পর্নোগ্রাফি আইনে আটক নির্মাতা সমিতি থেকে আজীবন নিষিদ্ধ হতে পারেন

গত ২৪ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার দিকে আটক হন অনন্য মামুন
ছবি : সংগৃহীত

‘অশ্লীল’ ও ‘কুরুচিপূর্ণ’ শব্দ ব্যবহারের দায়ে নির্মাতা অনন্য মামুনের পরিচালক সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত হয়েছে। বাংলাদেশ পরিচালক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, তাঁকে আজীবন সমিতির সদস্যপদ থেকে বহিষ্কারের কথা ভাবছেন বর্তমান কমিটির সদস্যরা। আগামী সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেবেন তাঁরা। পর্নোগ্রাফি আইনের মামলায় আটক অনন্য মামুন বর্তমানে কারাগারে বন্দী।  

সম্প্রতি ‘নবাব এলএলবি’ ছবির একটি দৃশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। সেই দৃশ্যে পুলিশকে ‘হেয়’ করার অভিযোগ এনে পুলিশ বাদী হয়ে পর্নোগ্রাফি আইনে মামলা করে। সেই মামলায় পরিচালক অনন্য মামুন গ্রেপ্তার হন। দৃশ্যে অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করায় মামলাটিকে যুক্তিসংগত মনে করছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার জানান, সমিতির গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাঁরা সংগঠন থেকে অনন্য মামুনের সদস্যপদ সাময়িক স্থগিত করেছেন।  ১৬ জানুয়ারি পরিচালক সমিতির সাধারণ সভা। সে সময় সমিতির কার্যনির্বাহী কমিটির মিটিংয়ে সবার সম্মতিতে আরও বড় ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে বলে জানান গুলজার।

একজন সদস্যের পাশে না দাঁড়িয়ে উল্টো তাঁর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কারণ হিসেবে গুলজার বলেন, ‘“নবাব এলএলবি” ছবিতে অশ্লীল যে সংলাপ ব্যবহার করা হয়েছে, সেটা আমাদের গঠনতন্ত্রবিরোধী। আমরা যে ফুটেজ দেখেছি, সেটা আমাদের কাছে চরম অশ্লীল মনে হয়েছে, যা আমাদের পরিচালক সমিতি ও সদস্যদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। যে কারণে আমাদের ধারা মোতাবেক পরিচালক অনন্য মামুনের সদস্যপদ বাতিল হয়েছে।’

নির্মাতা অনন্য মামুন

চলচ্চিত্র সমিতির একজন নেতা নাম প্রকাশ না করা শর্তে জানান, বিভিন্ন কারণে নির্মাতা অনন্য মামুনের বিরুদ্ধে তাঁরা কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছেন। এর আগে অনন্য মামুনের নামে মানব পাচারের অভিযোগ ছিল। মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরে ‘সিনেমাটিক বাংলাদেশি নাইটস’ নামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার হয়েছিলেন মামুন। সে সময় মামুনের কারণে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বর্তমানে তিনি যে অশ্লীলতার আশ্রয় নিয়েছেন, সেখানে পরিচালকদের ছোট করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘বেশির ভাগ নির্মাতা অনন্য মামুনের কার্যকলাপের বিরোধী। কারণ, তিনি বিভিন্ন সময় দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছেন। তাঁর আচার-আচরণগত বিভিন্ন সমস্যা আছে। ১৬ জানুয়ারির সভায় তাঁকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হতে পারে।’

পরিচালক অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধা।

অনন্য মামুন ও অভিনেতা শাহীন মৃধাকে গত ২৪ ডিসেম্বর রাত আড়াইটার দিকে আটক করে ডিবি পুলিশ। পরে তাঁদের পর্নোগ্রাফি মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। দুজনই এখন হাজতে আছেন। ‘নবাব এলএলবি’ চলচ্চিত্রটি কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে। অশ্লীলতার অভিযোগ আনা সেই দৃশ্যটিতে দেখা যায়, ধর্ষণের শিকার এক নারী থানায় মামলা করার জন্য আসেন। ওই দৃশ্যে পুলিশের এক এসআই (অভিনয় করেছেন শাহীন মৃধা) ওই নারীকে ধর্ষণ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন। এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে পুলিশ।
‘নবাব এলএলবি’ চলচ্চিত্রটি ১৬ ডিসেম্বর ‘আই থিয়েটার’ নামের একটি অ্যাপে মুক্তি পায়। ওই দিন সিনেমাটির অর্ধেক অংশ মুক্তি দেওয়া হয়েছে। বাকি অর্ধেক ছবি ১ জানুয়ারি মুক্তি পেয়েছে। চিত্রনাট্য লেখক হিসেবে অনন্য মামুন ২০০০ সালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। ২০১২ সালে তিনি তাঁর প্রথম চলচ্চিত্র ‘মোস্ট ওয়েলকাম’ পরিচালনা করেন। এ ছাড়া তাঁর উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্র ‘আমি শুধু চেয়েছি তোমায়’, ‘অস্তিত্ব’, ‘তুই শুধু আমার’, ‘আমি তোমার হতে চাই’, ‘ভালোবাসার গল্প’, ‘আবার বসন্ত’ ও ‘বন্ধন’। এর আগে ২০১৮ সালেও অনুষ্ঠান আয়োজনের আড়ালে মানব পাচারের অভিযোগে মালয়েশিয়া পুলিশের হাতে আটক হয়েছিলেন নির্মাতা অনন্য মামুন।