দেশের নানা প্রান্তে নির্যাতিত, নিপীড়িত, সুবিধাবঞ্চিত নারীদের অনেকে এসে একসঙ্গে থাকছেন উত্তরার একটি বৃদ্ধাশ্রমে। খোঁজ পেয়ে সেখানে যান চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা। ছুটির দিনে দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত বৃদ্ধাশ্রমে থাকা নারীদের সঙ্গে কাটান। কাছ থেকে তাঁদের দুঃখ-কষ্টের কথা শুনে স্তব্ধ হয়েছেন, অনুরোধে গান শুনিয়েছেন।
গতকাল শুক্রবার ছুটির দিনে দুপুর থেকে বিকেলটা চিত্রনায়িকা পূর্ণিমা কাটিয়েছেন রাজধানীর উত্তরার আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে। চার ঘণ্টার বেশি সময় ধরে থেকে বৃদ্ধাশ্রমের নারীদের দুঃখ-দুর্দশা তাঁর হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। তাঁদের কাছ থেকে শোনা গল্পে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়েছেন। কষ্টের সেসব কথা কারও সঙ্গে ভাগ করতে পারছেন না। এসব গল্প নিজের মনের মধ্যে জমা রেখেছেন। পূর্ণিমা জানান, জীবনের অন্যতম একটি দিন কাটিয়েছেন তিনি।
এর আগে সুবিধাবঞ্চিত কিংবা সাহায্য দরকার, এমন অনেকের পাশে নীরবে নানাভাবে থাকার চেষ্টা করেছেন পূর্ণিমা। এসব বিষয় কেউ জানুক, তা কখনো চাননি। এবার আর সেই সিদ্ধান্তে অটল থাকতে পারলেন না। যে বৃদ্ধাশ্রমে গিয়েছিলেন, কর্তৃপক্ষের অনুরোধে বিষয়টি প্রকাশ্যে আনতে বাধ্য হন এই চিত্রনায়িকা।
পূর্ণিমা বলেন, ‘আমার সব সময় মনে হতো, জীবনের একটা সময়ে মানুষের পাশে থাকব। সেই ইচ্ছে থেকে চুপচাপ এসব করছি। বাবার মৃত্যুর পর মাদ্রাসা কিংবা এতিমখানায় যাই। অসুস্থ রোগীর খোঁজ পেলে সামর্থ্য অনুযায়ী সহযোগিতা করি। এবার যে বৃদ্ধাশ্রমে গেলাম, কর্তৃপক্ষ চেয়েছে আমি যেন বিষয়টি সবাইকে জানাই। তাহলে সমাজের সামর্থ্যবান আরও অনেকে এমন উদ্যোগে সাড়া দেবেন।’
ঢাকার উত্তরার উত্তরখান এলাকার মৈনারটেকে আপন নিবাস বৃদ্ধাশ্রমে বিভিন্ন বয়সের অন্তত অর্ধশত নারী থাকেন। শুক্রবার দুপুরে সেই বৃদ্ধাশ্রমের লোকজনের সঙ্গে সময় কাটাতে যান পূর্ণিমা। বললেন, ‘ওখানে নির্যাতিত মেয়েদের দেখেছি। তাঁদের বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। কেউ হারিয়ে গেছেন। একজন নারী তো এতটাই নির্যাতিত, তিনি এখন কাউকে চিনতে পারেন না। তাঁর মুখ থেকে শুধু একটাই কথা—পুলিশ পুলিশ।’
বৃদ্ধাশ্রমে বাস করা নারীদের গল্প শুনে স্তব্ধ হয়ে যান পূর্ণিমা। বললেন, ‘অনেক ধরনের কষ্টের কাহিনি শুনেছি, নির্যাতনের গল্প শুনেছি। এসব বলতে পারব না, লিখতে পারব না। আমি কেঁদে ফেলেছি। ইচ্ছা আছে সামনে আরও বেশি করে যাওয়ার। তাঁদের পাশে থাকার।’
বৃদ্ধাশ্রমে বৃদ্ধ নারীদের পাশাপাশি আছেন কিছু প্রতিবন্ধীও। তাঁদের সঙ্গে অসাধারণ সময় কেটেছে বলে জানান পূর্ণিমা। কেউ কেউ তাঁর অভিনীত ছবির গল্প করেছেন। পূর্ণিমা বলেন, ‘প্রতিবন্ধী যাঁরা, তাঁরা আমাকে চিনেছেন। কয়েকজন জড়িয়ে ধরে কেঁদেছেন। বলেছেন, আপনার “নিঃশ্বাসে তুমি বিশ্বাসে তুমি” সিনেমা দেখেছি। কেউ বলছেন, নায়িকা হবেন। আর নায়ক হবেন শাকিব খান। আমি বললাম, আমি শাকিব খানকে জানাব।’
বৃদ্ধাশ্রমের বাসিন্দাদের অনুরোধে পূর্ণিমা তাঁদের গান শুনিয়েছেন। পূর্ণিমাকেও তাঁরা গান শুনিয়েছেন। বললেন, ‘একজন বললেন গান শুনাবেন। আমি বললাম শোনান। একটি হিন্দি গান শোনালেন। এরপর আমাকে বললেন আসিফের গান গাইতে। তাঁদের অনুরোধে “ও প্রিয়া ও প্রিয়া তুমি কোথায়” গাইলাম।’