জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সিমলা।
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সিমলা।

মুম্বাই থেকে ফিরে পাত্র খুঁজছেন সিমলা

বিয়ে করে সংসারী হতে চান জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত চিত্রনায়িকা সিমলা। তাই তো মনের মধ্যে জমে থাকা কথাটা আড়াল করতে পারলেন না তিনি। জানালেন, পাত্র খোঁজা হচ্ছে। মনের মতো পাত্র পেলেই বিয়ের কাজটি সেরে নিতে চান। সোমবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে এমনটাই জানালেন সিমলা।

সিমলা

মুম্বাইয়ের মীরা রোডের বাড়ি থেকে গেল মাসের মাঝামাঝি ঢাকায় আসেন সিমলা। বলিউডের কাজের স্বপ্ন নিয়ে দুই বছরের বেশি সময় ধরে তিনি মুম্বাই বসবাস করছিলেন। করোনা মহামারি শুরু হয়ে গেলে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঢাকায় ফিরতে পারেননি। এদিকে দেশে ফেরার জন্য মনটা ছটফট করছিল তাঁর। অনেক কষ্টে মুম্বাই থেকে আকাশপথে বানারস। এরপর একই উপায়ে কলকাতা আসেন। তারপর সড়কপথে কলকাতা থেকে ঢাকায় আসেন বলে জানান সিমলা।

সিমলা

রাজধানী ঢাকায় মালিবাগের একটি বাড়িতে ভাড়া থাকেন সিমলা। মুম্বাই যাওয়ার আগেও তিনি সেখানেই থাকতেন। একাকী জীবনের ইতি কবে টানবেন, এমন প্রশ্নের উত্তরে সিমলা বলেন, ‘বিয়ে না করেই তো ভালো আছি। (হাসি)। না, না, আসলে তা নয়। বিয়ে তো করতেই চাই। কিন্তু আমার মন বোঝে, এমন পাত্র তো পেতে হবে। দেখি, পরিবার থেকে পাত্র খোঁজা চলছে। কী হয় দেখার অপেক্ষায় আছি। মনের মতো হলে বিয়েটা সেরে ফেলব।’

সিমলা

১৯৯৯ সালে শহীদুল ইসলাম খোকনের পরিচালনায় ‘ম্যাডাম ফুলি’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের শুরু। এই ছবিতে অভিনয় করে সবার প্রশংসা কুড়ান তিনি। সে বছরে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার লাভ করেন তিনি। প্রথম সিনেমায় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করলেও সমসাময়িক তারকাদের তুলনায় সিমলা অভিনীত ছবির সংখ্যা অনেক কম। বিষয়টিকে তিনি ভাগ্যের লিখন হিসেবে দেখছেন। কেউ কেউ এটিকে পরাজয় বলতে চাইলেও তা মানতে নারাজ সিমলা। তিনি বলেন, ‘আমার মধ্যে কখনোই নেতিবাচক ভাবনা কাজ করে না। বিষয়টাকে আমি দেখতে চাই, আমার সময়ে পরিচালকেরা অন্য ব্যস্ত শিল্পীদের নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন। তাঁরা আমাকে নিয়ে ভাবার সময় হয়তো পাননি। তাই যত বেশি কাজ করা উচিত ছিল, তা করা হয়নি। এসবে মোটেও বিচলিত নই।’

গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করেই সিমলা খবরের শিরোনাম হন।

সিমলার চেয়ে ‘ম্যাডাম ফুলি’ নামে সিমলাকে মানুষ বেশি চেনে। একটি চরিত্র হয়ে দর্শক হৃদয়ে বেঁচে থাকতে পারাটা একজন শিল্পীর অনেক বড় পাওয়া বলে মনে করেন তিনি। শুরুর দিকে মুম্বাইয়ে মাসহ থাকলেও পরের দিকে একাকী থাকতেন। বললেন, ‘মুম্বাই পৃথিবীর মধ্যে বেশ ব্যয়বহুল শহরের একটি। আমি সেখানে সাদামাটাভাবেই থেকেছি। কষ্ট করেছি। যদি সফলতা পেতাম, তাহলে তখন ভিন্নভাবে চিন্তাভাবনা করতাম। তাই নিজের মতো করে থেকেছি।’

অভিনয়জীবনের শুরুতে সিমলা একসঙ্গে তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন।

অভিনয়জীবনের শুরুতে সিমলা একসঙ্গে তিনটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হন। ‘ম্যাডাম ফুলি’ ছাড়া বাকি দুটো ছবি হচ্ছে ‘পাগলা ঘণ্টা’, ‘ভেজা বিড়াল’। কয়েক বছর ধরে ৩৫টির মতো ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের সিনেমায়ও অনিয়মিত। সিমলা অভিনীত সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া সিনেমার নাম ‘নেকাব্বরের মহাপ্রয়াণ’। শুটিং করেছেন ‘নাইওর’ ছবিতে।

সিমলার চেয়ে ‘ম্যাডাম ফুলি’ নামে সিমলাকে মানুষ বেশি চেনে।

গেল বছরের ফেব্রুয়ারিতে হঠাৎ করেই সিমলা খবরের শিরোনাম হন। তখন তিনি মুম্বাইয়ে অবস্থান করছিলেন। কোনো চলচ্চিত্রের কারণে নয়, সিমলা আলোচিত হন বিমান ছিনতাইয়ের মতো একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে। এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিটি নিজেকে সিমলার স্বামী দাবি করেন। সিমলা অবশ্য সেই সময়টার কথা কখনোই মনে করতে চান না। বললেন, ‘ওটার আইনি সমাধান হয়েছে। এসব নিয়ে আমি আর ভাবতে চাই না।’
ঝিনাইদহের শৈলকূপায় সিমলাদের বাড়ির পাশে একটি সিনেমা হল ছিল। ছয় ভাই, পাঁচ বোনের মধ্যে সিমলা সবার ছোট। ভীষণ আদরের। ছোটবেলায় বাড়ি থেকে পালিয়ে সেখানে শাবানা, কবরী ও ববিতাদের সিনেমা নিয়মিত দেখতেন।

মৌসুমী ও সালমান শাহর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার পর চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার ঝোঁক প্রবল হয়।

আর মৌসুমী ও সালমান শাহর ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ দেখার পর চলচ্চিত্রের নায়িকা হওয়ার ঝোঁক প্রবল হয়। সেই সময়ের কথা মনে করে সিমলা বললেন, ‘আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে সংলাপ নকল করতাম। মাকে বললাম, আমি নায়িকা হব। মা ভাবলেন, আমি পাগলটাগল হয়ে গেলাম মনে হয়। পড়াশোনা গেল গোল্লায়। কোনোমতে এসএসসি পাস করে ইন্টারে ভর্তি হই। সিনেমার নেশায় এরপর আর পড়াশোনা হয়নি।’

সমাধি ছবির শুটিংয়ের ফাঁকে গোবিন্দ ও সিমলা