‘মোশাররফ করিম জনপ্রিয় কমেডিয়ান, আমার কাছে ফিলোসফার’

কলকাতায় ‘ডিকশনারি’ ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে মোশাররফ করিম
ছবি : সংগৃহীত

‘আমার কাছে মোশাররফ করিম একজন দার্শনিক অভিনেতা। বারবার তাঁকে নিয়ে কাজ করতে চাই। এমনকি আমার পরবর্তী যে কটি ছবি করব, সব কটিতে মোশাররফ করিমকে চাই।’ বাংলাদেশি অভিনেতা মোশাররফ করিমের সর্বশেষ চলচ্চিত্র ‘ডিকশনারি’ কেরালার একটি উৎসবে আমন্ত্রিত হওয়ার খবরে পরিচালক ব্রাত্য বসু এভাবেই উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন।
শনিবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোর সঙ্গে কথা হয় ভারতের কলকাতার চলচ্চিত্র পরিচালক ব্রাত্য বসুর। ২০ মার্চ থেকে দক্ষিণ ভারতের কেরালায় শুরু হয়েছে একটি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব, যেটি চলবে ২৫ মার্চ পর্যন্ত। উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে অংশ নিয়েছে মোশাররফ করিম অভিনীত ভারতীয় বাংলা সিনেমা ‘ডিকশনারি’। মে মাসে নেপালের আরেক উৎসবে ছবিটি দেখানো হবে।

‘ডিকশনারি’ ছবিতে মোশাররফ করিম ছাড়াও অভিনয় করেছেন নুসরাত জাহান ও আবীর চ্যাটার্জি

মাসখানেক আগে ভারতে মুক্তি পেয়েছে বাংলাদেশি অভিনেতা মোশাররফ করিম অভিনীত ‘ডিকশনারি’। ভারতে এই অভিনেতার প্রথম ছবি মুক্তির পরই হইচই পড়ে যায়। করোনা মহামারির এই সময়েও দলবেঁধে প্রেক্ষাগৃহে ছোটেন তাঁর কলকাতার ভক্তরা। কলকাতায় দর্শক চাহিদার কারণে রাস্তায় সাঁটা পোস্টার আর বিলবোর্ডে মোশাররফ করিমকে গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছেন প্রযোজক আর পরিচালকেরা। ভারতীয় গণমাধ্যমে মোশাররফ করিমকে বাংলাদেশের শাহরুখ খান হিসেবেও অভিহিত করা হয়।

‘ডিকশনারি’ ছবিতে অভিনয় করেছেন মোশাররফ করিম

বুদ্ধদেব গুহর দুটি ছোটগল্প ‘বাবা হওয়া’ ও ‘স্বামী হওয়া’ অবলম্বনে ‘ডিকশনারি’ ছবিটি। এই ছবিতে মোশাররফকে দেখা গেছে একটি আবাসন প্রতিষ্ঠানের মালিক মকরক্রান্তি চ্যাটার্জি চরিত্রে। আর তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে অভিনয় করেছেন ভারতীয় বাঙালি অভিনেত্রী পৌলমী বসু। অন্য চরিত্রে অভিনয় করেছেন নুসরাত জাহান, আবীর চ্যাটার্জি, মধুরিমা বসাক প্রমুখ।
‘ডিকশনারি’ ছবিটি কেরালায় আমন্ত্রিত হয়েছে—এমন খবর জানার পর কলকাতায় থাকা ছবির পরিচালক ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা হলে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ বছর পরে আমি ছবি বানালাম। করোনার মধ্যেও ছবিটি দর্শকেরা পছন্দ করেছেন। এখন উৎসবে প্রদর্শনের ডাক পড়ছে। আমার কাছে এটা একটা স্বীকৃতি তো বটেই। ছবির যে প্রযুক্তিগত সুবিধা আছে, একটা ছবি একটা ব্লু রেতে ক্যারি করা যায়, ওটিটি প্ল্যাটফর্মেও দেওয়া যায়। এতে লাখ লাখ দর্শকের কাছে সেটা পৌঁছে যেতে পারে। এমন উৎসবে প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দর্শকের কাছে পৌঁছে যাওয়ার বিষয়টি স্থানিক থেকে আন্তর্জাতিক হয়ে যায়। এটাই আমার কাছে বেশ জরুরি বলে মনে হয়। আমরা যে ধরনের ছবি বানাই, তা শুধু একটা স্থানিক ভূখণ্ডে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না।’

মোশাররফ করিম

নাটকে অভিনয়ের সুবাদে কলকাতায় মোশাররফ করিমের অসংখ্য ভক্ত তৈরি হয়েছে। মাঝেমধ্যে যখন কলকাতায় যান, খবর পেলেই তাঁরা ছুটে আসেন, দেখা করেন। এবার যখন ‘ডিকশনারি’ ছবিটি মুক্তি পেয়েছে, কলকাতার মোশাররফ–ভক্তদের মধ্যে যেন উৎসবের আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। এই অভিনেতা বলেছিলেন, ‘কলকাতায় এলে আগে নাটক, ছবি নিয়ে ওখানকার ভক্তদের সঙ্গে কথা হতো। ভালোবেসে তাঁরা গড়ে তুলেছে “মোশাররফ করিম ফ্যান ক্লাব”। সেই ক্লাব থেকে জানানো হয়, ক্লাবের সদস্যরা নতুন ছবিটা দেখার জন্য একটি প্রদর্শনীর সব টিকিট কিনে নিয়েছেন। তাঁরা আমার ছবি নিয়ে খুবই এক্সাইটেড। এ ঘটনায় আমি আপ্লুত।’

মোশাররফ করিম

দর্শকের পাশাপাশি কলকাতার পরিচালকদেরও প্রিয় হয়ে উঠেছেন মোশাররফ করিম। ব্রাত্য বসু জানালেন, মোশাররফ করিমের সঙ্গে তাঁর কাজের অভিজ্ঞতা অসাধারণ। তিনি বলেন, ‘এই অভিজ্ঞতা সত্যিই অসামান্য। আমি গভীরভাবে বিশ্বাস করি স্টেলা অ্যাডলারের একটা কথা। বিখ্যাত এই পরিচালক এবং অভিনেত্রী বলেছিলেন, “যাঁর আত্মা ভালো হয়, তিনি ভালো অভিনেতা হতে পারেন।” মোশাররফ করিমের ক্ষেত্রে মনে হয়েছে, তিনি চমৎকার মনের অধিকারী, তাঁর মন সাদা পাতার মতো। সেই সাদা পাতায় যেকোনো চরিত্র তিনি এগিয়ে নিতে পারেন। এই বাংলা এবং ওই বাংলায় মোশাররফ করিমের তো একটা পরিচয় আছে, প্রধানত কমেডিয়ান হিসেবে। কিন্তু আমার কাছে তিনি কমেডিয়ান নন। আমার কাছে তিনি একজন ফিলোসফার, একজন দার্শনিক অভিনেতা। তাঁর নিজস্ব একটা দর্শন অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ফুটে ওঠে। সেটা যখন “ডিকশনারি” ছবিতে প্রতি পদে উন্মোচিত হয়েছে, আমার খুব ভালো লেগেছে। ভবিষ্যতে আমি তাঁর সঙ্গে আরও অনেক কাজ করতে চাই। ইনফ্যাক্ট আমার পরবর্তী সব কাজই তাঁর সঙ্গে করতে চাই।’

ব্রাত্য বসুর তোলা সেলফিতে মোশাররফ করিম

বাংলাদেশের আরও কয়েকজন অভিনয়শিল্পীর অভিনয়ে মুগ্ধ ব্রাত্য বসু। তাঁদের সঙ্গেও কাজ করার আগ্রহ রয়েছে এই পরিচালক ও অভিনেতার। সেই তালিকায় আছেন চঞ্চল চৌধুরী ও অপি করিম। ব্রাত্য বসু বলেন, ‘সবার কাজ দেখেছি। সেসব আমাকে মুগ্ধ করেছে। বাংলাদেশের আরেকজন অসাধারণ অভিনেতার সঙ্গে আমার কাজ করার দীর্ঘদিনের ইচ্ছা। তিনি আমার দাদার মতো এবং সিনিয়র বন্ধু, তিনি আমার বাবারও বন্ধু ছিলেন। তিনি আসাদুজ্জামান নূর।’