সিনেমা হলে প্রজেক্টর বসাচ্ছেন শাকিব, হতে পারে মামলা

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। ছবি: মাসুম আলী
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির নেতারা। ছবি: মাসুম আলী

আসন্ন ঈদ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দেড় শ প্রেক্ষাগৃহে নিজস্ব প্রজেক্টর ও সার্ভার বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে চিত্রনায়ক শাকিব খানের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এস কে ফিল্মস। ইতিমধ্যে দেশের ৫টি হলে তাদের আমদানি করা যন্ত্রের মাধ্যমে চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়েছে। বাকিগুলো চলবে আগামী ঈদে।

তাদের এই উদ্যোগে স্বাগত জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতি। তবে জাজ মাল্টিমিডিয়া কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের চুক্তিপত্র ভেঙে নতুন কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টর ও সার্ভার ব্যবহার করলে আইনের আশ্রয় নেবে তারা। তারা দাবি করছে, সিনেমা হল–মালিকদের কাছে তাদের বকেয়া পাওনা আছে। সেটা না আদায় করার সুযোগ নিতেই হলের মালিকেরা নতুন প্রতিষ্ঠানের আশ্রয় নিচ্ছেন।

জানা গেছে, শাকিব খানের প্রেক্ষাগৃহে উন্নত প্রজেক্টর ও সার্ভারের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত সোমবার রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে প্রদর্শক সমিতির কার্যনির্বাহী সদস্যরা সভা করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হল–মালিকদের নতুন প্রদর্শনব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আহ্বান জানান। সেখানে উপস্থিত সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির পক্ষ থেকে হল-মালিকদের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হচ্ছে। বর্তমানে দেশে সচল প্রেক্ষাগৃহের সংখ্যা ১৭৪টি। ঈদে সংখ্যাটি বাড়বে।

বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদ বলেন, ‘কয়েক বছর আগে সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে জাজ মাল্টিমিডিয়া নিম্নমানের ডিজিটাল প্রজেক্টর ও সার্ভার স্থাপন করে। নতুন প্রযুক্তি হওয়ার কারণে এ বিষয়ে আমাদের কোনো ধারণা ছিল না। সে সুযোগে কিছু অযৌক্তিক আর্থিক শর্ত দেয় তারা। এত দিন আমাদের সমিতির সদস্যরা অযৌক্তিক আর্থিক শর্তের বিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে আসছিল। জাজের সরবরাহ করা মেশিনগুলোও বর্তমানে প্রায় অকেজো। এ অবস্থায় বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা শাকিব খান হলগুলোর মান বৃদ্ধিতে এগিয়ে আসছেন। তাঁর নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির প্রজেক্টর ও সার্ভার সরবরাহ করবেন বলে আমাদের সমিতিকে জানিয়েছেন।’

শাকিব খান

গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) সংবাদ সম্মেলন করে প্রেক্ষাগৃহগুলোতে শাকিব খানের প্রতিষ্ঠানের প্রজেক্টর ও সার্ভার বসানোর বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সমিতির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘যেহেতু আমাদের দর্শক ধরে রাখা ও উন্নত প্রযুক্তি দুটোই প্রয়োজন, তাই আমরা শাকিব খানের প্রস্তাব গ্রহণ করেছি। আমরা আশা করছি ঈদুল আজহার আগেই এই যন্ত্রগুলো নির্ধারিত হলগুলোতে চালু হবে।’

শাকিব খানের প্রতিষ্ঠানের এস কে ফিল্মসের প্রতিনিধি মোহাম্মদ ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৫টি হলে যন্ত্রগুলো সরবরাহ করছি। হলগুলো হচ্ছে ঢাকার এশিয়া, শাহীন, লক্ষ্মীপুরের হ্যাপি, মতলবের কাজলী, শরীয়তপুরের রুমা এবং গোপালগঞ্জের চিত্রবাণী। এগুলোসহ এবারের ঈদে সব মিলে ১৫০টি প্রেক্ষাগৃহে আমাদের প্রজেক্টর ও সার্ভার থাকবে।’

এমন পরিস্থিতিতে জাজ মাল্টিমিডিয়া কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, কয়েক বছর আগে ৩১২টি প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে চুক্তি করে সার্ভার ও প্রজেক্টর বসিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছে তারা। তিন মাস আগে তিন বছরের জন্য চুক্তির নবায়নও হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আলিমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘এখনো এসব প্রতিষ্ঠানে সার্ভার এবং প্রজেক্টর পড়ে আছে। আমাদের সাউন্ড সিস্টেমস আছে এসব প্রতিষ্ঠানে। কোনো চুক্তি বাতিল করতে হলে তিন মাসের নোটিশ দিতে হয়। চুক্তিপত্র ভেঙে জোরপূর্বক আমাদের প্রেক্ষাগৃহে প্রজেক্টর ও সার্ভার বসানো হলে মামলা করব।’ তিনি বলেন, ‘কমবেশি সবার কাছেই আমাদের বকেয়া আছে। টাকা না দেওয়ার জন্য তারা নতুন সরবরকারীর দ্বারস্থ হয়েছে।’ তিনি দাবি করে বলেন, ‘প্রদর্শক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কাজী শোয়েব রশীদের কাছে আমাদের বকেয়া সবচেয়ে বেশি।’

যোগাযোগ করা হলে প্রদর্শক সমিতির উপদেষ্টা সুদীপ্ত কুমার দাস বলেন, ‘মাস তিনেক আগে হল–মালিকদের চিঠি দিয়ে জাজ মাল্টিমিডিয়া জানিয়েছিল, তারা এখন আর প্রজেক্টর ভাড়া নেবে না কিন্তু বিজ্ঞাপনের পয়সাটা পুরোপুরি নিয়ে নেবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসে দর-কষাকষির জন্য সিইও খোকনের সঙ্গে বৈঠক ডেকেছিলাম, কিন্তু তিনি আসেননি।’ জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী আলিমুল্লাহ খোকন জানান, আজ (মঙ্গলবার) পর্যন্ত চুক্তি বাতিলের জন্য কোনো নোটিশ দেননি কোন হল–মালিক।

মামলার হুমকির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে শাকিব খানের প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘চুক্তি করেছে কি না কিংবা নোটিশ দেওয়া হয়েছে কি না, এটা হল–মালিকদের বিষয়। আমাদের এখানে কিছু বলার নাই। আর স্বাধীন দেশে ব্যবসা করার অধিকার সবার আছে। একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে সারা দেশের হল–মালিকেরা জিম্মি থাকতে পারে না।’

নতুন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সার্ভার এবং প্রজেক্টর ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে কিছু জানেন না বলে দাবি করেছেন প্রদর্শক সমিতির সভাপতি ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কার্যকরী পরিষদের সভা বা সংবাদ সম্মেলনের বিষয়ে আমাকে জানানোই হয়নি। এখানে নেতৃত্ব দিয়েছেন মূলত হল নেই এমন সদস্যরা। এটি দুঃখজনক।’

সম্প্রতি প্রথম আলোকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে চিত্রনায়ক শাকিব খান বলেন, ‘মনের তাড়না থেকে হলে হলে প্রজেকশন মেশিন দিচ্ছি। কারণ, সিনেমাকে বাঁচাতে হবে। সিনেমা না বাঁচলে আমার নিজেরও তো অস্তিত্ব থাকবে না। আমি এখান থেকে টাকা আয় করেছি, এখানে বিনিয়োগ করতে চাই। ছবিতে বিনিয়োগ করছি, মেশিনে বিনিয়োগ করছি।’ প্রজেকশন মেশিনের ভাড়া প্রযোজকদের কাছ থেকে কীভাবে নেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আগে জাজ মাল্টিমিডিয়া যেভাবে নিয়েছে, সেভাবে নিচ্ছি না। কারণ আমি নিজেও তো প্রযোজক। প্রযোজকদের বাঁচাতে হবে। যতটুকু না নিলে নয়, ততটুকুই নিতে চাই। মেশিনের পেছনে লোকবলের খরচটা আপাতত নেব। এরপর ই-টিকিটিং সিস্টেম শুরু হলে প্রযোজকদের কাছ থেকে মেশিনভাড়ার কোনো টাকা নেওয়া হবে না।’