প্রবীণ এই অভিনেতার সঙ্গে চিত্রনায়িকা ববিতার ছিল বহু বছরের সখ্য
প্রবীণ এই অভিনেতার সঙ্গে চিত্রনায়িকা ববিতার ছিল বহু বছরের সখ্য

‘পুতুল খেলার বয়স থেকেই তাঁর সঙ্গে সম্পর্ক’

শনিবার সকাল আটটায় হঠাৎ পরিবার, আত্মীয় এবং অসংখ্য ভক্তকে রেখে না–ফেরার দেশে চলে গেলেন অভিনেতা এ টি এম শামসুজ্জামান। প্রবীণ এই অভিনেতার সঙ্গে চিত্রনায়িকা ববিতার ছিল বহু বছরের সখ্য। পুরান ঢাকার গেন্ডারিয়ায় থাকতেই ববিতার পরিবারের সঙ্গে এ টি এম শামসুজ্জামানের সম্পর্ক।

এ টি এম শামসুজ্জামান

মৃত্যুর পরপরই এ টি এম শামসুজ্জামানের দীর্ঘদিনের সহশিল্পীদের মধ্যে খবরটি ছড়িয়ে পড়ে। এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে অসংখ্য চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ববিতা। অভিনয়ের বাইরেও ববিতাকে বেশ স্নেহ করতেন এই অভিনেতা। মৃত্যুর খবরটি শুনে মন খারাপ হয়ে যায় এই অভিনেত্রীর। প্রথম আলোর কাছে এ টি এম শামসুজ্জামানকে নিয়ে স্মৃতিচারণা করলেন ববিতা।

ববিতা বলেন, ‘ খবর পেয়েই তাঁর মেয়েসহ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেছি। মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে। দুই বছর আগে হাসপাতালে দেখা হয়েছিল। শেষ দেখা আর হলো না।’

এ টি এম শামসুজ্জামান

স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন এই অভিনেত্রী। শৈশবের সেই দিনগুলোয় ফিরে যান তিনি। ববিতা জানান, শৈশব থেকেই এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর পরিচয়, সম্পর্ক। সেই সময় থেকে দুই পরিবারের সম্পর্ক এখনো অটুট আছে। ববিতা বলেন, ‘পুতুল খেলার বয়স থেকেই তাঁর সঙ্গে আমার সম্পর্ক। আমার বড় বোন সুচন্দা সবে নারায়ণ ঘোষ মিতার “চাওয়া থেকে পাওয়া”সহ দু-তিনটি ছবিতে কাজ করেছেন। ওই সময় তিনি আমাদের গেন্ডারিয়ার বাসায় প্রায়ই আসতেন। তখনো তিনি ছবিতে অভিনয় শুরু করেননি। ছবির চিত্রনাট্য ও সংলাপ সুচন্দা আপাকে বোঝাতে আসতেন। সেই সুবাদে আমার মা–বাবার সঙ্গেও তাঁর দারুণ খাতির ছিল। আমাদের বাড়িতে এলে প্রায়ই বলতেন, ববিতা, তুমি সিনেমাতে অভিনয় করবে? এ কথা শুনে কখনো কখনো আমি দৌড়ে পালিয়ে যেতাম। আমাকে খুব স্নেহ করতেন।’

একসময় বড় বোনের পথ ধরে একদিন তিনিও অভিনয়ে নামেন। এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে অসংখ্য বিখ্যাত ছবিতে অভিনয় করছেন বলে জানান ববিতা। এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে তাঁর প্রথম অভিনীত ছবি ছিল ‘নয়ন মনি’।

ববিতা বলেন, ‘যদি ভুল না হয়, যত দূর মনে পড়ে, তাঁর সঙ্গে আমার প্রথম ছবি “নয়ন মনি”। এরপর “লাঠিয়াল”, “গোলাপী এখন ট্রেনে”, “ম্যাডাম ফুলি”সহ অনেক ছবিতে কাজ করেছি তাঁর সঙ্গে।’

ববিতা

ববিতা জানান, নানা গুণে গুণান্বিত ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। তাঁর একটা চমৎকার গুণ ছিল। যখন কোনো ছবিতে অভিনয় করতেন, তখন শুধু তাঁর নিজের জন্য ভাবতেন না। ছবিতে সবার কাজ নিয়েই ভাবতেন। শট নেওয়ার সময় অন্যদের ভুলত্রুটি ধরিয়ে দিতেন। ববিতা বলেন, ‘শুটিংয়ের সময় দেখতাম, তাঁর দৃশ্য শেষ হলে ক্যামেরার পেছনে দাঁড়িয়ে অন্যদের অভিনয় দেখতেন। ভুলত্রুটি হলে ধরিয়ে দিতেন। ছবির সেটে সব সময়ই শট দেওয়ার পর ঠিকঠাক হলো কি না—তাঁর কাছে জানতে চাইতাম। কোনো কোনো সময় কী করে আরও ভালো সংলাপ দিতে হবে, তা কী যে সুন্দর করে বুঝিয়ে দিতেন! চলচ্চিত্রের ভাষা সম্পর্কে তাঁর জ্ঞানের গভীরতা ছিল অত্যধিক।’

ববিতার আস্থার জায়গা ছিলেন এ টি এম শামসুজ্জামান। রাগ কিংবা অভিমান হলে মনের কথাগুলো একমাত্র এ টি এম শামসুজ্জামানের কাছেই বলতেন। সেসব দিনের কথা স্মরণ করে এই অভিনেত্রী বলেন, ‘অনেক সময় আমি যেসব কথা কাউকে বলতে চাইতাম না, সেগুলো এ টি এম ভাইয়ের কাছে বলতাম। তিনি ছিলেন আমার আস্থার মানুষ। আমার কথাগুলো শুনে তিনি প্রায় আমাকে বলতেন, তুমি এত সুন্দর করে সত্য কথাগুলো কীভাবে বলো!’

ববিতা আরও বলেন, ‘এত দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো দুই পরিবারের সম্পর্কটা রয়ে গেছে। আমি এ টি এম ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতেও গিয়েছি। গেন্ডারিয়া থেকে অনেক আগেই গুলশানে চলে এসেছি আমরা। অনেক দূর হলেও কষ্ট করে পুরান ঢাকা থেকে আমাদের পারিবারিক সব অনুষ্ঠানে তিনি আসতেন।’

এ টি এম শামসুজ্জামান

বছর দুয়েক আগে হাসপাতালে এ টি এম শামসুজ্জামানের সঙ্গে ববিতার শেষ দেখা হয়। ববিতা বলেন, ‘বছর দুয়েক আগের কথা। এ টি এম ভাই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ছিলেন। সেই সময় আমি, চম্পা ও সুচন্দা আপা—তিন বোন মিলে তাঁকে দেখতে গিয়েছিলাম। আমাদের কাছে পেয়ে দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা গল্প করেছিলেন তিনি। রাজ্যের সব গল্প যেন হাসপাতালে হাজির হয়েছিল সেদিন। সেই ছিল শেষ দেখা। খারাপ লাগছে, মৃত্যুর আগে আর দেখা হলো না। তিনি একজন অপূর্ব, অসাধারণ গুণী মানুষ ছিলেন।’