স্ত্রী চিত্রনায়িকা মৌসুমীর সঙ্গে খারাপ আচরণের জেরে ওমর সানী চড় মেরে বসেন জায়েদ খানকে। খল অভিনেতা ও চলচ্চিত্র প্রযোজক ডিপজলের ছেলের বিয়েতে শুক্রবার রাতে এই ঘটনা ঘটেছে বলে নিশ্চিত করেছেন চলচ্চিত্রের একাধিক অভিনয়শিল্পী। চড় খাওয়ার পর জায়েদ পিস্তল বের করে ওমর সানীকে মারার হুমকি দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। গতকাল শনিবার রাতে প্রথম আলো অনলাইনে সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর চলচ্চিত্র অঙ্গনের অনেকেই বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।
এদিকে পিস্তল বের করে মারার হুমকির ঘটনায় জায়েদ খানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে গিয়েছেন ওমর সানী। সেখানে বসে তিনি অভিযোগ লেখেন। অপেক্ষায় সভাপতি ইলিয়াস কাঞ্চনের জন্য। তাঁর হাতেই লিখিত অভিযোগ দেবেন সানী। এরপর আজ রোববার দিনের যেকোনো সময় চলচ্চিত্রের জ্যেষ্ঠ অভিনয়শিল্পী–পরিচালক ও প্রযোজকদের পরামর্শ নিয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরিও করবেন বলে জানান ওমর সানী। দুপুরে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে এসব পদক্ষেপের কথা জানান ওমর সানী। তিনি বলেন, ‘আমি সব সময় যেকোনো সংকটে চলচ্চিত্রের মুরব্বিদের পরামর্শ নিই। এবারও তা–ই করতে চাই। তাই সবাইকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় সব ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’
এদিকে আজ রোববার দুপুরে নিজের ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে ওমর সানী লিখেছেন, ‘আমি ততক্ষণ নীরব থাকি, যতক্ষণ না পর্যন্ত আমার আত্মসম্মানে আঘাত না লাগে।’ জায়েদ খানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে ওমর সানী বলেন, জায়েদ খান শুধু মৌসুমীকে নয়, আরও অনেক মেয়েকেই বিরক্ত করেন। জায়েদের কারণে অনেক মেয়ের সংসারও ভেঙেছে।
মুঠোফোনে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওমর সানী বলেন, ‘আমি জায়েদ খানকে চড় মেরেছি। কিন্তু কী কারণে মেরেছি, সেটাও তো জানতে হবে সবাইকে। আর চড় মারার পর আমাকে মারতে সে পিস্তল বের করবে! কত্ত বড় সাহস! অনেক দিন ধরে জায়েদের বেয়াদবি লক্ষ করছিলাম। তারপর বিয়েতে দেখার পর, কাছে গেছি। এরপর কষে থাপ্পড় মেরেছি। থাপ্পড় মারার পর সে পিস্তল বের করে বলে, “গুলি করে দেব কিন্তু।”’ বলেন ওমর সানী।
ওমর সানী আরও বলেন, ‘ইন্ডাস্ট্রির ক্ষতি, মানুষের ক্ষতি করতে করতে জায়েদের সাহস বেড়ে গেছে। কেউ কথা বলছিলেন না। চড় দিয়ে আমি না হয় শুরু করেছি। জায়েদ খান চরম বেয়াদবি করছিল। অনেক দিন ধরে জায়েদের বেয়াদবি লক্ষ করছিলাম। তারপর বিয়েতে দেখার পর, কাছে গেছি। এরপর কষে থাপ্পড় মেরেছি। থাপ্পড় মারার পর সে পিস্তল বের করে বলে, “গুলি করে দেব কিন্তু।” আমি কইছি (সরি ফর মাই ল্যাঙ্গুয়েজ), পিস্তল তোর...(প্রকাশের অযোগ্য)। ...পোলা।’
ওমর সানী আরও বলেন, ‘জায়েদ খান তো সব সময় পিস্তল নিয়ে ঘোরে। আমার কথা হইছে, ইন্ডাস্ট্রিতে ওর অত্যাচার সহ্য করতে করতে অনেকেই বিরক্ত। কেউ হয়তো মুখ ফুটে বলেন না মানসম্মান হারানোর ভয়ে। আমি ভাবলাম, আর দেরি নয়, এখনই শুরু করতে হবে। তাই চড়টা দিয়ে শুরু করলাম। আমি চড় মেরেই বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে বের হয়ে যাই।’
জায়েদ খানের বিরুদ্ধে আপনি যে এত অভিযোগ করছেন এসবের প্রমাণ আছে কি?—জানতে চাইলে ওমর সানী বলেন, ‘অনেক প্রমাণ আছে। ওর (জায়েদ খান) নামে বহু অভিযোগ আছে। সে অনেক সংসার ধ্বংস করেছে। পিস্তল বের করে চলাচল করা, মেয়েদের পেছনে লেগে থাকা এমন বহু অভিযোগ আছে। এটা কি নতুন কিছু তার জন্য? জায়েদ খানের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বয়সও তো অনেক। ঢালিউডের একমাত্র মানুষ, যার আজ পর্যন্ত বলার মতো সিনেমা নেই। বিতর্কিত সব কর্মকাণ্ডের কারণেই তো সব সময় সে আলোচনায় থাকে।’
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী এক চলচ্চিত্রশিল্পী নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে শনিবার রাতে বলেন, ‘যত দূর জানতে পেরেছি, মৌসুমীর সঙ্গে নাকি জায়েদ খান খারাপ আচরণ করেছে। এটা নিয়ে জায়েদের ওপর ওমর সানী ভীষণ বিরক্ত ছিলেন। খারাপ ব্যবহার করার কারণে ডিপজলের কাছে বিচারও দিয়েছিলেন বলে শুনেছি। ডিপজল বলেছিলেন, “থাক বাদ দাও। মারামারি করার দরকার নাই। সামনে জায়েদ আর মৌসুমীকে কোনো ডিস্টার্ব করবে না। মৌসুমীর কাছেও যাবে না।”’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই প্রত্যক্ষদর্শী এ-ও বলেন, ‘ডিপজলের এমন সমাধান ওমর সানী মেনে নিতে পারেননি। কয়েক দিন ধরে তাই জায়েদ খানকে খুঁজছিলেন। ধরেই নিয়েছিলেন, ডিপজলের ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানে জায়েদকে পাওয়া যাবেই। অনুষ্ঠানে ওমর সানী ঢুকেই সরাসরি জায়েদ খানকে চড় মারেন। তখন ডিপজলসহ চলচ্চিত্রের কয়েক অভিনয়শিল্পী সোফায় বসা ছিলেন।’