প্রয়াত ছেলের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে বেড়েছে মায়ের কান্না

ছেলে সহিদুর রহমানের (ওপরে) ছবির সামনে মা রহিমা রহমান
ছবি: সংগৃহীত

ছেলের জীবনের সেরা অর্জন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এমন অর্জনের পরের দিনগুলো হওয়ার কথা ছিল আনন্দমুখর। তা না হয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারটিই যেন মায়ের কান্না আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। সহিদুরের মায়ের কান্না থামছেই না। সহিদুর ২০২০ সালে ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার নৃত্য পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। তিনি সুমন রহমান নামেই পরিচিত। ২৩ মার্চ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিতে গিয়ে বারবার কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তাঁর মা রহিমা রহমান।

সহিদুর রহমান নৃত্য পরিচালক হিসেবে সহকর্মীদের মধ্য পরিচিত ছিলেন। তিনি আগে থেকেই ভেবেছিলেন, ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমায় কোরিওগ্রাফি তাঁর ক্যারিয়ারে বাড়তি কিছু যোগ করবে। অবশেষে সেই সিনেমার গানের জন্য সেরা নৃত্য পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। স্বীকৃতির খবর শুনে যেতে পারেননি। পুরস্কার ঘোষণার কদিন আগেই তিনি খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা যান। ছেলের হয়ে মঞ্চে জাতীয় পুরস্কার গ্রহণ করেন এই শিল্পীর মা। এর পর থেকে যেন কান্না থামছেই না। শোক যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে পুরস্কারটি।

সুমন রহমান এখন স্মৃতি

সহিদুরের ভাই ইমন রহমান বলেন, ‘মাকে নিয়েই গিয়েছিলাম ভাইয়ের শেষ স্মৃতি আনতে। মায়ের সঙ্গে আমিও পুরস্কার নিতে উঠেছিলাম। মা সারাক্ষণ ইমোশনাল ছিলেন। কষ্টটা আমি বুঝতে পারছিলাম। সেই সময়ে আমি মায়ের সঙ্গে কোনো কথা বলিনি। চুপচাপ ছিলাম। পরে বাসায় এসে পুরস্কারটি মা বাবার হাতে দিলেন। তখন আমাদের খারাপ লাগছিল। ভাইয়া নিজে এই পুরস্কার অনুষ্ঠানে থাকতে পারলে কত খুশি হতো। তার জীবনের স্বপ্ন ছিল ভালো কাজ দিয়ে এই সম্মাননা পাবে। সেই পুরস্কার নিজে আনলে হয়তো মা–বাবার হাতে দিয়ে সালাম করত। পুরস্কারটি বড় কিন্তু আমাদের শোককে তো আর মুছে ফেলতে পারে না। এটাই আমাদের পরিবারের কাছে সান্ত্বনা।’

নবাব এলএলবি সিনেমার শুটিংয়ের ফাঁকে সুমন চিত্রনায়ক শাকিবের সঙ্গে

সহিদুর সব সময় মনোযোগ দিয়ে কাজ করতেন। তিনি শাকিব খানের ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমাসহ ‘টিকাটুলীর মোড়, আরিফিন শুভ–মাহিয়া মাহির ‘টুপটাপ’সহ একাধিক তারকার গানে নৃত্য পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন। ইমন রহমান বলেন, ‘“বিশ্বসুন্দরী” সিনেমায় যখন কাজের প্রস্তাব পায়, দেখতাম খুশি ভাই। তার সব সময় চেষ্টা থাকত, কীভাবে সেরা কাজটি দেওয়া যায়। ভালো করার তাড়না সব সময় তার মধ্যে ছিল। পড়াশোনায় যেমন সিরিয়াস ছিল, তেমনি কাজেও। তার সব সময় ক্লাসে রোল নম্বর ছিল দুই। তখন দেখতাম, মা ভাইয়াকে নিয়ে অনেক গর্ব করতেন, আত্মীয়স্বজনদের দাওয়াত করেও খাওয়াতেন। এবারও হয়তো তা–ই করতেন। অথচ তার কাজের স্বীকৃতি আজ আমাদের পরিবারকে নীরবে কাঁদাচ্ছে। সবাইকে বলব, ভাইয়ার জন্য দোয়া করবেন।’

জাতীয় চলচ্চিত্র অনুষ্ঠানে ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী (ডানে) সঙ্গে সুমনের মা রহিমা রহমান

সহিদুর রহমান গত বছর হঠাৎ খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা যান। সেদিন সন্ধ্যার দিকে বাসায় ফিরে অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরিবারের সবাই বলেছিলেন চিকিৎসক দেখাতে। কিন্তু সহিদুর ভেবেছিলেন তিনি সুস্থ হয়ে যাবেন। রাতে তাঁর শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হওয়ায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। পরিবার নিয়ে সহিদুর মিরপুরে থাকতেন। ‘বিশ্বসুন্দরী’ সিনেমার পরিচালক চয়নিকা চৌধুরী বলেন, ‘আমরা এখনো মানতেই পারি না, তিনি নেই। তিনি অনেক যত্নে কাজ করতেন। এই জায়গাটায় একটা শূন্যতা তৈরি হয়েছে।’

নৃত্য পরিচালক হিসেবে সুমন ‘ঢাকা অ্যাটাক’,‘ছায়াছবি’, ‘তারকাঁটা’,‘নবাব এলএল.বি’সহ অনেক সিনেমায় কাজ করেছেন। তিনি ক্রিয়েটিভ ডিরেক্টর হিসেবে ‘ঈগল ডান্স কোম্পানি’র সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ২০২১ সালের ৩০ জানুয়ারি সুমন মারা যান। এই বছর জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে বিশ্বসুন্দরী সিনেমার জন্য সেরা অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন সিয়াম আহমেদ। তিনি তার পুরস্কারটি সুমনকে উৎসর্গ করেন।

পুরস্কার হাতে সিয়াম