কে আবার কবে মারা যাই, এটা একটা স্মরণীয় ঈদ হয়ে থাকল।’