সোহেল রানা স্মরণ করলেন কবরীকে
সোহেল রানা স্মরণ করলেন কবরীকে

শত বছরে কবরী একটাই জন্মায়: সোহেল রানা

দেখতে দেখতে বাংলাদেশি চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়েখ্যাত অভিনয়শিল্পী কবরীর মৃত্যুর এক বছর হয়ে গেল। গত বছরের এই দিনে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। করোনায় তাঁকে শেষ রক্ষা দেয়নি। মৃত্যুর আগে ‘এই তুমি সেই তুমি’ নামের একটি চলচ্চিত্র পরিচালনা করছিলেন। এই চলচ্চিত্রে তিনি অভিনয়ও করছিলেন। কিন্তু পুরো কাজটি শেষ করে যেতে পারেননি। কবরীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা কথা বলেছি তাঁর অঙ্গনের কয়েকজন সহকর্মী সোহেল রানার সঙ্গে। জানালেন অভিনয়শিল্পী ও মানুষ হিসেবে কেমন ছিলেন কবরী।

কবরীর দুটি সত্তা। মানুষ ও শিল্পী সত্তা। দুটোই ভিন্ন ভিন্ন। শিল্পী হিসেবে বাংলাদেশের মানুষেরাই তাঁকে মিষ্টি মেয়ে নাম দিয়েছে, কোনো সাংবাদিক নয়। আমাকে যেমন আমার সাংবাদিক বন্ধু ড্যাশিং হিরো উপাধি দিয়েছে, অন্যদেরও তেমনটা দিয়েছে তবে কবরীকে এ দেশের মানুষই তা দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ সেই নামটা দিয়েছিল, সেই নামটা হচ্ছে মিষ্টি মেয়ে। সাধারণ লোকের দেওয়া নামটাই বোধ হয় একজন শিল্পীর বড় প্রাপ্য। একজন শিল্পী হিসেবে তাঁর বড় সার্থকতা। এরপর পর শিল্পী হিসেবে তাঁকে নিয়ে আর দ্বিতীয় কথা বলার নেই। সি ওয়াজ জাস্ট আন প্যারালাল। ওই মিষ্টি মুখ বা ওই মিষ্টি হাসি বা ওই মিষ্টি অভিনয়—বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে আসেনি এর আগে, এক কবরী ছাড়া। আগামী ৫০ বছরে আসবে বলেও আমার ধারণা নেই। আমি বিশ্বাস করি, শত বছরে কবরী একটাই জন্মায়। সি ওয়াজ সামথিং মোররররর...।

কবরী ও সোহেল রানা

মানুষ হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে তাঁর সঙ্গে সুন্দর সম্পর্ক ছিল। অত্যন্ত আড্ডাবাজ ছিলেন। সবাইকে নিয়ে হইহুল্লোড করে থাকতে পছন্দ করতেন। তবে এই আড্ডাটা আবার সীমিত ছিল, সবার সঙ্গে মিশতেন না। প্রখর ব্যক্তিত্ব ছিল। যাদের সঙ্গে তাঁর আত্মিক সম্পর্ক ছিল, শুধু তাদের সঙ্গেই আড্ডা দিতেন। ভীষণ চুজি ছিলেন। তাঁর আড্ডা সঙ্গী হওয়াটা যে কারও জন্য সৌভাগ্যের ব্যাপার মনে করছি। কবরী উচ্চশিক্ষিত ছিলেন না। কিন্তু জীবনের পরবর্তী পর্যায়ে নিজেকে যেভাবে ডেভেলপ করেছেন, স্বশিক্ষিত করে গড়ে তুলেছেন—একটা মানুষ নিজেকে কি অসাধারণভাবে যে বদলে নিতে পারেন, তা কবরীকে দেখলেই বোঝা যায়। আমরা যে কথায় কথায় বলি স্বশিক্ষিত হতে পারা যায়, এটা পারা যায় আমরা রবীন্দ্রনাথকে দেখেছি, নজরুলকে দেখেছি—তাঁরা যা লিখেছেন, আমরা এখনো পড়ে যাই।

কবরী ও সোহেল রানা

আর কবরী স্বশিক্ষিত হয়ে রাজনৈতিক মঞ্চে যেভাবে বক্তৃতা দিতেন, আমি তো আশ্চর্য হয়ে তাকিয়ে থাকতাম, হাউ সি কুড ট্রান্সপার হার আ রিয়েল পলিটিশিয়ান ফ্রম জাস্ট অ্যান অ্যাক্রেটস! এটা আমার কাছে স্বপ্নের মতো লাগত। বিস্ময়। রাজনীতিতে ৬০ বছরের অভিজ্ঞতা হলেও আমি হয়তো ছোট একজন রাজনৈতিক কর্মী। চলচ্চিত্রে রাজনীতিতে ৬০ বছরের অভিজ্ঞতা হয়তো কম মানুষেরই আছে। সেই আমার সঙ্গেও যখন রাজনীতি নিয়ে কথা হতো বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকতাম। রাজনীতি, সমাজ, রাষ্ট্র, দেশ, অর্থনীতি, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধু এসব নিয়ে কী অসাধারণ বলতেন। আমার তো মনে হতো, অনেক পিএইচডি ডিগ্রিধারীরাও কবরীর মতো বলতে পারবেন না। কল্পনাই করা যায় না। সো, কবরী ইজ জাস্ট আনপ্যারারাল।