রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিপুণ অভিযোগ করেন, জায়েদ খান নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন
রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিপুণ অভিযোগ করেন, জায়েদ খান নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন

শেষ হয়েও হয়নি শেষ

চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন যেন শেষ হয়েও হচ্ছে না। অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগে—এসব নিয়েই মুখর চলচ্চিত্রাঙ্গন। বাড়ছে উত্তেজনাও। এফডিসি থেকে প্রেসক্লাবে—চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক এবং শিল্পীদের মধ্যকার আলোচনা টেলিভিশন ও পত্রিকার মাধ্যমে মুহূর্তেই পৌঁছে যাচ্ছে দেশ–বিদেশের মানুষের কাছে। কাঞ্চন–নিপুণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী নিপুণ শনিবারই আভাস দেন, তিনি সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচনকেন্দ্রিক অনিয়ম তুলে ধরবেন। কথা অনুযায়ী, রোববার বিকেলে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে নিপুণ অভিযোগ করেন, জায়েদ খান নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করেছেন। টাকা দিয়ে ভোট কেনা এবং ভোটের দিন এফডিসিতে কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার পেছনে ভূমিকা তাঁরই বলে জানালেন নিপুণ। জায়েদ খানের সঙ্গে অপরিচিত একজন মানুষের কথোপকথনের স্ক্রিনশর্টও সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরেন।

নির্বাচনী ফলাফলে অসন্তোষ প্রকাশ করে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে আপিল করেন সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী চিত্রনায়িকা নিপুণ। আপিল করার বিষয়টি নিশ্চিত করে নিপুণ জানান, যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে, তাতেও কারচুপির আশঙ্কা করছেন তিনি। ভোটের হিসাবেও গরমিল পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন। পরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট দাবি করেন।

সংবাদ সম্মেলন করে সাধারণ সম্পাদক পদে পুনরায় ভোট দাবি করেন চিত্রনায়িকা নিপুণ

নিপুণের অভিযোগ অস্বীকার করে জায়েদ খান বলেন, এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। সুপারভাবে এডিট করা। ইতিমধ্যে আমি সাইবার ক্রাইমে অভিযোগ পাঠিয়েছি। প্রয়োজনে এসবের বিরুদ্ধে আমি মামলা করব। আমি আসলে খুবই হতবাক! এত সুন্দর নির্বাচন করার পরেও এটাকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হচ্ছে। জায়েদ খান আরও বলেন, ‘আমাকে নিয়ে যেসব ফেসবুকে ছড়ানো হচ্ছে, এটা তথ্যসন্ত্রাস। শুধু আমি জায়েদ খান বলেই এসব সহ্য করছি।’
সংবাদ সম্মেলনে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পদের জন্য আবার নির্বাচন চাওয়ার বিষয়টিতে একমত পোষণ করেছেন নবনির্বাচিত সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চন। তিনি বলেছেন, যেহেতু নিপুণ ভিকটিম। সে অভিযোগ করছে, তার পদে আবার নির্বাচন করা হোক। আমিও তার সঙ্গে একমত।’ এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন চিত্রনায়ক রিয়াজ, সাইমন সাদিক প্রমুখ। চলচ্চিত্র অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে ছিলেন আফজাল শরীফ, জেসমিন, আজাদ খানসহ অনেকে।

তৃতীয়বারের মতো চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন জায়েদ খান

ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদ অভিযোগ করে, ভোট শুরুর আগে থেকেই জায়েদ খান, প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন ও এফডিসির এমডি নজুহাত ইয়াসমীনের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক।

নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুন

এই সময় নির্বাচন কেন্দ্র করে আরও নানা অভিযোগ তুলে ধরেন ইলিয়াস কাঞ্চন ও নিপুণ পরিষদের সদস্যরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনারের উদ্দেশে নিপুণ বলেন, ‘আমি আপনার কাছে অভিযোগ করেছিলাম টাকা লেনদেন হচ্ছে, আপনি আমার কথা শোনেননি। নির্বাচনের সময় আপনি আমাদের একটি ব্যারিকেডের মধ্যে দাঁড় করিয়ে রেখেছিলেন। সেখানে শুধু আমরাই ছিলাম। একবারের জন্যও জায়েদ খান আসেননি। সব নিয়ম কি কাঞ্চন–নিপুণ পরিষদের জন্যই ছিল? আমাদের সংগঠনের নিয়ম, ভোটের মাঠে টাকা আদান–প্রদান করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আপনারা কি ব্যবস্থা নিয়েছেন? পীরজাদা হারুন, এফডিসির এমডি, জায়েদ খান একটা গ্যাং। এই চক্র আমাদের বিরুদ্ধে কাজ করেছে। এসবের তদন্ত চাই।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নিপুণ বলেন, ‘আমি চাই আবার নির্বাচন করতে। জায়েদ খানের সাহস থাকলে আবার নির্বাচনে আসুক। আমার পদটিতে কারচুপি করে আমাকে হারিয়ে দেওয়া হয়েছে।’ এ অবস্থায় একটি পদের জন্য ‘আবার নির্বাচন করার সুযোগ আছে কি না কিংবা গঠতন্ত্রে আছে কি না’ জানতে চাইলে নিপুণ বলেন, ‘হ্যাঁ, নির্বাচন কমিশনার চাইলে আবার সম্ভব। প্রয়োজনে আমি এ বিষয়ে ন্যায়বিচার চাইতে আদালতে যাব।’ জায়েদ খানও আত্মবিশ্বাসী।

গতকাল সন্ধ্যায় তিনি বলেন, যদি আবার শিল্পী সমিতির নির্বাচনে অংশ নেন, তখনো বিপুল ভোটে জিতবেন। যতবার এখানে নির্বাচন করব, ততবারই আমি জয়ী হব। এটা আমার আত্মবিশ্বাস। আমি এত আত্মবিশ্বাসী, কারণ আমি ভালো কর্ম করেছি।’

এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমীন

অন্যদিকে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠন শিল্পী সমিতির নির্বাচনে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুজহাত ইয়াসমীন এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা শহীদুল হারুনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতের অভিযোগ করেন। তাদেরই কারণেই নির্বাচনের দিন প্রযোজক, পরিচালকসহ চলচ্চিত্রের ১৭ সংগঠনের কেউ এফডিসির ভেতরে ঢুকতে পারেননি। বিষয়টি অপমানজনক দাবি করে এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালকের পদত্যাগ ও শিল্পী সমিতির প্রধান নির্বাচন কমিশনার পীরজাদা হারুনকে আজীবন অবাঞ্ছিত ঘোষণাসহ শনিবার কিছু কর্মসূচি দেন সংগঠনের নেতারা। ঘোষণা অনুযায়ী, রোববার সকালে চলচ্চিত্র–সংশ্লিষ্ট ১৮ সংগঠনের নেতারা এফডিসির বর্তমান পরিচালকের দ্রুত অপসারণ চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করেন ১৭ সংগঠনের নেতারা। তাঁরা এফডিসি এমডির কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছেন। সমাবেশে পরিচালক সমিতির মহাসচিব শাহীন সুমন বলেন, ‘এই এমডি আমাদের চলচ্চিত্রের সবাইকে অপমান করেছেন। বারবার তাঁর কাছে নানা ইস্যু নিয়ে গেলে তিনি ভালো ব্যবহার না করে ফিরিয়ে দিয়েছেন। তিনি আমাদের কোনো কথাই কোনো দিন শোনেননি। আমরা এমন এমডি চাই না। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আদেশ অমান্য করে তিনি আমাদের এফডিসিতে ঢুকতে দেননি। আমরা তাঁর অপসারণ চাই। তিনি এখানে থাকলে আমরা কোনো কাজ করব না। তিনি আমাদের গেটের বাইরে রেখেছেন, এবার আমরা তাঁকে গেটের বাইরে পাঠাব।’

এদিকে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন ঘিরে যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে, সাংবাদিক সম্মেলন করে তা নিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করেন এফডিসির এমডি নুজহাত ইয়াসমিন। গতকাল দুপুরে তিনি সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, ‘শিল্পী সমিতির নির্বাচন উপলক্ষে শিল্পী সমিতির ভোটারদের বাইরে অন্য ১৭টি সংগঠনের সদস্যদের প্রবেশে ওপর মহলের নির্দেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। করোনার কথা চিন্তা করে এমন সিদ্ধান্ত। যে ভুল-বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছে, আশা করছি শিগগিরই তার অবসান হবে।’
শিল্পী সমিতির নির্বাচন নিয়ে এসব ঘটনায় বিরক্ত ও বিব্রত চলচ্চিত্রাঙ্গনের একটি পক্ষ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চলচ্চিত্রের এই পক্ষ বলছে, এফডিসি থেকে যদি সব সমিতির অফিস তুলে দেওয়া যায়, দেখবেন এসব নিয়ে আর মাতামাতি হবে না। এফডিসিতে পরিচালক, প্রযোজক এবং শিল্পীরা আসবেন শুটিং করতে, এরপর শুটিং করে চলে যাবেন। যাঁরা কাজ করবেন, এফডিসি কর্তৃপক্ষ নির্দিষ্ট সময়ের জন্য তাঁদের পাসের ব্যবস্থা করবেন। কেপিআইভুক্ত একটা এলাকায় কীভাবে এত সমিতি কেমনে থাকে! আর এখানে নির্বাচনই বা হয় কেমনে? সব সমিতি যদি তুলে দেওয়া যায় এবং নির্বাচন বন্ধ করে দেওয়া হয়, এফডিসির পরিবেশ সুন্দর হবে। এই অঙ্গনের সত্যিকারের কাজের মানুষেরাও নির্বিঘ্নে কাজ করতে পারবেন।