দিন–তারিখ আগেই ঠিক ছিল, চলচ্চিত্রশিল্পীদের নির্বাচন হবে আগামী ১৮ অক্টোবর। গত বৃহস্পতিবার তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে শুরু হলো আনুষ্ঠানিকতা। গতকাল শুক্রবার ভোটারের খসড়া তালিকা প্রকাশ করেছে বর্তমান কমিটি। এর আগে নির্বাচন পরিচালনার জন্য নির্বাচন কমিশন ও আপিল বোর্ড গঠিত হয়েছে।
ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী নির্বাচনে অংশ নিতে ইচ্ছুক সমিতির স্থায়ী সদস্যরা সোমবার ৩০ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারবেন। আগামী ২ অক্টোবর দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনারের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া যাবে। ৩ অক্টোবর বিকেল ৫টায় প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন ৫ অক্টোবর। ওই দিনই চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রকাশিত হবে।
শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক নায়ক জায়েদ খান জানান, শুক্রবার এবারের খসড়া ভোটার তালিকায় মোট ৪৪০ সদস্যের নাম প্রকাশ করা হয়েছে। এর বাইরে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁরা তালিকায় নাম ওঠানোর জন্য রোববার ২৯ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টা থেকে বেলা ১টার মধ্যে আবেদন করতে পারবেন। ওই দিনই বিকেল ৫টায় চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হবে।
এবারের নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের দায়িত্ব পালন করবেন জ্যেষ্ঠ নায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। তিন সদস্যের আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম খান। বাকি দুজন সদস্য হলেন পরিচালক সোহানুর রহমান ও রশিদুল আমিন।
নির্বাচন সামনে রেখে এখন পুরোদমে সরগরম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি) প্রাঙ্গণ। শুক্রবার দুপুরের পর থেকেই শিল্পীদের আসা–যাওয়া ছিল। দুপুরে সমিতির অফিসে দেখা গেছে নবীন–প্রবীণ শিল্পীদের সরব উপস্থিতি।
এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে সবচেয়ে বড় চমক চিত্রনায়িকা মৌসুমী। ইতিমধ্যে সভাপতি পদপ্রার্থী হবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। শিল্পী সমিতির ইতিহাসে তিনিই প্রথম নারী, যিনি সভাপতি পদপ্রার্থী হচ্ছেন। তবে ওমর সানী নির্বাচন করার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখেন। কিন্তু হঠাৎ মৌসুমীর নির্বাচনে অংশগ্রহণকে সাধুবাদ জানিয়ে সরে দাঁড়ান তিনি।
বর্তমান সভাপতি মিশা সওদাগর এবং সাধারণ সম্পাদক দুজনই নিশ্চিত করলেন তাঁরা আবারও এক প্যানেলে থেকে একই পদে নির্বাচন করছেন। আরেকটি প্যানেলের কথা শোনা গেল শুক্রবার; মৌসুমী-তায়েব। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য মৌসুমীকে পাওয়া যায়নি। তবে অভিনেতা ডি এ তায়েব নিশ্চিত করেন, তিনি এবং মৌসুমী একই প্যানেলে নির্বাচন করবেন। তিনি সাধারণ সম্পাদক পদে দাঁড়ানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন। শুক্রবার রাতে প্রথম আলোকে তিনি বলেন, ‘আমি আর শাকিব খান এক প্যানেলে নির্বাচন করার কথা ছিল। পরে শাকিব খান জানালেন মৌসুমী আপার প্রতি সম্মান দেখিয়ে তিনি এবার আর নির্বাচন করবেন না।’ কোনো সরকারি চাকরিজীবী সমিতির নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে অংশ নিতে পারবেন? এ প্রশ্নের জবাবে পুলিশ কর্মকর্তা তায়েব বলেন, ‘অলাভজনক ও অরাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে কাজ করলে কোনো সমস্যা নেই। সেবামূলক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পারব। তবে যদি সমিতির গঠনতন্ত্রে সরকারি কর্মকর্তার নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে কোনো বিধিনিষেধ থাকে, তখন আমি হয়তো অন্য কিছু ভাবব।’
সাধারণ সম্পাদক পদে প্রার্থী হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন খল অভিনেতা হিসেবে পরিচিত সিবা শানু। একাধিক সূত্রে জানা গেছে, এবার মৌসুমী–তায়েব প্যানেলটি হবে তারকাবহুল। বেশ কিছু চমক থাকবে এ প্যানেলে। মিশা-জায়েদ প্যানেল থেকে সভাপতি প্রার্থী মিশা সওদাগর বলেন, ‘শিগগিরই আমাদের প্যানেলের বাকি পদ চূড়ান্ত করব। চমক আমাদের প্যানেলেও থাকবে। অপেক্ষা করুন।’
গত ২৪ মে সমিতির দুই বছরের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। সমিতির গঠনতন্ত্র ৮ অনুচ্ছেদের (চ) অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার ৯০ দিন অর্থাৎ তিন মাসের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা। সে হিসাবে ২৪ আগস্টের মধ্যে নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এমনকি গঠনতন্ত্রের বাইরে গিয়ে আরও প্রায় দুই মাসের মাথায় এই নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বর্তমান সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, ‘বিশেষ কিছু কারণে আমরা কিছুটা দেরিতে নির্বাচন করছি। কারণগুলো কী, সেটা সবাই জানেন। নানা ব্যস্ততা, ঝামেলা শেষ করে নতুন নির্বাচনের তারিখ দিয়েছি। আশা করছি, ঘোষিত সময়ের মধ্যে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করতে পারব।’