বাড়ছে খরচ, হচ্ছে লোকসান

সিনেমা প্রদর্শনীর এই সিস্টেমের আওতায় রয়েছে প্রজেকশন মেশিন, সার্ভার, সাউন্ড মিক্সিং মেশিন, মনিটর, ইউপিএস, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ও সাউন্ড বক্স।
প্রথম আলো

প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ ছিল প্রায় সাত মাস। এ সময়ে সিনেমাসংশ্লিষ্ট প্রায় সব ক্ষেত্রই ক্ষতির মুখে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে হলের মালিক ও প্রযোজকদের। পাশাপাশি বড় রকমের লোকসানের কবলে পড়েছেন প্রেক্ষাগৃহে সিনেমা প্রদর্শনযন্ত্রে বিনিয়োগকারীরা। দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকার কারণে হলগুলোতে থাকা সিনেমা প্রদর্শনীর ডিজিটাল প্রজেক্টরগুলো ছিল নিষ্ক্রিয়। সাত মাসে এসব যন্ত্রের ভাড়া বাবদ আয় হারিয়েছেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে এসব দেখভাল করা কর্মীদের বেতন দিতে হয়েছে যন্ত্রের মালিকদের।

সিনেমা প্রদর্শনীর এই সিস্টেমের আওতায় রয়েছে প্রজেকশন মেশিন, সার্ভার, সাউন্ড মিক্সিং মেশিন, মনিটর, ইউপিএস, ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ও সাউন্ড বক্স। থার্টি ফাইভ মিলিমিটার থেকে ডিজিটাল যুগে প্রবেশের পর ২০১৩ সালে সিনেমা হলে যন্ত্র স্থাপন করে জাজ মাল্টিমিডিয়া। সে সময় তারা স্থাপন করেছিল ১২৫টি মেশিন।

বলাকা সিনেমা হলের ভেতরে বসে আছেন তিনজন। ছবি: সংগৃহীত

সিনেমা ব্যবসায় ধস নামার পর তাদের সেই যন্ত্রাংশের সংখ্যা এখন এক শর কম। ২০১৯ সালে এসকে বিগ স্ক্রিন নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান দেশের হলগুলোতে স্থাপন করে ৫৬টি মেশিন। বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি হল কর্তৃপক্ষ নিজ উদ্যোগে এসব যন্ত্র স্থাপন করলেও মূলত উক্ত দুটি প্রতিষ্ঠানই এই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গত সাত মাস হল বন্ধ থাকায় যন্ত্রের ভাড়াসহ কর্মীদের বেতন বাবদ এই ব্যবসায়ীদের কোটি টাকা লোকসান গুনতে হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দীর্ঘদিন হল বন্ধের কারণে কোনো কোনো হল থেকে চুরি গেছে সার্ভার, অকেজো হয়ে গেছে ইউপিএস। কিছু কিছু হলে প্রজেক্টর মেশিনের বাল্ব জ্বলে গেছে।

রাজধানীর নয়াপল্টনের মূল সড়কে জোনাকী সিনেমা হল।

জাজ মাল্টিমিডিয়ার প্রধান নির্বাহী আলীমুল্লাহ খোকন বলেন, ‘গত সাত মাসে সিনেমা হলে থাকা মেশিনগুলো থেকে আমরা প্রায় কোটি টাকা আয় হারিয়েছি। এ ছাড়া এসব মেশিন দেখাশোনার জন্য কর্মচারীদের বসিয়ে বসিয়ে বেতন দিতে হয়েছে। বন্ধের মধ্যে বেশ কয়েকটি হল থেকে আমাদের সার্ভার মেশিন হারিয়ে গেছে। চার্জের অভাবে ইউপিএস নষ্ট হয়েছে, কিছু প্রজেক্টর মেশিনের বাল্ব নষ্ট হয়েছে। এখন এগুলো নতুন করে কিনতে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় হবে।’

বর্তমান পরিস্থিতিতে এসব প্রদর্শনযন্ত্রের ব্যবসায় আরও ক্ষতির আশঙ্কা করে তিনি বলেন, ‘সিনেমার অবস্থা কবে ভালো হবে, হলগুলো কবে থেকে ঠিকঠাক চলবে, আমরা জানি না।

নতুন স্বাভাবিকে খুলল সিনেমা হল। ছবি: প্রতিবেদক

কারণ, সিনেমার অভাবে এসব মেশিন পড়ে থাকলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাই বেশি। তা ছাড়া মেশিনগুলো হল থেকে খুলে নিয়ে এসে অন্য কাজেও লাগানো যাবে না। এমনকি বিক্রি করে মূলধন ফেরত পাওয়ারও সম্ভাবনা নেই।’এসকে বিগ স্ক্রিনের মালিকানা যৌথভাবে নায়ক শাকিব খান ও প্রযোজক মোহাম্মদ ইকবালের। মোহাম্মদ ইকবাল বলেন, ‘সাত মাস হল বন্ধের কারণে মেশিনগুলোর ভাড়া হয়নি। মেশিনগুলো দেখাশোনার জন্য ২০ জন কর্মীকে বসিয়ে বেতন দিতে হয়েছে। হিসাব করে দেখেছি, সব মিলিয়ে প্রায় ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

এই প্রযোজক জানান, ১৬ অক্টোবর থেকে হল খোলার অনুমতি মিললেও অনেক হল এখনো খোলেনি। ছবি চললেই মেশিন ভাড়া দিতে হবে হলের মালিকদের। তাই দর্শকের অভাবে অনেক হলই খুলছে না।

সিনেমার হল বন্ধ ঘোষণার আগ পর্যন্ত দেশের সিনেমা হলগুলো চলছিল শাহেনশাহ, রবিবার এবং হলুদ বনি। ছবি: সংগৃহীত

ফলে অনেক মেশিন যথারীতি পড়ে থাকছে।এ ব্যাপারে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিবেশক সমিতির সভাপতি খোরশেদ আলম বলেন, বাংলা সিনেমা ডিজিটালে যাত্রার পর এই মেশিনের ব্যবসা শুরু হয়। চলচ্চিত্রের এটিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র। কিছু মানুষ এখান থেকেও জীবিকা নির্বাহ করছিলেন। কিন্তু করোনাকালে সিনেমার এই ক্ষেত্রও লোকসানের কবলে পড়ে। হল বন্ধ থাকায় গত সাত মাস মেশিন ভাড়া বাবদ কোনো আয় হয়নি। এখন হল খোলার অনুমতি থাকলেও দর্শকের অভাবে অনেক হল খুলছে না। ফলে মেশিনগুলোও নিষ্ক্রিয় পড়ে আছে। এই প্রযোজক নেতা আরও বলেন, এসব মেশিন খুব সূক্ষ্ম। নিয়মিত সচল না রাখলে নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা বেশি। এতে করে আরও বড় লোকসানের আশঙ্কা আছে।