রাজ্জাক, আলমগীর, ইলিয়াস কাঞ্চন, মাহমুদ কলি, রুবেল, মান্নাসহ অনেকেই শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু কে এই সংগঠনের সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদক অথবা সদস্য, এসব নিয়ে ভক্তদের মোটেও কোনো আগ্রহ কোনোকালে ছিল না। শিল্পীদের কাছে দেশের মানুষ বা ভক্তদের চাওয়া থাকত নিত্যনতুন ছবির খবর। এখন আর আগের মতো ছবির কাজ হয় না, শিল্পীদের অনেকে তাই সমিতি নিয়ে মেতে থাকেন। এমনটা মনে করছেন চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন।
দেশের চলচ্চিত্রের খোঁজখবর রাখেন এমন কেউ কেউ বলছেন, শিল্পীদের মূল কাজ অভিনয়টা কেন হচ্ছে না, তা নিয়ে ভাবনাচিন্তা করা উচিত। অভিনয়ের পরিসর কীভাবে আরও বাড়ানো যায়, তা নিয়ে শিল্পীদের মধ্যে আলোচনা হওয়া উচিত।
বরেণ্য চলচ্চিত্র অভিনেত্রী ববিতার মতে, চলচ্চিত্র উন্নয়নের জন্য যে এফডিসি, সেখানে নেই চলচ্চিত্রের ব্যস্ততা। এফডিসিতে এত সমিতি, তাতে লাভ কী? চলচ্চিত্রই যদি না থাকে, এত সমিতি দিয়ে কী হবে?
চিত্রনায়ক ও প্রযোজক আলমগীর চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নেতৃত্বে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের সময় সমিতি ছিল, সেটা সিনেমার চেয়ে বড় বিষয় ছিল না। এখন কাজ নেই ইন্ডাস্ট্রিতে, শিল্পীদের কাছে নির্বাচন মুখ্য হয়ে যাচ্ছে, একটু কেমন যেন লাগে।’ তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের কার ছবির সংখ্যা কত বেশি হবে, কে কত বেশি কাজ পাব, সেদিকে নজর না দিয়ে আমরা অন্যদিকে নজর দিচ্ছি। কে সভাপতি হব, কে সাধারণ সম্পাদক হব কিংবা কে সদস্য হব, এটাই যেন মুখ্য।’
এবারের শিল্পী সমিতির নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করছেন ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেন, ‘ছবির কাজ নাই। তাই বেশির ভাগ শিল্পী সমিতি নিয়ে মেতে আছে। দেশে এখন যে পরিমাণ সিনেমা তৈরি হচ্ছে, তাতে সব শিল্পী তো কাজ করতে পারছেন না। আমরাও সমিতিতে ছিলাম। ছবির কাজে এতটাই ব্যস্ত থাকতাম যে সমিতি ছিল গৌণ। এখন নির্বাচনে যতটা মনোযোগ দেখি, সিনেমা নিয়ে ততটা চোখে পড়ে না।’ ইলিয়াস কাঞ্চন এ–ও বলেন, ‘এমনও শুনেছি, নেতা হওয়ার জন্য লাখ লাখ টাকাও খরচ হয়। এই টাকা যদি সবাই মিলে একটি সিনেমার পেছনে বিনিয়োগ করত, তা–ও তো লাভ হতো।’
সমিতির আদৌ গুরুত্ব আছে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান বরেণ্য অভিনয়শিল্পী কবরী। তিনি বলেন, ‘এসব নির্বাচনের গুরুত্ব কী? চলচ্চিত্রের কী উপকার হচ্ছে, এটাই আমার প্রশ্ন। চলচ্চিত্রের উন্নয়নে গঠনমূলক কোনো আলোচনার কথা তো শুনি না। এখন তো দেখি, কেউ কাউকে মানে না। শিল্পীরা দুই ভাগ। আমি এ–ও ভাবি, নেতা হওয়ার এত শখ কিসের। সবাই দেখছি নেতা হতে চায়।’
দুবারের চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি শাকিব খান বলেন, ‘সমিতি দিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প টিকে থাকবে না। শিল্পীকে বাঁচতে হলে কিংবা চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে টিকিয়ে রাখতে হলে ছবির কাজ নিয়ে ভাবতে হবে। মানসম্মত কাজ দিয়ে দর্শকের মন জয় করতে হবে।’
চিত্রনায়িকা চম্পা বলেন, ‘সবাইকে সিনেমার কাজে মনোযোগী হতে অনুরোধ করব। শিল্পী বাঁচে তাঁর শিল্পকর্ম দিয়ে। ছবিই যদি না হয়, এসব সমিতি দিয়ে কী হবে?’
শিল্পী সমিতির বর্তমান কমিটির সদস্য ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ। তিনি এবার আর নির্বাচন করছেন না। তিনিও মনে করছেন, সিনেমার কাজের চেয়ে সমিতি নিয়ে অনেক শিল্পী বেশি মেতে আছেন। তিনি বলেন, ‘শিল্পীদের প্রধান কাজ হচ্ছে, সিনেমার কাজ করা। সমিতির ব্যাপারটা সেকেন্ডারি। সিনেমা কমে গেছে, অনেক শিল্পীর কাজও কমে গেছে, তাই শিল্পীদের অনেকে সমিতি নিয়ে অনেক বেশি সময় দিতে পারছে। এটাকে ভালো বলব না খারাপ বলব, এটা নিয়ে আমিও সন্দিহান।’