শুক্রবার থেকে সিনেমা হল খুলছে, চিন্তায় মালিকেরা

১৮ মার্চ থেকে সিনেমা হল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা জারি হয়। ছবি: কোলাজ
কোলাজ

অবশেষে দীর্ঘ সাত মাস পর ১৬ অক্টোবর শুক্রবার সিনেমা হল খোলার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এল। আজ বুধবার তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে হল খুলে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. সাইফুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ‘কোভিড-১৯ পরিস্থিতিতে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে সিনেমা হলের আসনসংখ্যা কমপক্ষে অর্ধেক খালি রাখার শর্তে এ অনুমতি দেওয়া হয়েছে।’
১৮ মার্চ থেকে সিনেমা হল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা জারি হয়। সেদিন থেকে দেশের সব সিনেমা হল বন্ধ ছিল।
বুধবার হল খুলে দেওয়ার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এলেও দ্বিধায় পড়েছেন দেশের সিনেমা হলের মালিকেরা। যদিও সেন্সর সনদ পাওয়া প্রায় ২২টি নতুন ছবি মুক্তির অপেক্ষায়। কিন্তু দর্শকখরার আশঙ্কায় নতুন ছবি এখনই মুক্তি দিতে চান না অনেক ছবির প্রযোজক। আবার নতুন ছবি না পেলে সিনেমা হল খুলতেও নারাজ বেশির ভাগ সিনেমা হলের মালিক। তাঁদের ভাষ্য, এমনিতেই করোনায় দীর্ঘদিন বন্ধ সিনেমা হল। এখন নতুন ছবি না পেলে সিনেমা হলে দর্শক ফিরিয়ে আনা কঠিন হবে।

১৮ মার্চ থেকে সিনেমা হল বন্ধের সরকারি নির্দেশনা জারি হয়

অন্যদিকে প্রযোজকেরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে বড় বাজেটের ছবি মুক্তি দিলে লোকসান হওয়ার আশঙ্কা আছে।
প্রযোজক পরিবেশক সমিতির তথ্য অনুযায়ী, ‘বিশ্ব সুন্দরী’, ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’, ‘বিদ্রোহী’, ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’, ‘নারী শক্তি’সহ প্রায় ২২টি ছবি সেন্সর সনদ নিয়ে এখন মুক্তির অপেক্ষায়।

তবে এসব সিনেমার বেশির ভাগ প্রযোজক এখন ছবি মুক্তি দিতে রাজি নন। এ ক্ষেত্রে পুরোনো ছবিই ভরসা। তবে পুরোনো ছবি দিয়ে হলেও হল খোলার ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব আছে কিছু হলের মালিকের। প্রদর্শক সমিতির সহসভাপতি মিয়া আলাউদ্দিন বলেন, ‘১৬ অক্টোবর হল খুলে দিলে নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের সাথী সিনেমা হলটি খুলে দেব। নতুন বা পুরোনো যে ছবিই পাই, হল খুলে দেব। লাভ-লোকসান যা–ই হোক, হল তো খুলতে হবে। কম-বেশি দর্শক আসবেন একে একে।’
শাকিব-বুবলী অভিনীত ‘বিদ্রোহী’ ছবিটি আগামী বছর মুক্তির কথা ভাবছেন প্রযোজক সেলিম খান। তিনি বলেন, ‘প্রায় তিন কোটি টাকা বাজেটের ছবি এটি। এই সময়ে মুক্তি দিলে লাভ তো উঠবেই না, অর্ধেক বিনিয়োগও ফেরত পাব না। আগামী মাসেও করোনা স্বাভাবিক হওয়ার লক্ষণ দেখছি না। আগামী বছর ঈদুল ফিতরে “বিদ্রোহী” মুক্তি দেওয়ার ইচ্ছা।’

দেশের প্রথম প্রেক্ষাগৃহগুলোর একটি পুরান ঢাকার জনসন রোডের আজাদ সিনেমা হল।

তবে এর আগে প্রযোজক সেলিম খান জানিয়েছেন, ১৬ অক্টোবর হল খুললে একই প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবি শাকিব-নুসরাত ফারিয়া অভিনীত ‘শাহেনশাহ’ নিয়ে আসবেন। এ ছাড়া সেন্সর সনদ পাওয়া বেশ কিছু ছবির প্রযোজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিনেমা হল খুললেও দর্শক কম হওয়ার আশঙ্কায় তাঁরা। তাই নতুন ছবি মুক্তি দেওয়ার ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি অনেকেই।

দীর্ঘদিন সিনেমা হল বন্ধ। এখন অনভ্যস্ত দর্শক কতজন সিনেমা হলে যাবেন, এ ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তা নেই হলের মালিকদের কাছে। তাই নতুন ছবি না পেলে পুরোনো ছবি দিয়ে হল চালাতে নারাজ বেশির ভাগ হলমালিক। মধুমিতা হলের কর্ণধার ইফতেখার উদ্দিন নওশাদ বলেন, ‘মার্চ মাসে হল বন্ধের ঠিক আগে প্রতিদিন আমাদের টিকিট বিক্রি হতো তিন থেকে চার হাজার টাকা। আমার হলের নিচে ভাড়া নেওয়া চা ও পানের দোকানদারেরও এর চেয়ে বেশি টাকা বিক্রি হয়। নতুন ছবি না পেলে পুরোনো ছবি চালিয়ে আর লোকসান বাড়াতে চাই না।

মধুমিতা সিনেমা হলের ভেতরের দৃশ্য।

’ ইফতেখার উদ্দিন জানান, সিনেমা হল বন্ধ থাকায় অনেক কর্মচারীকে ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এখন হল খুলতে হলে কর্মচারীদের আবার ফেরত আনতে হবে। কিন্তু দর্শক না এলে কর্মচারীদের বেতন দিতে পারবেন না ঠিকভাবে। নতুন করে লোকসান গুনতে হবে।যশোরের মনিহার হলের ব্যবস্থাপক তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, করোনার মধ্যে দর্শক আসা নিয়ে অনিশ্চয়তা আছে। এর মধ্যে পুরোনো সিনেমা চালালে ঝুঁকি বাড়বে। যদিও ১৯৪৩ সালে পুরোনো সিনেমা দিয়েই এই হলের যাত্রা শুরু হয়েছিল।

কিন্তু তখন সিনেমার দর্শক ছিলেন, ফলে সিনেমার ব্যবসাও ছিল। এখন পরিস্থিতি পুরোটাই উল্টো।ঢাকার বলাকা সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক শাহিন হোসেন বলেন, ‘১৬ অক্টোবর হল খোলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। আমাদের সিনেমা হলের দর্শক বেশির ভাগই স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। এসব প্রতিষ্ঠান এখনো খোলার সিদ্ধান্ত হয়নি। ফলে এখনই হল খোলার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া যায়নি। আমাদের হলে কর্মচারী বেশি। হল খুললেই খরচ। পুরোনো ছবি দিয়ে দর্শক টানা যাবে না।’

সিনেমা হলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে কার্ডবোর্ডে তৈরি সিনেমার চরিত্র সিটে বসিয়ে রাখা হয়েছে। যাতে কেউ সেখানে বসতে না পারে। অ্যারেনা সিনেলগ থিয়েটার, লস অ্যাঞ্জেলস, ক্যালিফোর্নিয়া। ছবি: রয়টার্স