১৯৯৯ সালের গ্রীষ্মে ঢালিউডে পা রেখেছিলেন এক সম্ভাবনাময় তরুণ। ২১ বছর পর যিনি শাসন করছেন সেই চিত্রজগৎ। এত লম্বা সময় খুব কম নায়কের হাতেই ঢাকার চলচ্চিত্রশিল্পের শাসনক্ষমতা ছিল। প্রতিবছরই কোনো না কোনো সুপারহিট ছবিতে তিনি পোক্ত করেছেন তাঁর অবস্থান। তাঁর কিছু ছবি ব্যবসায় নজির গড়েছে, কিছু ছবি দর্শকের মন জয় করেছে, আর কিছু ছবি পেয়েছে সমালোচকদের প্রশংসা। তিনি শাকিব খান। আজ তাঁর জন্মদিন। এ উপলক্ষে আমরা পাঠকদের জানাব তাঁর অভিনীত ১০টি সিনেমার কথা। করোনার দিনগুলোতে দেশি ছবি দেখে সময় কাটানোর চিন্তা করছেন যাঁরা, তাঁদের জন্য রইল আমাদের এই তালিকা:
আমার স্বপ্ন তুমি (২০০৫)
শাকিবের ক্যারিয়ারে এক টার্নিং পয়েন্ট এ ছবিটি। এতে শাকিব খানের অভিনয়ে তাক লেগে যায় ইন্ডাস্ট্রি। তিনি তাঁর ক্যারিয়ারে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হন। ‘আমার স্বপ্ন তুমি’ গ্রামের এক অবুঝ তরুণী শাবনূরের গল্প। যাঁকে জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসেন মাস্তান স্বভাবের শাকিব। কিন্তু শহর থেকে এসে ধনী পুত্র ফেরদৌস তাঁকে বিয়ে করে উড়াল দেন। পিছু ধাওয়া করে বঞ্চিত প্রেমিকও। কীভাবে সেই ত্রিভুজ প্রেমের পরিণতি ঘটে, তা জানতে দেখতে হবে ছবিটি। শ্রুতিমধুর গানের ছবিটি পরিচালনা করেছেন হাসিবুল ইসলাম।
কোটি টাকার কাবিন (২০০৬)
এ ছবি থেকে বদলে যায় শাকিব খানের সংগ্রামী জীবন। ছবিটির ব্যাপক সাফল্য ইন্ডাস্ট্রিতে তাঁর মজবুত আসন গড়ে দেয়। প্রথমবারের মতো অপু বিশ্বাসের সঙ্গে জুটি বাঁধেন শাকিব। দুই শত্রু পরিবারের বিরোধের মধ্যে ভুল করে প্রেম করে বসেন শাকিব ও অপু। তাঁদের প্রেমকে শত্রুতার গুটি হিসেবে ব্যবহার করতে চান দুই পরিবারের প্রধান রাজ্জাক ও ফারুক। কীভাবে সেই শত্রুতা বন্ধুত্বে রূপ নেয়, তাই নিয়ে ছবির গল্প। পরিচালনা করেছেন এফ আই মানিক।
চাচ্চু (২০০৬)
শাকিবের ক্যারিয়ারে অন্যতম জনপ্রিয় ছবি ‘চাচ্চু’। গল্পে শাকিব খানের ভূমিকা এক দৃঢ়প্রতিজ্ঞ পুলিশ অফিসারের। বড় অফিসারের মেয়ে অপু তাঁর প্রেমে পড়েন। কিন্তু শাকিবের মিশন দুর্ধর্ষ অপরাধী ডিপজলের কবল থেকে ভাতিজি দিঘীকে উদ্ধার করা। আলীরাজের ভুলের কারণে কি মাশুল গুনবে নিষ্পাপ দিঘী? নাকি ভাইয়ের মেয়েকে ঠিক ঠিক রক্ষা করতে পারবেন শাকিব? এমন গল্পের ছবিটি পরিচালনা করেছেন এফ আই মানিক।
প্রিয়া আমার প্রিয়া (২০০৮)
শাকিবের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে ব্যবসাসফল ছবি এটি। মাসের পর মাস প্রেক্ষাগৃহ থেকে নামেনি ‘প্রিয়া আমার প্রিয়া’। শাকিব এক হাবিলদারের ছেলে। কিন্তু প্রেমে পড়েন এসপি মিশা সওদাগরের বোন সাহারার। মিশার সঙ্গে দ্বন্দ্ব লেগে যায় শাকিবের। শাকিব বেপরোয়া। বন্ধুদের সাহায্যে সাহারাকে পেতে মরণখেলায় মেতে ওঠেন তিনি। শেষ পর্যন্ত কি দুজনের মিলন হয়? ছবিটি পরিচালনা করেছেন বদিউল আলম খোকন।
মনে প্রাণে আছো তুমি (২০০৮)
শাকিব-অপু একসঙ্গে অর্ধশতাধিক ছবিতে অভিনয় করলেও সব ছবিতে তাঁদের রসায়ন জমেনি। যে অল্প কিছু ছবিতে তাঁদের অভিনয় দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছে, সেগুলোর মধ্যে একটি ‘মনে প্রাণে আছো তুমি’। বড় ব্যবসায়ী আহমেদ শরীফের মেয়ে অপু নিঃসঙ্গ জীবনে কীভাবে নিম্নবিত্ত রাজ্জাকের ছেলে শাকিবের আগমন ঘটে , আর তারপর শ্রেণির ব্যবধান ঘুচিয়ে কীভাবে তাঁদের মিলন ঘটে, তাই নিয়ে ছবির গল্প। শ্রুতিমধুর গানের ছবিটি পরিচালনা করেছেন জাকির হোসেন রাজু।
ভালোবাসলেই ঘর বাঁধা যায় না (২০১০)
এ ছবিতে প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান শাকিব খান। এ ছবিতে কাজী হায়াতের ছেলে শাকিব। তাঁদের বাসায় মেয়ের মতো বড় হয়েছেন আশ্রিতা অপু। শাকিবকে ভালোবাসেন রুমানা। উপযুক্ত হয়েও কেন রুমানা ঘর বাঁধতে পারেন না শাকিবের সঙ্গে? কেন অপুর মতো গরিবকে কাছে টেনে নিতে হয় শাকিবের, কোন সে রহস্য, তা জানতে হলে দেখতে হবে ছবিটি। পরিচালনা করেছেন জাকির হোসেন রাজু।
খোদার পরে মা (২০১২)
এ ছবিতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন শাকিব খান। আর কেন তাঁকে এই পুরস্কার দেওয়া হলো, তা জানতে হলে দেখা প্রয়োজন ছবিটি। মা ববিতা থেকে ছোটবেলায় আলাদা হয়ে যায় কিশোর শাকিব। এক অপরাধের দায়ে সংশোধনাগারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় তাকে। সেখান থেকে ফিরে মাকে খুঁজে পায় না শাকিব। যখন সে মায়ের খোঁজ পায়, তখন তার বড় বিপদ। খোদার পরে যে মায়ের স্থান, তাকে কি রক্ষা করতে পারে শাকিব? প্রশ্নের উত্তর আছে শাকিব-সাহারা জুটির ছবিটিতে। পরিচালনা করেছেন শাহিন সুমন।
হিরো দ্য সুপারস্টার (২০১৪)
এটি শাকিব খানের প্রথম প্রযোজনা। ছবিতে খরচ করতে কমতি করেননি শাকিব। এতে শাকিব এক রহস্যময় যুবক। অপুর সঙ্গে পরিকল্পনা করে প্রেম করেন শাকিব। একই সঙ্গে ববির প্রেমেও পড়েন শাকিব। সেখানেও আছে বিশেষ উদ্দেশ্য। কেন শাকিব একের পর এক খুন করছেন, কেন দুই নারীকে নিয়ে তাঁর ছলাকলা, তারই মোড়কে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয় ‘হিরো দ্য সুপারস্টার’-এ। ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিটি পরিচালনা করেছেন বদিউল আলম খোকন।
শিকারী (২০১৬)
শাকিব খানের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে প্রশংসিত ছবি। যৌথ প্রযোজনার এ ছবিতে শাকিব এক সন্ত্রাসী। সব্যসাচীকে খুন করার জন্য তার বাড়িতে এসে ওঠে চাকর বেশে। বাড়ির প্রতিটি সমস্যা চুটকি বাজিয়ে সমাধান করে ফেলে সে। তাকে দেখে সন্দেহ হয় সে বাড়ির মেয়ে শ্রাবন্তীর। একপর্যায়ে জানা যায় তার আসল পরিচয়। সব্যসাচীরই পালিয়ে যাওয়া ছেলে সে। তবে কেন বাবাকে খুন করতে চায় শাকিব? পরিচালনা করেছেন জয়দীপ মুখার্জি।
নবাব (২০১৭)
ঈদে মুক্তিপ্রাপ্ত ব্যবসাসফল ছবি ‘নবাব’। এতে শাকিব খান এক পুলিশ অফিসার। শুভশ্রী তাঁর নাছোড়বান্দা প্রেমিকা। তাঁর আরেকটি পরিচয় তিনি সাংবাদিক। শাকিব একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীকে ধরতে মরিয়া। তাঁর আছে একটা বেদনাঘন অতীত। যার সঙ্গে তাঁকে নিরন্তর লড়াই করতে হয়। ব্যক্তিগত লড়াইকে কীভাবে পেশাগত লড়াইয়ে পরিণত করেন শাকিব, তারই গল্প ‘নবাব’। পরিচালনা করেছেন জয়দীপ মুখার্জি।