অবশেষে শর্তসাপেক্ষে জামিন পেয়েছেন উপস্থাপক ও নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাস। ২০১৭ সালে করা একটি প্রতারণার মামলায় উপস্থাপক ও নির্মাতা দেবাশীষ বিশ্বাসকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। আজ বুধবার ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান নূর তাঁর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
দুপুরের পর আসামিপক্ষের আইনজীবী বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আবেদন করলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বিষয়টি আমলে নিয়ে পরবর্তী ধার্য দিবস পর্যন্ত শর্তসাপেক্ষে দেবাশীষকে জামিন দেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, আসামি দেবাশীষ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি থাকায় বুধবার আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আবেদন করেন তিনি। আদালত তাঁর আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য আদালতে আবেদন করেন।
বাদীপক্ষের আইনজীবী খন্দকার মুহিবুল হাসান প্রথম আলোকে জানান, আসামিপক্ষ থেকে আবেদন করলে আদালত বিষয়টি আমলে নেন এবং মুচলেকায় তাঁকে জামিন দেন। এ সময় তাঁকে আদালত আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরের মধ্যে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেন। আসামি সে শর্ত পূরণের অঙ্গীকার করলে আদালত জামিন মঞ্জুর করেন। বাদীর পক্ষে আমি অনাপত্তি জানাই। যোগাযোগ করা হলে, বুধবার বেলা ৩টা ২৪ মিনিটে দেবাশীষ বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তেমন কিছু না। একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল। ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। আমি বাসায় যাচ্ছি।’
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, সিএনটিভি ইউটিউব চ্যানেলের মালিক লিটন সরকার ইমন নামের এক ব্যক্তি দেবাশীষ বিশ্বাসের মা গায়ত্রী বিশ্বাস প্রযোজিত চারটি বাংলা চলচ্চিত্র—‘মায়ের মর্যাদা’, ‘শুভ বিবাহ’, ‘অপেক্ষা’ ও ‘অজান্তে’ ইউটিউব চ্যানেলে প্রচার করতে ৬০ বছরের জন্য ১ লাখ ৪০ হাজার টাকায় ২০১৯ সালের ৩০ জুলাই বাণিজ্যিক শর্তে কিনে নেন। তিনি ছবিগুলো ইউটিউব চ্যানেলে আপলোড করলে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ চ্যানেল বন্ধ করে দেয়।
পরে তিনি খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, এই চার চলচ্চিত্র আসামিরা তার আগেই ২০১৭ সালে অন্য দুজন ব্যক্তির কাছে বিক্রি করেন, যার কারণে ইউটিউব চ্যানেল কর্তৃপক্ষ ছবিগুলো আপলোড করার পর লিটন সরকার ইমনের চ্যানেল বন্ধ করে দেয়।
এরপরই ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর সিএমএম আদালতে লিটন সরকার ইমন বাদী হয়ে দেবাশীষ বিশ্বাস ও তাঁর মায়ের নামে প্রতারণার মামলা করেন। পরে আদালত এ বিষয়ে মিরপুর রূপনগর থানাকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত কর্মকর্তা ও রূপনগর থানার পরিদর্শক (অপারেশন) মো. মোকাম্মেল হোসেন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে প্রতিবেদন দাখিল করেন।
আদালত প্রতিবেদনটি আমলে নিয়ে ২০১৯ সালের ৫ ডিসেম্বর আসামিদের আদালতে হাজির হতে সমন জারি করেন। আসামিরা হাজির না হওয়ায় চলতি বছর ২১ অক্টোবর বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন।
দেবাশীষ বিশ্বাস চলচ্চিত্র পরিচালক প্রয়াত দিলীপ বিশ্বাসের ছেলে। একটা সময় ‘পথের প্যাঁচালী’ নামের একটি অনুষ্ঠান উপস্থাপনার মাধ্যমে জনপ্রিয়তা অর্জন করেন তিনি। ২০০১ সালে তাঁর পরিচালিত প্রথম ছবি ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ’ মুক্তি পায়।
ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে সফলতা লাভ করে। এরপর পরিচালকের ‘শুভ বিবাহ’, ‘ভালোবাসা জিন্দাবাদ’, ‘চল পালাই’ ছবিগুলো মুক্তি পায়। দেবাশীষ ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ-২’-এর কাজ শেষ করছেন। এতে জুটি হিসেবে রয়েছেন নায়ক বাপ্পি চৌধুরী ও চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস। ছবিটি মুক্তির অপেক্ষায়।