সব শঙ্কা দূর করে এক টেবিলে মৌসুমী ও ওমর সানী

স্বামী ওমর সানীর সঙ্গে মৌসুমী
ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

জায়েদ খান বেশ কিছুদিন ধরে মৌসুমীকে ‘ডিস্টার্ব’ করছেন, এ কারণে তাঁর চিত্রনায়ক স্বামী একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে থাপ্পড় মারেন জায়েদকে। এর জেরে ওমর সানীকে পিস্তল দেখিয়ে মারার হুমকি দেন জায়েদ খান। এমন খবর প্রকাশের এক দিন পর মৌসুমীর অডিও বার্তা—‘জায়েদ খুব ভালো ছেলে এবং তিনি কখনো তাঁকে বিরক্ত করেননি’ প্রকাশিত হতেই ঘটনা ভিন্ন দিকে মোড় নেয়। ঢালিউডে গেল কয়েক দিন এসব ছিল আলোচনার বিষয়। অনেকে আবার এমনও বলেছেন, ভেঙে যেতে পারে মৌসুমী ও ওমর সানীর সংসার। আপাতত সে আশঙ্কার অবসান হয়েছে। মৌসুমী ও ওমর সানী যে ঝড় সামলে নিয়েছেন, তা বলে দিচ্ছে একটি স্থিরচিত্র। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ওমর সানীর ফেসবুকে পোস্ট করা ছবিটিতে দেখা যাচ্ছে, মৌসুমী ও ওমর সানী পরিবারের সবাইকে নিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছেন, যেমনটা কাছাকাছি সময়ে ছিল অকল্পনীয়।

তারকা দম্পতি মৌসুমী ও ওমর সানী সঙ্গে ছেলে ফারদীন ও মেয়ে ফাইজা

ওমর সানীর পোস্ট করা সেই স্থিরচিত্রে আরও দেখা যাচ্ছে, ছেলে ফারদীন ও তাঁর স্ত্রী আয়েশা সবাইকে আপ্যায়নে ব্যস্ত। মা–বাবাকে আগের মতো ঘরোয়া পরিবেশে ফিরে পেয়ে খুশি পরিবারের সবাই। পোস্ট করা ছবির ক্যাপশনে ওমর সানী লিখেছেন, ‘সবাই ভালো থাকবেন, দোয়া করবেন আমাদের জন্য।’
ওমর সানী ও জায়েদ ইস্যুর পর হঠাৎ সামনে আসে, দেড় মাস ধরে ওমর সানীর সঙ্গে মৌসুমীর দেখা হচ্ছিল না। এমনকি তাঁরা দুজন গুলশান-১-এর একটি ডুপ্লেক্স বাসায় থাকলেও কারও সঙ্গে ফোনেও কথা হচ্ছিল না! এসব খবর প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই তারকা দম্পতির ২৭ বছরের তিলে তিলে গড়া সংসার হয়তো ভেঙে যাবে।
জানা গেছে, এই কঠিন সময়ে মৌসুমী ও ওমর সানীর মধ্যকার পারিবারিক সমস্যা সমাধানে ভূমিকা রেখেছেন তাঁদের ২৬ বছর বয়সী ছেলে ফারদীন এহসান। মা–বাবার মধ্যকার ভুল–বোঝাবুঝি তাঁর মাধ্যমেই আপাতত সমাধান হয়েছে। জায়েদ খানের সঙ্গে দ্বন্দ্বের পর ওমর সানী নিজেও একাধিক সাক্ষাৎকারে ছেলেকে তাঁদের দুজনের অভিভাবক বলে উল্লেখ করেন। ছেলের মাধ্যমে সমস্যার সমাধান হওয়ায় মৌসুমী-ওমর সানী দুজনেই খুশি।

এ ছবিটি শেয়ার করেছেন ওমর সানী

মৌসুমী-ওমর সানীর ঘটনা আপাতদৃষ্টে সমাধান হয়েছে মনে হলেও এখনো অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। ওমর সানী-জায়েদ খান ইস্যু যখন আলোচনার তুঙ্গে, ঠিক তখনই মৌসুমীর একটি অডিও বার্তা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে তিনি পরিষ্কারভাবে বলেন, জায়েদ খুব ভালো ছেলে এবং তিনি কখনো তাঁকে বিরক্ত করেননি। অডিও বার্তাটি মৌসুমী কোনো সংবাদমাধ্যমে পাঠাননি। তাহলে এই অডিও কে ছড়িয়েছে, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট অনেকেই। কী উদ্দেশ্যে অডিওটি পাঠানো হয়েছে, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। বেশির ভাগের একটাই কথা, মৌসুমীকে দিয়ে অডিও রেকর্ডটি কেউ করিয়ে নিয়েছে। তবে অডিওটি কীভাবে এল, এ প্রশ্ন যখন ঘুরপাক খাচ্ছিল, তখন বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন ফারদীন। তিনি পরিষ্কারভাবে বলেছেন, ‘মা ওসব কথা রাগের মাথায় বলেছেন। আমার বাবা মিথ্যাচার করছে, এটা কিন্তু মা কখনোই বলেননি। যা বলেছে, রাগের মাথায় বলেছে।’
এদিকে শুরু থেকে ঘটনাক্রম অনুসরণ করলে দেখা যায়, ওমর সানী শুরুতে যা বলেছিলেন, এখন পর্যন্ত সেই কথাতেই অনড় আছেন। তিনি এখনো বলছেন, ‘জায়েদ খান মৌসুমীকে ডিস্টার্ব করেছে। অনেক বেশি ডিস্টার্ব করেছে। তাই আমি ওকে কষে থাপ্পড় মেরেছি। যদিও কারও (খল অভিনেতা ও প্রযোজক ডিপজলের ছেলের) বিয়ের অনুষ্ঠানে এভাবে থাপ্পড় মারাটা ঠিক হয়নি। তাই আমি ডিপজল ভাইয়ের কাছে ফোন করে সরি চেয়ে নিছি।’

২০১৭ সালে নকশার আয়োজনে বিয়ে উৎসবে বর–বধূবেশে ওমর সানী ও মৌসুমী

তবে ঘটনার দিন জায়েদ খান প্রথম আলোকে বলেছিলেন, কিছুই হয়নি। ১২ জুন শনিবার রাতে প্রথম আলোর প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা হয় জায়েদ খানের। তাঁর কাছে প্রশ্ন ছিল,‘ডিপজলের ছেলের বিয়েতে আপনার সঙ্গে ওমর সানীর গন্ডগোল হয়েছে। তিনি আপনাকে চড় মেরেছেন, এরপর আপনি তাঁকে মারার জন্য পিস্তল বের করেছেন, হঠাৎ কেন এমনটা ঘটল?’ জবাবে জায়েদ বলেন, ‘কে বলে এসব কথা? আমার তো মনেও নাই কী হয়েছে।’ ‘সবাই বলছে, আপনার সঙ্গে কথা-কাটাকাটি হয়েছে, তাই চড় মেরেছেন ওমর সানী?’ ‘একদমই এমন কিছু হয়নি, কে বলল এসব কথা। আন্দাজে...এটা কোনো কথা। এসব মিথ্যা কথা। আমি চড় খেয়েছি, পিস্তল বের করেছি—কে বলেছে বলেন, আমি তার সঙ্গে কথা বলব। আমি তাদের মুখে এটা শুনতে চাই।’
‘আপনি চড় খেয়েছেন?’ ‘না, না, না।’ ‘পিস্তল বের করেছিলেন?’ ‘তেমন কিছুই হয় নাই। এসব মিথ্যা কথা। শত্রুতামি করে কেউ এসব কথা বলতেছে।’
পরদিন অবশ্য জায়েদ খান ভিন্ন সুরে কথা বলেছেন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাঁর কাছে একটি প্রশ্ন ছিল, সেখানে কথা-কাটাকাটি কেন হয়েছিল? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘হ্যাঁ। আমাদের কথা-কাটাকাটি হয়েছিল। আমি নাকি মৌসুমী আপাকে অসম্মান করেছি। কিন্তু আমার কথা হচ্ছে, শুক্রবারের ঘটনা শনিবার রাতে বললেন কেন? কেন ওই দিন বলেননি।’