বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএফডিসি) আঙিনায় চলচ্চিত্রের সাত সংগঠনের কার্যালয়। ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ–পানির বিল ও রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ তাদের কাছে লাখ লাখ টাকা পায় বিএফডিসি।
১৯৮৬-৮৭ অর্থবছরে প্রতি মাসে ভাড়া বাবদ ১ হাজার ৫০০ টাকাসহ বিদ্যুৎ বিল, পানির বিল, রক্ষণাবেক্ষণ খরচসহ চলচ্চিত্রের সংগঠনগুলোর কাছে ঘর ভাড়া দেয় বিএফডিসি। মধ্যে দুই দফা এ ভাড়ার অঙ্ক বাড়ানো ও কমানো হয়। বাড়িয়ে একবার আড়াই হাজার টাকা করে পরে আবার তা কমিয়ে ২ হাজার টাকা করা হয়। বিএফডিসির অর্থ ও হিসাব বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত গত ৩২ বছরে সমিতিগুলোর কাছে সংগঠনগুলোর কাছে বকেয়া রয়েছে ৭৪ লাখ ৫৯ হাজার ৭৫৩ টাকা। আর এ সংগঠনগুলো হচ্ছে প্রযোজক পরিবেশক সমিতি, পরিচালক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা, সিডাপ, ফিল্ম এডিটরস গিল্ড ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র ব্যবস্থাপক সমিতি।
বিভিন্ন সময়ে প্রযোজক সমিতি, শিল্পী সমিতি, চিত্রগ্রাহক সংস্থা, ফিল্মস এডিটরস গিল্ড—এ চার সমিতি আলাদা আলাদা করে মোট ৪ লাখ ৫৮ হাজার ৩২ টাকা পরিশোধ করে। বাকি তিনটি সমিতি কোনো টাকাই পরিশোধ করেনি। অর্থ ও হিসাব বিভাগ থেকে বছরের পর বছর বকেয়া পরিশোধে সমিতিগুলোকে চিঠি দেওয়া হলেও পাওনা টাকা পরিশোধ করেনি সংগঠনগুলো।
এ নিয়ে বিএফডিসির কোনো কর্মকর্তাই সরাসরি কথা বলতে চাননি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফডিসির হিসাব বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রতি মাসেই সমিতিগুলোকে বকেয়ার পরিমাণ উল্লেখ করে চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু তাদের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। এ ব্যাপারে শক্ত অবস্থানে গেলেও সমিতির নেতারা রাগ করেন।’ বিএফডিসির অর্থ ও প্রশাসন বিভাগের পরিচালক নুজহাত ইয়াসমিন বলেন, ‘বোর্ড মিটিংয়ে বেশ কয়েকবার বিষয়টি নিয়ে কথা হয়েছে। কোনো সমাধান হয়নি।’
সমিতিগুলোর নেতাদের মতে, এখানে চলচ্চিত্রের লোকেরা কাজ করতে আসেন। তাঁদের পড়ালেখা ও বিশ্রামের জন্য এ ঘর দিয়েছে এফডিসি। এ ব্যয় বহন করা এফডিসির দায়িত্ব। প্রযোজক সমিতির সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, ‘চলচ্চিত্রের স্বার্থে আমরা কাজ করি। আমরা কেন এই জায়গার জন্য ভাড়া দেব? আমরা না থাকলে তো এফডিসি–ই থাকবে না। এই জন্য ভাড়া চাওয়া অনৈতিক।’
বিশ্রামঘরকে সংগঠনের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করছেন। এফডিসি কেন সেই কার্যালয় বিনা ভাড়ায় ব্যবহার করতে দেবে? এমন প্রশ্নে এই নেতা বলেন, ‘এটি চলচ্চিত্রের সংগঠন। সমস্যা কী?’
কিন্তু প্রযোজক সমিতি এর আগে একদফা ভাড়া, বিদুৎ বিল ও পানির বিল বাবদ ৩ লাখ টাকার বেশি পরিশোধ করেছিল। এ ব্যাপারে শামসুল আলম বলেন, ‘কমিটি না থাকায় দীর্ঘদিন প্রশাসক দিয়ে সমিতি চলেছে। ওই সময় প্রশাসক না বুঝেই ৩ লাখ টাকার ওপরে এফডিসিকে দিয়েছে। এখন ওই টাকা এফডিসির কাছে ফেরত চাইব আমরা।’
প্রতি মাসে বকেয়া পরিশোধের চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করলেন প্রযোজক সমিতির মহাসচিব বদিউল আলম খোকন। তিনিও সমিতির কার্যালয়ের ভাড়া দেওয়ার পক্ষে নন। খোকন বলেন, ‘আমরা যদি এখানে কাজ না করি, তাহলে এফডিসিই বন্ধ হয়ে যাবে। যদি ভাড়া দিয়ে এখানে বসতে হয়, তাহলে এখানে আসবই না। বাইরে বসে সমিতি চালাব, কাজ করব। এফডিসির কোনো ফ্লোর, কারিগরি সহায়তা নেব না।’
তবে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সভাপতি মিশা সওদাগর বকেয়া ভাড়া পরিশোধ করা না–করার বিষয়ে কিছু বলেননি। তিনি বলেন, ‘এখন বিষয়টি নিয়ে কিছুই বলা যাচ্ছে না। সামনে কার্যকরী কমিটির মিটিংয়ে এ নিয়ে আলোচনা হবে।’