পান্থপথের স্টার সিনেপ্লেক্সে চলছিল ‘পোড়ামন টু’। ২০১৮ সালের কথা। জীবনে প্রথম সিনেমা দেখতে প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছিলেন জান্নাতুল ফেরদৌস ঐশী। সিনেমা শেষে শপিং মলের ভেতর আর হলের সামনে সিঁড়িতে দাঁড়িয়ে একা একা বেশ কটি ছবি তুলেছিলেন তিনি। ঠিক চার বছর পর সেই স্টার সিনেপ্লেক্সের সামনে আবারও ছবি তুললেন তিনি। এবার আর তিনি একা নন, পেছনে ছিলেন শ খানেক দর্শক। ছবি শেষে নায়িকা ঐশীর সঙ্গে ছবি তুলেছেন তাঁরা।
গত শুক্রবার মুক্তি পেল ঐশীর প্রথম সিনেমা ‘মিশন এক্সট্রিম’। তাঁর শৈশবের স্বপ্ন এখন বাস্তবে রূপ নিয়েছে। ঐশী বলেন, ‘ছোটবেলায় ভাবতাম, সিনেমার নায়িকা হব। জীবনে প্রথম সিনেপ্লেক্সে সিনেমা দেখতে বসে নায়ক-নায়িকাকে দেখে মনকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এভাবে পর্দায় নিজেকে দেখার স্বপ্ন কি কখনো পূরণ হবে? সেদিন “মিশন এক্সট্রিম” দেখে হলের বাইরে যখন দর্শকেরা আমাকে ঘিরে ধরে ছবি তুলছিলেন, আমার কাজ নিয়ে কথা বলছিলেন, সেই মুহূর্তে আমি যেন ভাষা হারিয়ে ফেলেছিলাম। বারবার মনে পড়ছিল প্রথম সিনেমা দেখার দিনটার কথা। মনে হচ্ছিল, আমি স্বপ্নের মধ্যে আছি। সবকিছুই আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগছিল।’
ছবি মুক্তির ১৫ দিন আগে থেকে প্রচারণার জন্য দিকে দিকে ছুটছিলেন ঐশী। ‘মিশন এক্সট্রিম’ টিমের সঙ্গে কখনো ক্রিকেট স্টেডিয়ামের গ্যালারি, কখনো টেলিভিশন চ্যানেল, কখনো পত্রিকা অফিসে। প্রচারণার মধ্যে প্রথম ছবি মুক্তি, নিজেকে প্রথম বড় পর্দায় দেখা, দর্শক কীভাবে গ্রহণ করবেন—এসব ভাবনায় ডুবে ছিলেন ঐশী। আবার ছবিটা মুক্তির পর প্রতিদিনই ছুটছেন কোনো না কোনো প্রেক্ষাগৃহে। দর্শকের পাশে বসে নিজের সিনেমা দেখেছেন, তাঁদের প্রতিক্রিয়া জেনেছেন। গত কয়েক দিন ঢাকার সব কটি মাল্টিপ্লেক্স, মধুমিতা, সাভার সেনানিবাস, চন্দ্রিমাসহ বেশ কটি হলে ঘুরেছেন তিনি। হলভর্তি দর্শক দেখে, তাঁদের মুখে নিজের অভিনয়ের প্রশংসা শুনে রোমাঞ্চিত এই নবাগত ঢালিউড অভিনেত্রী। ছবি মুক্তির পর ভয়, শঙ্কা অনেকটা কেটে গেছে তাঁর। ঐশী বলেন, ‘কোনো কোনো দৃশ্যে দর্শক যখন করতালি দিচ্ছেন, শিস দিচ্ছেন, অবাক হচ্ছি। নিজের কাছে শান্তি শান্তি লাগছে। সিনেমা দেখে বেরিয়ে আসছি যখন, দর্শকেরা ঘিরে ধরছেন, আমাদের সঙ্গে ছবি তুলছেন। এরপর তাঁদের কাছে যখন জানতে চাইছি—কেমন লেগেছে? উত্তরে সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে বলছেন, ভালো ভালো। তখন কী যে খুশি লাগে। এমনিতে চিৎকার, হইচই বিরক্ত লাগে, কিন্তু এই চিৎকার মধুর লাগছে।’
দর্শকদের প্রতিক্রিয়া কী? জানতে চাইলে ঐশী বলেন, ‘কেউ কেউ বলছেন, আমি ন্যাচারাল অভিনয় করতে পেরেছি। কেউ আবার বলছেন, সিনেমায় আমার উপস্থিতি আরেকটু বেশি থাকলে ভালো হতো।’ আর নিজের কাছে? এবার তিনি বলেন, ‘দেখার পর মনে হয়েছে আরও ভালো করতে পারতাম। বুঝতে পারছি, চেষ্টাটা আরও বাড়াতে হবে। তবে এই ছবির যখন শুটিং করি, তখন বয়স একটু কম ছিল। এখন ছবিটা করলে হয়তো আরও ভালো করতে পারতাম।’ রাজধানীর সীমান্ত সম্ভারে ছবি দেখতে এসেছিলেন রাজশাহীর সত্তরোর্ধ্ব এক দম্পতি। একসময় নিয়মিত সিনেমা দেখতেন তাঁরা। অনেক দিন পর আবার হলে এলেন ‘মিশন এক্সট্রিম’ দেখতে। প্রদর্শনী শেষে ঐশীর সঙ্গে কথা হয় তাঁদের। ঐশী বলেন, ‘সিনেমা দেখে তাঁদের ভালো লেগেছে। আমাদের জন্য দোয়া করেছেন তাঁরা। আমরা তাঁদের সঙ্গে ছবি তুলেছি, গল্প করেছি।’
দেশের প্রায় ৫০টি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘মিশন এক্সট্রিম’। এতে প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেছেন আরিফিন শুভ। ছবিতে ঐশী একজন টেলিভিশন প্রযোজক। আরও অভিনয় করেছেন সুমিত, তাসকিন রহমান, শ্যামল মাওলা, রাশেদ মামুন, সাদিয়া নাবিলা প্রমুখ।