‘শিল্পী হতে এসে অভিনয়টাই ঠিকমতো করতে পারিনি’, অভিনয়ের ৫০ বছর পূর্তিতে আলমগীরের আক্ষেপ

বাবা ছিলেন বাংলাদেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’–এর অন্যতম প্রযোজক। মা পুরোদস্তুর গৃহিণী। মা–বাবা কেউ চাননি অভিনয়ে আসুক তাঁদের সন্তান। কিন্তু ১৯৭২ সালের ২৪ জুন ‘আমার জন্মভূমি’ চলচ্চিত্রে শুটিংয়ের মধ্য দিয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান আলমগীর। এরপর কীভাবে যে অভিনয়ের ৫০ বছর পার করে দিয়েছেন, টেরই পাননি। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁর ব্যবসায়িক কার্যালয়ে বসে আলমগীর শোনালেন পাঁচ দশকের অভিনয়জীবনের গল্প।
মাত্র ২২ বছর বয়সে অভিনয় শুরু করেন আলমগীর
ছবি: সংগৃহীত

বয়স তখন মোটে ২২। ১৯৭২ সালের ২৪ জুন এফডিসিতে ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন আলমগীর। এর পরের পাঁচ দশকে বাংলাদেশের অভিনয়শিল্পীদের মধ্যে নয়বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আজীবন সম্মাননা পদক পাওয়ার রেকর্ড গড়েছেন তিনি। ১৯৮৫ সালে প্রথম ‘মা ও ছেলে’ চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২—টানা চার বছর শ্রেষ্ঠ অভিনেতা হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়ে নতুন রেকর্ড গড়েন তিনি, যা আজও ভাঙতে পারেননি কেউ। ৫০ বছরে তাঁর অভিনীত ছবির সংখ্যাও ২৩০–এর মতো।

এত কিছুর পরও ৫০ বছরের পূর্তিতে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে আক্ষেপ ঝরল আলমগীরের কণ্ঠে

এত কিছুর পরও ৫০ বছরের পূর্তির সময়ে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে বললেন, ‌‘একজন অভিনেতার জন্য সব সিনেমা, সব চরিত্রই চ্যালেঞ্জিং থাকে। কোনটায় কী পেয়েছি, কী পাইনি, সেদিকে যাচ্ছি না। যদি বলি, দিলীপ কুমারের “মোগল–ই–আজম” করতে চেয়েছি, দিস আর রং। “সিরাজউদ্দোলা”, যেটা আনু ভাই (আনোয়ার হোসেন) করেছিলেন, এটা যখন রিমেক করেন প্রদীপ দে, তিনি এসেছিলেন আমার কাছে, আমি করিনি। আমি মনে করি, আনোয়ার হোসেন যেটা করে গেছেন, সেটার রিপ্লেস সম্ভব নয়। আর সম্ভব নয় বলেই পরের ছবিটি চলেনি। অভিনেতার তৃপ্তির জায়গা সম্ভব নয়।’

‘একজন সত্যিকারের অভিনেতা থেকে নিজেকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা—কিছুই পারিনি। তাই যোগফল শূন্য’

এখানেই শেষ নয়। নিজের কাজ নিয়ে আরও আক্ষেপ ঝরল তাঁর কণ্ঠে, ‘৫০ বছরের অভিনয়ের অভিজ্ঞতা ও প্রাপ্তির দিকে যদি তাকাই, তাহলে যোগফল শূন্য। আমি যে কাজ করতে এসেছিলাম, অভিনয়; সেখানে নিজেকে শূন্য নম্বর দিলাম। কাজ হয়তো করেছি, কিন্তু ভালো কাজ করতে পারিনি বলে আজও মনে হয়। হয়তো অভিনয় দিয়ে সংসার চলছে, মানুষ আমাকে চিনেছে, ভালোবেসেছে, কিন্তু একজন সত্যিকারের অভিনেতা থেকে নিজেকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তোলা—কিছুই পারিনি। তাই যোগফল শূন্য। এ–ও মনে হয়েছে, যতটা দেওয়ার ছিল, করার ছিল, কিছুই হয়নি।’

জনপ্রিয়তা পেলেও মনের খোরাক মেটেনি আলমগীরের

জনপ্রিয়তা পেলেও তাঁর মনের খোরাক মেটেনি উল্লেখ করে আলমগীর আরও বলেন, ‘আমার কাছে শিল্পী শব্দটার অর্থ অনেক বড়। আমি অভিনয় করতে এসেছিলাম, শিল্পী হতে চেয়েছিলাম। শিল্পী হতে এসে অভিনয়টাই ঠিকমতো করতে পারিনি। যেটা করেছি, পাবলিক গ্রহণ করেছে, কিন্তু আমার মনের খোরাক হয়নি। আরও বেটার করা উচিত ছিল। বড় ডিরেক্টররা ছিল বলেই হয়তো আমি পার পেয়ে গেছি। অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি অনেক, সেগুলো আমার কৃতিত্বের চেয়ে পরিচালকের কৃতিত্ব অনেক বেশি।’