ভোট কেনাবেচার অভিযোগ তুলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনী আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন পরাজিত সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী নিপুণ। সেই আবেদনের প্রেক্ষাপটে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে জেলা সমাজসেবা কার্যালয় হয়ে আপিল বিভাগের কাছে গত মঙ্গলবার একটি নির্দেশনামূলক চিঠি আসে। চিঠিতে সাধারণ সম্পাদক ও কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদের ফলাফল নিয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে আপিল বিভাগের চেয়ারম্যানের ওপর। সাধারণ সম্পাদক পদে জায়েদ খান এবং কার্যকরী পরিষদ সদস্য পদে চুন্নু বিজয়ী হয়েছেন।
আপিল বিভাগের চেয়ারম্যান পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান আগামীকাল বিকেলে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির কার্যালয়ে অভিযোগকারী ও অভিযুক্তদের নিয়ে মিটিং ডেকেছেন। সেখানে আপিল বিভাগের দুই সদস্য, নির্বাচন কমিশনের দুই সদস্যসহ অভিযোগকারী নিপুণ, অভিযুক্ত জায়েদ খান ও চুন্নুর উপস্থিত থাকার কথা। এ ব্যাপারে আপিল বিভাগ থেকে সবাইকে চিঠিও দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এক দিন আগে শুক্রবার সন্ধ্যায় জায়েদ খান জানান, তিনি ও চুন্নু কেউই উপস্থিত হবেন না মিটিংয়ে। তাঁর দাবি, কোনো অবৈধ কমিটির সিদ্ধান্তের কাছে তিনি যাবেন না। জায়েদ খান বলেন, ‘আমি কেন অবৈধ কমিটির কাছে যাব। কেন? আর গেলেইবা কী। কাল যে রায় হবে, তাতে আমার কিছুই যায়-আসে না। কারণ তারা অবৈধ কমিটি। তাদের চ্যালেঞ্জ করতে হলে আদালতে যেতে হবে।’
জায়েদ খান আরও বলেন, ‘২৯ জানুয়ারি আমাকে চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত করা হয়েছে। তারপরও তাঁরা যদি এটি নিয়ে লড়তে চান, সেটা আদালতে হবে। আপিল বোর্ডের কোনো কার্যকারিতাই নেই। আমার আইন উপদেষ্টা একই কথা বলছেন। আপিল বিভাগ হাস্যকর কর্মকাণ্ড করছে।’
জায়েদ খান বলেন, ‘আপিল বিভাগ বলেছে, ২৯ তারিখে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে। আমরা সেই চিঠি বের করে দেখেছি, সেটা ১ ফেব্রুয়ারিতে পাঠানো। ২৯ জানুয়ারি আপিল বিভাগের কার্যকারিতা শেষ। ১ ফেব্রুয়ারি তারা মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠাতে পারে না। মন্ত্রণালয়ের কাছেও ওই চিঠি গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’
তাহলে মন্ত্রণালয় সেই চিঠি গ্রহণ করে আপিল বিভাগকে দিকনির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠিয়েছে কীভাবে? জানতে চাইলে জায়েদ খান বলেন, ‘হয়তো মন্ত্রণালয়কে তারা ভুল বুঝিয়েছে। আপিল বিভাগের কার্যকারিতা সম্পর্কে হয়তো জানে না মন্ত্রণালয়। এ কারণেই এসব ভুল কার্যক্রম বন্ধ করতে মন্ত্রণালয়সহ আপিল বিভাগের পাঁচজনের বিরুদ্ধে লিগ্যাল নোটিশ পাঠিয়েছি। এই কার্যক্রম থামানোর অনুরোধ করছি। যদি তা না করে, তাদের মতো ৫ ফেব্রুয়ারি মিটিং করে, তাহলে এই অবৈধ কার্যক্রমের কারণে সবার নামে মামলা করব।’
আপিল বিভাগের চেয়ারম্যান সোহানুর রহমান সোহান ও এক সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগও তুলেছেন জায়েদ খান। তিনি বলেন, ‘আপিল বিভাগের মিটিং হবে শিল্পী সমিতিতে, কিন্তু তা না করে তারা মিটিং করে সনি সিনেমা হলে। মিটিং করে সেখান থেকে আমাদের কাছে সিদ্ধান্তের কাগজ পাঠায়। এখানেও ষড়যন্ত্র আছে।’
এদিকে জায়েদ খানের উপস্থিত না হওয়ার ব্যাপারে আপিল বোর্ডের এক সদস্য মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের যে ধরনের দিকনির্দেশনা দিয়েছে, সেভাবে কাজ করব। উভয় পক্ষের মুখের কথা শুনে, প্রমাণ দেখে, বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি সামারি তৈরি করব। তার একটা কপি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেব। ফলাফলের সিদ্ধান্ত মন্ত্রণালয় নেবে। এ ছাড়া কিছুই করার নেই। মিটিংয়ে উপস্থিত হতে দুই পক্ষকেই চিঠি দিয়েছি। কে এল না এল, তা আমাদের দেখার প্রয়োজন নেই।’
তফসিল অনুযায়ী আপিল বিভাগের মেয়াদ ২৯ জানুয়ারি। সেই অনুযায়ী ১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ে আপিল বিভাগ অভিযোগের চিঠি পাঠাতে পারে না, জায়েদ খানের এমন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মোহাম্মদ হোসেন বলেন, ‘তাহলে ২৮ জানুয়ারিই ভোটের ফলাফল দেওয়ার নিয়ম, ২৯ জানুয়ারি ফল ঘোষণা হলো কেন? আমাদের কাছে অনেক যুক্তি আছে। কিন্তু সেদিকে যাচ্ছি না। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ আমরা পালন করে কাজ শেষ করতে চাই।’
জায়েদ খানের লিগ্যাল নোটিশের ছবি তাঁকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন এই কমিশন সদস্য। তবে এখনো হাতে পাননি। তিনি বলেন, ‘এসব নিয়ে ভাবছি না। আমাদের কাজ শেষ করে দেওয়ার পর কে কোথায় নোটিশ, মামলা দেবেন, সেটা একান্তই তাঁর ব্যাপার।’