পরীমনি গতকাল রোববার রাতে সংবাদ সম্মেলনে বারবারই বলছিলেন, নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন তিনি। তাঁর আশঙ্কা, তাঁকে মেরে ফেলা হতে পারে। এসব বলেই হাউমাউ করে কাঁদতে থাকেন হালের আলোচিত নায়িকা পরীমনি।
সংবাদ সম্মেলনের পুরোটা সময় পরীমনির বাসায় ছিলেন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নূরে আজম মিয়া। আজ সোমবার সকালে প্রথম আলোকে বলেন, ‘তিনি যেহেতু নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, আমাদের দায়িত্ব প্রত্যেক নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। তাঁকে আমরা বিশেষ প্রহরায় রাখছি। তাঁর বাসা ও আশপাশে পুলিশ আছে। তাঁর নিরাপত্তার জন্য যা যা করণীয়, তা–ই করা হচ্ছে।’
আজ সরেজমিনে পরীমনির বাসায় দেখা যায়, এক ভ্যান পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
এদিকে পরীমনির বাসায় অবস্থানরত তাঁর মামা আশরাফুল ইসলাম বলেন, ‘তিন থানাতেই আমরা লিখিত অভিযোগ করেছি। কিন্তু কোন থানা সেটা গ্রহণ করেছে, তা এখনো জানি না। পরীমনি অসুস্থ। তার জ্বর ও বুকে ব্যথা। গলার স্বরও ভেঙে গেছে।’
গতকাল রাতে বনানীর বাসায় সংবাদ সম্মেলনে পরীমনি বলেন, যেদিন রাতে তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়, সেদিনই ভোরে অভিযোগ জানাতে তিনি বনানী থানায় হাজির হন। কিন্তু ওই মুহূর্তে থানা পরীমনির অভিযোগ না নিয়ে পুলিশ প্রহরায় বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিছুক্ষণ পর পরীমনি ভয়ে চিকিৎসা না নিয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় চলে আসেন। এরপর চার দিন ধরে চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতিসহ নানা জায়গায় ধরনা দিয়ে কারও কোনো সহযোগিতা না পেয়ে নিজের কোটি অনুসারীর ফেসবুক পেজ থেকে পোস্ট দিয়ে জানান, তাঁকে ধর্ষণ ও হত্যাচেষ্টা করা হয়েছে।
‘আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে’—নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করেছেন ঢালিউডের আলোচিত নায়িকা পরীমনি। গতকাল সন্ধ্যা ৭টা ৫৩ মিনিটে ফেসবুক পোস্টে এ অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার দাবি করেছেন তিনি।
পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছি। আমাকে রেপ এবং হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। আমি এর বিচার চাই। এই বিচার কোথায় চাইব? কে করবে সঠিক বিচার?’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মা’ সম্বোধন করে পরীমনি লিখেছেন, ‘চার দিন ধরে থানা থেকে শুরু করে আমাদের চলচ্চিত্র বন্ধুদের কাউকে পাই না, মা। যাদেরকে পেয়েছি, সবাই বিস্তারিত ঘটনা জেনে “দেখছি” বলে চুপ হয়ে যায়!’
কোথাও প্রতিকার না পেয়ে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমি চুপ করে থাকতে পারি না। আজ আমার সঙ্গে যা হয়েছে, তা যদি “আমি মেয়ে”, “লোকে কী বলবে” এই গিলানো বাক্য মেনে নিয়ে চুপ হয়ে যাই, তাহলে অনেকের মতো আমিও কেবল তাদের দল ভারী করতে চলেছি হয়তো। আফসোস ছাড়া কারও কী করার থাকবে তখন! আমি তাদের মতো কি চুপ করে থাকতে পারি, মা? আমি তো আপনাকে দেখিনি চুপ থেকে কোনো অন্যায় মেনে নিতে!’
শৈশবে মা হারানোর ঘটনা উল্লেখ করে পরীমনি লিখেছেন, ‘আমার মা যখন মারা যান, তখন আমার বয়স আড়াই বছর। এত দিনে কখনো আমার একমুহূর্ত মাকে খুব দরকার মনে হয়নি। আজ মনে হচ্ছে, ভীষণ রকম মনে হচ্ছে, মাকে দরকার, একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরার জন্য দরকার। আমার আপনাকে দরকার, মা। আমার এখন বেঁচে থাকার জন্য আপনাকে দরকার, মা। মা, আমি বাঁচতে চাই। আমাকে বাঁচিয়ে নাও, মা।’