বাংলা চলচ্চিত্রের রাজ রাজ্জাকের সঙ্গে প্রায় ৩৫টি সিনেমায় অভিনয় করেছেন অঞ্জনা রহমান। দীর্ঘ এই সময়ে একসঙ্গে অভিনয় করতে গিয়ে জমেছে অনেক স্মৃতি। আজ রাজ্জাকের ৮০তম জন্মদিন। প্রয়াত এই নায়কের স্মৃতিচারণা করলেন অঞ্জনা।
ক্যারিয়ারে এমন ভয়ানক অবস্থায় খুবই কম পড়েছেন অঞ্জনা। বিশেষ সেই ঘটনার কথা এখনো মনে পড়লে তাঁর শরীর শিরশির করে ওঠে! ঘটনাটি ছিল ‘রাজার রাজা’ সিনেমার শুটিংয়ের একটি দৃশ্যে। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন আলমগীর কুমকুম। পাহাড়ের ওপর একটি মারপিটের দৃশ্য।
সেই প্রসঙ্গে অঞ্জনা ফেসবুকে লিখেছেন, ‘আমাকে ও রাজ্জাক ভাইকে একসঙ্গে বাঁধা হবে। তারপর পাহাড় থেকে নিচে ছুড়ে ফেলা হবে। সব ঠিক। নিচে যথেষ্ট প্রোটেকশন দেওয়া ছিল। যেন আমরা কোনো ব্যথা না পাই। কিন্তু আমাদের হাতের রশিটা যেমন করে বাঁধার কথা ছিল, সেটা ততটা শক্ত করে বাঁধা হয়নি। নিচে লাফ দিলাম, রশি ছুটে গেল। আমরা দুজন দুই দিকে পড়লাম। আমি তো নিচে পড়ে অজ্ঞান হয়ে গেছি। পরে শুনেছি, রাজ্জাক ভাই নিচে পড়ে আঘাত পাওয়ার পরও শুধু বলছিলেন, “কুমকুম ভাই, অঞ্জনা কোথায়”, পাগলের মতো করছিলেন। রাজ্জাক ভাইও পায়ে মারাত্মক আঘাত পেয়েছিলেন। আমাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হলো। তিনি নিজে এত ভয়ানক দুর্ঘটনার পড়েও আমার কী অবস্থা, চিন্তা করেছিলেন। পরে “রাজার রাজা” ছবিটি সুপার বাম্পার ব্যবসা করে। তার পর থেকে রাজ্জাক ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হলেই ঘটনাটা বলতাম। আমি কোনো দিন আপনার ঋণ শোধ করতে পারব না, রাজ্জাক ভাই। আজ আমি অঞ্জনা হয়েছি, তার অন্যতম অবদান আপনার। সারাটি জীবন আমাদের মনের মণিকোঠায় রয়ে যাবেন।’
নায়ক রাজ্জাকের সঙ্গে প্রথম একক নায়িকা হিসেবে আজিজুর রহমান পরিচালিত ‘অশিক্ষিত’ সিনেমায় জুটি বাঁধেন অঞ্জনা। সিনেমাটি ১৯৭৮ সালে মুক্তি পায়। অঞ্জনা তাঁর ফেসবুকে লিখেছেন, ‘“ঢাকা শহর আইসা আমার আশা ফুরাইছে” গানটার সময় রাজ্জাক ভাই আমাকে এতটা সহযোগিতা করেছেন, যা কোনো দিন ভোলার মতো নয়।’ সেই সময় রাজ্জাক ছিলেন দেশের জনপ্রিয় অভিনেতা। তখন অঞ্জনা নিজেকে প্রমাণ করছেন। তিনিও ছিলেন গুণী অভিনেত্রী।
‘বিধাতা’ সিনেমার শুটিংয়ের অপ্রত্যাশিত ঘটনা এখনো প্রায়ই ভাবেন এই অভিনেত্রী। সিনেমাটির পরিচালক ছিলেন শেখ নজরুল ইসলাম। সিনেমাটির একটি গানের দৃশ্যের শুটিং করতে রাজ্জাকের সঙ্গে স্পিডবোটে ওঠেন অঞ্জনা। স্পিডবোটে চলছিল শুটিং। অঞ্জনা বলেন, ‘কাপ্তাই লেকে স্পিডবোটে গানের শুটিং করতে গিয়ে একটি মুহূর্তে আমি পড়ে যাচ্ছিলাম। ক্যামেরা চলছিল। তখন রাজ্জাক ভাই এমন শক্ত করে আমাকে ধরে রাখেন, গানটি দেখে কেউ মনেই করবেন না যে আমি অনেক ভয় পেয়েছিলাম।’