জন্মদিনের কথা মনে থাকে না নায়ক রুবেলের! রুবেলকে প্রতিবছর জন্মদিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেন ছেলে নিলয় পারভেজ। এ বছরও ব্যতিক্রম হয়নি। গত রাত ঠিক ১২টায় যুক্তরাজ্য থেকে বাবাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি কেক কাটা বা সেসবের ছবি ফেসবুকে পোস্ট না করার আহ্বান জানিয়েছেন বাবাকে। ছেলের কথা মেনে জন্মদিন উদ্যাপন করেননি একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেতা রুবেল। জন্মদিনে প্রথম আলোর সঙ্গে আলাপে চলচ্চিত্র নিয়েও নানা কথা বললেন এই অভিনেতা।
আজ সোমবার ছিল অভিনেতা রুবেলের জন্মদিন। প্রায় তিন যুগের ক্যারিয়ারে কোনো অপ্রাপ্তি নেই তাঁর। নেই কোনো অভিযোগ-অনুযোগ। চলচ্চিত্র তাঁকে যা দিয়েছে, তাতেই তিনি খুশি। রুবেল বলেন, ‘শুভাকাঙ্ক্ষী, সহকর্মী, ছাত্রছাত্রীরা ফোন করছেন, মেসেজ পাঠাচ্ছেন। তাঁদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এ ছাড়া দিনটা কাটছে অন্য আর দশটা দিনের মতোই। আমার মতো একজন মানুষের জন্মদিন তারা মনে রেখেছে, এতেই আমি খুশি।’
প্রতিবছর জন্মদিনে একাধিক কেক কাটতে হয় রুবেলকে। তবে মহামারির কারণে গত বছরের মতো এ বছরও জন্মদিন উদ্যাপন করেনি রুবেলের পরিবার। তিনি ও তাঁর পরিবার মনে করে, দেশের মানুষ এখন নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন। এ সময় জাঁকজমকভাবে জন্মদিন উদ্যাপন করা শোভা পায় না। একজন শিল্পী হিসেবে নিজের বিবেকের প্রতি দায়বদ্ধ তিনি।
বড় ভাই সোহেল রানার হাত ধরে চলচ্চিত্রে এসেছিলেন রুবেল। ১৯৮৬ সালে পরিচালক শহীদুল ইসলাম খোকনের ‘লড়াকু’ দিয়ে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় তাঁর। প্রথম সিনেমা ব্যবসায়িকভাবে সফল হয়। তারপর কেবলই এগিয়ে গেছেন। সমানতালে অভিনয় করে গেছেন একের পর এক ছবিতে। ‘মায়ের জন্য যুদ্ধ’, ‘বিচ্ছু বাহিনী’, ‘মুখোশ’সহ আড়াই শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন রুবেল। তাঁর অভিনীত বেশির ভাগ সিনেমাই ছিল ‘হিট’। মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট পাওয়া রুবেলের মারপিটের দৃশ্য বিশেষভাবে আকর্ষণ করত দর্শকদের। মনের মতো গল্প পান না বলে এখন আর অভিনয়ে দেখা যায় না তাঁকে। তা ছাড়া তাঁদের সময়ে দেশে সিনেমা হল ছিল বেশি, সিনেমার প্রচুর দর্শকও ছিল। এখন সিনেমা এবং দর্শক দুটিই কমছে। তিনি মনে করেন, সুস্থ বিনোদনের সিনেমা বানাতে হবে। তা না হলে সামনে আরও খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে।
চলচ্চিত্র, দর্শক ও প্রেক্ষাগৃহ কমে যাওয়ার কারণ কী বলে মনে করেন তিনি? রুবেল বলেন, ‘পরিচর্যা দরকার। শুধু গ্রহণ করলেই হবে না, দিতেও হবে। আমরা ফিল্মকে ভালোবাসতাম, সে জন্য ফিল্মও আমাদের অনেক দিয়েছে। আমি সবার প্রতি সম্মান রেখে বলছি, আমার কেন যেন মনে হয়, এখনকার অনেকের ফিল্মের প্রতি ভালোবাসা নেই, দায়বদ্ধতা নেই। তাদের ভালোবাসা টাকার প্রতি, বাড়ি-গাড়ির প্রতি। তারা শুধু নিচ্ছে, ফিল্মকে ভালোবাসছে না, এ জন্য ফিল্ম মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে আমি আশাবাদী, ফিল্মের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হলে আমাদের ফিল্ম আবারও জেগে উঠবে।’
রুবেল মনে করেন, সিনেমা–সংশ্লিষ্ট সংগঠনগুলো, যেমন পরিচালক সমিতি, প্রযোজক সমিতি, শিল্পী সমিতির মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। এই সংগঠনগুলো মিলে যদি চেষ্টা করে, তাহলেই সিনেমাকে বাঁচানো যাবে। সিনেমা ঘুরে দাঁড়াবে। এ জন্য সরকার ঘোষিত হাজার কোটি টাকার তহবিল যথাযথভাবে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রুবেল বলেন, ‘এই মুহূর্তে আমাদের ৪০০ সিনেমা হল দরকার। সেখানে সিনেমা দেখার মতো পরিবেশ থাকতে হবে। পাশাপাশি টানা দুই বছর যেন প্রতি মাসে দর্শক দুটি ভালো সিনেমা দেখতে পারে, সে ব্যাপারে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা দরকার।’
সর্বশেষ নভেম্বর মাসে মুক্তিযুদ্ধের একটি সিনেমার শুটিং করেছেন রুবেল। করোনার কারণে স্থগিত হয়ে যায় আরও একটি সিনেমার কাজ। এ ছাড়া আরও তিনটি সিনেমার কাজ পরিস্থিতি বুঝে শুরু করা হবে বলে জানান এই অভিনেতা। মার্শাল আর্ট শিক্ষক রুবেল ১৯৮২ ও ১৯৮৩ সালে পরপর দুবার জাতীয় কারাতে চ্যাম্পিয়ন হিসেবে স্বর্ণপদক জয় করেছিলেন।