শেষ করো না শুরুতে খেলা

২০১৮ সালের ১৩ এপ্রিল মুক্তি পায় চিত্রনায়িকা ববি অভিনীত বিজলী। এ উপলক্ষে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ছবির পরিচালক ইফতেখার চৌধুরী ববিকে নিয়েই বিজলীর সিকুয়েল নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছিলেন। একই পরিচালক ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে শাকিব খানকে নিয়ে লন্ডন লাভ সিনেমা তৈরির ঘোষণা দেন। সেই সময় পরিচালক শাকিব খানকে নিয়ে দুবাইয়ে এক সপ্তাহের জন্য লোকেশনও খুঁজতে গিয়েছিলেন। তারপর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেছে, ছবি দুটির শুটিং আজও শুরু হয়নি।

এ ব্যাপারে ইফতেখার চৌধুরী বলেন, বিজলী ২ আর হবে না। কারণ, প্রযোজক এ ছবি নিয়ে আর আগ্রহী নন। তবে লন্ডন লাভ নিয়ে এখনো আশাবাদী এই পরিচালক, বললেন ‘ছবিটি যুক্তরাজ্যে শুটিং হবে। মার্চে শুরু করতে চেয়েছিলাম। করোনার কারণে সম্ভব হয়নি। এখন আগস্ট-সেপ্টেম্বরে কাজ করার ইচ্ছা আছে। কিন্তু যদি আর ছয় মাস থেকে এক বছর লকডাউন চলে, তাহলে ছবির ভবিষ্যৎ কী হবে, জানি না। এই এক ছবি নিয়ে পড়ে থাকলে চলবে না। অন্য ছবির কাজ করতে হবে। আবার শাকিব খানেরও নতুন করে শিডিউল পাওয়া ঝামেলা আছে।’

ঢাকায় অনেক ছবিরই জাঁকালো মহরত হয়, শুটিংয়ের শিডিউলও ঘোষণা করা হয়। কিন্তু ওই পর্যন্তই, মহরাতেই শেষ হয়ে যায় অনেক ছবি, ঘোষণাতেই আটকে থাকে শুটিং শিডিউল। গত চার বছরে ঘোষিত এমন আরও দেড় ডজনের মতো ছবিরই আর কোনো অগ্রগতি নেই। ঘোষণা আর মহরতেই আটকে আছে ছবিগুলোর ভাগ্য। ছবিগুলো হলো পাসওয়ার্ড ২, প্রিয়তমা, হ্যাকার, ফাইটার, ধামাকা, ভিআইপি, ক্যাশ, যোগ্য সন্তান, ত্রিভুজ প্রেমের গল্প, ভাইজান ২, ঈদ মোবারক, প্যাড, পাইলট, ক্রেজি,তিতুমীর। শুটিং কবে শুরু হবে, আদৌ হবে কি না, সে বিষয়ে এসব ছবির প্রযোজক ও পরিচালকেরা চূড়ান্ত কিছুই বলতে পারেননি।

শাকিব খান

২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর এফডিসিতে পাসওয়ার্ড ২, প্রিয়তমা, বীর ও ফাইটার নামে চারটি ছবি নির্মাণের ঘোষণা দেয় এসকে ফিল্মস। এর মধ্যে বীর তৈরি হলেও গত দেড় বছরেও বাকি তিনটি ছবির শুটিং শুরু হয়নি। কথা ছিল, পাসওয়ার্ড ২ পরিচালনা করবেন মালেক আফসারী। অথচ পরিচালক নিজেই জানেন না ছবিটির কাজ কবে শুরু হবে, ‘ঘোষণার প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল। এখনো কাজটি শুরু করার ব্যাপারে আমার কাছে প্রযোজকের কোনো নির্দেশনা আসেনি। প্রযোজক যোগাযোগও করেননি। হতে পারে, করোনার কারণে ঝুঁকি নিচ্ছেন না প্রযোজক। তবে ওই সময় চারটি ছবির পরিচালকদের সাইনিং মানি দিয়েছিলেন প্রযোজক।’

‘পাসওয়ার্ড’ ছবিতে অভিনয় করেছেন বুবলী ও শাকিব খান।

গত দেড় বছরে নিরব, পূজা ও এভ্রিলকে নিয়ে ক্যাশ ছবিটিরও শুটিং শুরু হয়নি। ছবির পরিচালক সৈকত নাসির জানালেন, ছবিটির একজন শিল্পীকে নিয়ে জটিলতা তৈরির কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে চলতি বছরে যেকোনো সময় শুরু হতে পারে। তিনি বলেন, ‘ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হওয়া একজন আর্টিস্ট পরিবর্তন করতে চাই। সেটি নিয়েই ঝামেলা।’

গত বছরের ৩০ মে ত্রিভুজ প্রেমের গল্প ছবিটির নাম ঘোষণা করা হয়। দীপংকর দীপন, অনন্য মামুন, সৈকত নাসির—এই তিন পরিচালকের একত্রে কাজটি করার কথা। ওই বছরের জুনে শুটিং শুরুর কথা থাকলেও আজও শুরু হয়নি।

শান্ত খান ও দীঘি

২০২০ সালের আগস্টে শান্ত খান ও দীঘিকে জুটি করে যোগ্য সন্তান ও ধামাকা নামে দুটি ছবির ঘোষণা দেয় প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান শাপলা মিডিয়া। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে শুটিং শুরুর কথা থাকলেও এখনো কোনো খবর নেই। জানা গেছে, ছবি দুটি আর না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যোগ্য সন্তান ছবির পরিচালক ছিলেন কাজী হায়াৎ। তিনি বলেন, ‘যোগ্য সন্তান আর হচ্ছে না। প্রযোজক না করে দিয়েছেন।’ কেন? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মনে হয়েছে, ছবির ঘোষণা ছিল পরিচালক সমিতির নির্বাচনী প্রজেক্ট। নির্বাচন শেষ। তিনি আর এখন ছবিটি করবেন না।

তবে ছবির প্রযোজক সেলিম খান বলছেন ভিন্ন কথা, ‘পরিচালক সমিতির নির্বাচনে কাজী হায়াৎ সভাপতি প্রার্থী ছিলেন। পরাজিত হয়েছেন। শুনেছি তিনি বলেছেন, আমি নাকি তাঁকে হারিয়েছি। নির্বাচনের পর থেকে তিনি কাজটি করার ব্যাপারে যোগাযোগ করেননি। ম্যানেজারকে পাঠিয়েছিলাম। কথা বলেননি।’ এই প্রযোজকের কথা, ‘কাজী হায়াৎ গুণী নির্মাতা। কাজটি করতে চাইলে এখনই ব্যবস্থা করব।’

২০২০ সালের শেষ দিকে পরিচালক অনন্য মামুন ভাইজান ২, ঈদ মোবারক, প্যাড, পাইলট ও ক্রেজি নামে পাঁচটি ছবির ঘোষণা দেন। সেই সময় তিনি বলেছিলেন, চলতি বছরের শুরুর দিক থেকে পর্যায়ক্রমে ছবিগুলো নির্মাণ শুরু হবে। কিন্তু এর মধ্যে তিনি কসাই ও অমানুষ নামে দুটি ছবি নির্মাণ করেছেন। চলতি মাসের মাঝামাঝিতে সিকুয়েল কসাই ২-এর শুটিং শুরু করবেন। কিন্তু তাঁর আগের ঘোষণা দেওয়া পাঁচটি ছবির একটিরও শুটিং শুরু করেননি। অনন্য মামুন জানান, করোনার কারণে পরিকল্পনা কিছুটা এলোমেলো হয়ে গেছে। আগামী ঈদের পর থেকে কাজগুলো নিয়ে নতুন করে আবার পরিকল্পনা করবেন।

ব্লাড ছবির মহরতের দৃশ্য

গত বছরের মার্চে ব্লাড ছবির মহরত হয়। চিত্রনায়ক ইমন ও নায়িকা মাহিয়া মাহিকে নিয়ে ছবির শুটিং শুরু হওয়ার কথা ছিল এপ্রিলে। দেড় বছরেও শুটিং শুরু হয়নি। ছবির পরিচালক ওয়াজেদ আলী সুমন জানান, ছবিটি তৈরির সম্ভাবনা খুব কম। তিনি বলেন, ‘ছবির প্রযোজক বিদেশে চলে গেছেন। এখন আর ছবিটি তৈরির সুযোগ নেই। আবার নতুন প্রযোজক পাওয়া গেলে ছবিটি নিয়ে ভাবব।’