প্রেমিক-প্রেমিকা অভিসারে যাবে, প্রেক্ষাগৃহের নাম তাই অভিসার! বিখ্যাত সব সিনেমার সাক্ষী থাকা এই হল জমজমাট ছিল গত বছরও। এ বছরের ঈদে সেই হলের সামনে শ্মশানের নীরবতা। মাস্ক বিক্রি করতে দেখা গেছে এক ভ্রাম্যমাণ ফেরিওয়ালাকে। মধুমিতা হলের সামনে দেখা যায়নি পথচারীও। সিনেমাহীন আরেকটি ঈদ পাড়ি দিলেন বাংলাদেশের মানুষ।
ঈদে সিনেমা হলে যাওয়া একরকম রীতিতে পরিণত হয়েছিল বাঙালির। যেকোনো জাতি-ধর্মের মানুষ উৎসবে নতুন সিনেমা দেখতে পছন্দ করেন। হাসি-কান্না-উল্লাস আর উচ্ছ্বাসের এক পরিপূর্ণ প্যাকেজ হিসেবে সিনেমার জুড়ি নেই আজও। অন্ধকার প্রেক্ষাগৃহ, সুবিশাল পর্দা আর বুককাঁপা শব্দের সেই গৃহের দরজায় যেন লেগে গেছে অন্তিম তালা!
সবকিছু খুলছে। কেবল সিনেমা হল বন্ধ! কবে খুলবে, নাকি খুলবে না? কেউ বলতে পারে না। স্বাস্থ্যবিধি মেনে শুটিং শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশে। চেষ্টা করেছে বাংলাদেশও। কিন্তু প্রেক্ষাগৃহ না খুললে কোথায় দেখানো হবে সেগুলো? সরকারের পক্ষ থেকে প্রেক্ষাগৃহ খোলার কোনো নির্দেশনা এখনো আসেনি। আক্ষেপ করে প্রযোজক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম খসরু জানান, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না করেই বাণিজ্যসচিবের মাধ্যমে প্রশাসক চিঠি পাঠিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদে। তিনি বলেন, ‘সমিতির মাধ্যমে আমরা সরকারের কাছে আবেদন করতে পারতাম। কিন্তু প্রশাসক আমাদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। অথচ এ বিষয়ে আমাদের পরামর্শ নেওয়া জরুরি ছিল। স্বাস্থ্যবিধি মেনে হল চালাতে সরকারের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
ঢালিউড ডুবতে বসার বেশ আগেই উপমহাদেশীয় সিনেমা চালানোর দাবি করেছিলেন হলমালিকেরা। দেশি শিল্পীদের স্বার্থের কথা ভেবে আন্দোলন করে সে দাবিকে দাবিয়ে রেখেছিলেন প্রযোজকেরা। কিন্তু এখন সুর বদলেছেন তাঁরা। প্রযোজক নেতা খসরু বলেন, ‘যে শিল্পীদের জন্য উপমহাদেশীয় ছবি চালানোর বিরোধিতা করেছিলাম, আজ দুঃখ করে বলতে হচ্ছে, হিন্দি ছবি চলুক। হল বাঁচলে প্রযোজকও বাঁচবে।’
বন্ধ হতে হতে এখন পর্যন্ত টিকে আছে ১৯৫টি প্রেক্ষাগৃহ। স্টেশন হিসেবে আছে ১১০টি। নগদ টাকায় নতুন ছবি কিনে চালানোর মতো স্বাবলম্বী হল রয়েছে ৬৫টি। এ অবস্থায় এল করোনা। এখন নতুন ছবি এলেও কি বাঁচানো যাবে হল? বিশ্বের বড় বড় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাদের বড় বাজেটের ছবিগুলো এখন ছাড়তে চায় না। কেননা, এখন ব্যবসা হবে না। বাংলাদেশের হলমালিকেরাও নতুন ছবি ছাড়া হল চালু করবেন না। এই অবস্থায় প্রদর্শক সমিতির ভাবনা কী, জানতে চাইলে সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘হলের টিকিট বিক্রি পানের দোকানের চেয়ে খারাপ। এখন হল খুললেই লস। তা ছাড়া হল খোলামাত্র দর্শক আসবেন না। দর্শককে হলমুখী করতে সময় লাগবে।’
তবে হিন্দি ছবি চালু করলে দর্শক হলে যাবেন। এতে ক্ষতি কিছুটা কম হবে বলে মনে করেন নওশাদ। তিনি বলেন, ‘দাবাং’ ছবির মতো পুরোনো ছবিগুলো দিয়েও হলগুলো চালু করা যেতে পারে। হলিউডের ছবি যেভাবে একই দিনে ঢাকাসহ সারা বিশ্বে মুক্তি পায়, ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা ছবিগুলোও সে রকম হওয়া উচিত। ওটিটিতে চলে যাওয়ার পর দেশের হলে মুক্তি দিয়ে লাভ নেই।
ঢালিউড তারকা শাকিব খান মনে করেন, সরকার যখন সুবিধা মনে করবে, তখনই হল খুলবে। তিনি বলেন, ‘হল বন্ধ থাকায় সবারই কমবেশি কষ্ট হচ্ছে। তবে এটা ঠিক, ঈদ আমাদের সিনেমার জন্য, এশিয়ার সিনেমার জন্য বড় ফ্যাক্টর। সারা বছর যা ব্যবসা হয়, ঈদে তার চেয়ে অনেক বেশি হয়। এই দুই ঈদে তা হলো না।’