পর্নোগ্রাফি আইনে নির্মাতা-অভিনেতার গ্রেপ্তারে চলচ্চিত্র সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধা। ছবি : সংগৃহীত
পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধা। ছবি : সংগৃহীত

সম্প্রতি পর্নোগ্রাফি আইনে একজন নির্মাতা ও অভিনেতাকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় চলচ্চিত্র সমাজে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একপক্ষ বলছে, এটা শিল্প ও শিল্পীর স্বাধীনতার ওপর সরাসরি আঘাত। অন্যপক্ষ অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহারের দায়ে নির্মাতাকে দুষছে।
গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় আটক হয়েছেন নির্মাতা অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধা। তাঁরা দুজন এখন কারাগারে। সম্প্রতি ‘নবাব এলএলবি’ ছবির একটি দৃশ্যকে আপত্তিকর মনে করে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করে।
নির্মাতা অমিতাভ রেজা বলেন, একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা গ্রেপ্তার হওয়ার মতো ঘটনা খুবই দুঃখজনক। এটি ফিকশন (কাহিনিচিত্র)। এখানে অনেক কিছুই থাকবে। তিনি বলেন, ‘একজন নির্মাতাকে গ্রেপ্তার আমাদের জন্য দুঃখজনক। এ ধরনের ঘটনায় অন্য নির্মাতারা ভয় পাবেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পুলিশকে ব্যবহার করা হয়। আমি জানি, এটা একটা ভাবমূর্তির ব্যাপার। কিন্তু ফিকশনকে বিশ্বাস করার মতো কিছু নেই। তবে আরও সচেতন হয়ে নির্মাতাদের কাজ করতে হবে।’

অমিতাভ রেজা

অন্যদিকে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার এ ঘটনায় নির্মাতাকেই দায়ী করছেন।

দেশের একটি চলচ্চিত্রে ‘কুরুচিপূর্ণ সংলাপ’ আসার ঘটনায় তিনি বিস্মিত। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া সেই দৃশ্য তিনি দেখেছেন। তিনি বলেন, দৃশ্যটির ভাষা ও শব্দ দেখে মনে হয়েছে, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে করা। সেখানে বারবার অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ শব্দ ব্যবহার করা হচ্ছিল, যা মুখে আনা যায় না। এর দায় নির্মাতাকে নিতে হবে।

মুশফিকুর রহমান গুলজার

ধর্ষণের শিকার হয়ে কোনো নারী পুলিশের কাছে গিয়ে আবার সেখানে ধর্ষণের শিকার হয়েছে, বাংলাদেশি বিভিন্ন ছবির গল্পে আগে এমন দৃশ্য দেখা গেছে। এ প্রসঙ্গে মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘সেটা কোনো একটা ঘটনা হতে পারে। “নবাব এলএলবি” ছবির বিষয়বস্তুতে আমাদের আপত্তি নেই, কিন্তু রুচিহীনতায় আমাদের আপত্তি।’
এই ঘটনায় একজন অভিনেতাও গ্রেপ্তার হয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন নাটক ও চলচ্চিত্রের অভিনয়শিল্পী বলেন, এ ধরনের ঘটনায় শিল্পীরা সামাজিকভাবে যেমন হেয় হবেন, তেমনি অনেকে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবেন। অশ্লীল কোনো বিষয় তাঁরাও চান না পর্দায় আনতে। কিন্তু এখানে যে পর্নোগ্রাফি আইনের কথা তোলা হয়েছে, সেটার সঙ্গে অভিনয়শিল্পী কতটা জড়িত, সেটা গ্রেপ্তারের আগে বিবেচনা করা দরকার ছিল। তাঁর মত, একজন অভিনেতার কাজ অভিনয় করে যাওয়া। সেখানে নির্মাতাদের চাহিদা পূরণে অভিনেতারা বিভিন্ন সংলাপ বলেন। সাধারণত সংলাপে কুরুচিপূর্ণ কিছু থাকলে সেটি সম্পাদনা করে ‘মিউট’ করে দেওয়া হয়। নির্মাতা সেটি না করলে অভিনেতার কী করার থাকে?

এই অভিনেতা বলেন, একটি সিনেমার কারণে যদি অভিনেতাদের জেলে যেতে হয়, তাহলে এটা শিল্পের স্বাধীনতার জন্য হুমকি। এটা একটি কল্পকাহিনি। সেটা বিবেচনা করে সবার সহযোগিতা দরকার।

শাকিব, মাহি ও স্পর্শিয়া নবাব এল এল বি ছবিতে অভিনয় করেছেন

আইনগত প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে মামলাটি নিয়ে লড়তে চান নির্মাতা অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধার আইনজীবী আশফাক আবির হাসিব। শিগগির তিনি দুজনের জামিনের জন্য আবেদন করবেন। প্রথম আলোকে আশফাক হাসিব বলেন, সিনেমা একটি কল্পিত জগৎ। একজন নারী ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর তাঁকে কতটা সাহসী হতে হয়, সেই প্রেক্ষাপট ও বাস্তবতাই এই সিনেমার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে। এর আগেও গল্পে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু সে রকম কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখেননি।
এই আইনজীবী মনে করেন, পর্নোগ্রাফি আইন, ২০১২-তে পর্নোগ্রাফি নিয়ে যে কথাগুলো বলা হয়েছে, সে রকম কোনো অপরাধের মধ্যে নির্মাতা ও অভিনেতা পড়বেন না। তাঁরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় এগোবেন। বিজ্ঞ আদালতের প্রতি তাঁদের শ্রদ্ধা আছে।