পরীমনি বললেন, 'ওরা চাকরিজীবী নায়িকা'

পরীমনি, মাহিয়া মাহী, নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরি
পরীমনি, মাহিয়া মাহী, নুসরাত ফারিয়া, পূজা চেরি

ঈদে কোনো ছবি মুক্তি না পেলেও ছোট পর্দায় কয়েকটি অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে হাজির হন এ সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। অভিনয়শিল্পী ও উপস্থাপক শাহরিয়ার নাজিম জয়ের অনুষ্ঠান ‘সেন্স অব হিউমার’-এ অতিথি হয়ে এসে রীতিমতো বোমা ফাটালেন। উপস্থাপকের এক প্রশ্নের জবাবে প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান জাজ মাল্টিমিডিয়ার ব্যানারে কাজ করা নায়িকাদের ‘চাকরিজীবী নায়িকা’ বলে মন্তব্য করেন।

পাঁচ বছর আগে ছবি প্রযোজনায় আসে জাজ মাল্টিমিডিয়া। এই প্রতিষ্ঠানের প্রথম ছবি ‘ভালোবাসার রং’ দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক হয় মাহিয়া মাহী ও বাপ্পীর। এই জুটি একসঙ্গে আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করে। এরপর এই প্রতিষ্ঠানের ছবিতে অভিনয় করে আলোচিত হন নুসরাত ফারিয়া, শিপন মিত্র, জলি এবং সর্বশেষ পূজা চেরি ও সিয়াম। প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাঁরা নিয়ম মেনে কাজ করছেন, তাঁদের ‘চাকরিজীবী নায়ক-নায়িকা’ই মনে করেন পরীমনি।

পরীমনি বলেন, ‘এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন তাঁরা সবাই অবশ্যই চাকরিজীবী নায়ক-নায়িকা। কারণ একজন নায়ক-নায়িকা তাঁর নিজস্ব পছন্দ এবং গতিধারায় থাকবেন। কোন ছবি করবেন, কোনটি করবেন না, তা একটা প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে কেন করতে হবে! শিল্পীসত্তার স্বাধীনতা জাজ মাল্টিমিডিয়ার চাকরিজীবী নায়ক-নায়িকাদের নেই।’

পরীমনি আরও বলেন, ‘আমি জাজ মাল্টিমিডিয়ার সঙ্গে কাজ করছি, দেখা গেল এমন সময় সেলিম ভাই (গিয়াসউদ্দীন সেলিম) একটা ছবি নিয়ে কথা বলতে চাইলেন। কিন্তু আমি অনুমতি ছাড়া ওই ছবির ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারব না। এমনটা হয়েছে বলেই বলছি।’

‘ভালোবাসা সীমাহীন’ ছবি দিয়ে ঢালিউডে অভিষেক হয় পরীমনির। এরপর জাজ মাল্টিমিডিয়ার ‘রক্ত’ ছবিতে কাজ করেন। এই ছবির জন্য দুই বছর অন্য কোনো প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবিতে কাজ করতে পারেননি। পরীমনি বলেন, ‘জাজে যাঁরা কাজ করেন, তাঁরা চাকরিজীবী নায়ক-নায়িকা। আমি দুই বছর এই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করেছি। আমার স্বাধীনতা বলতে কিছুই ছিল না। আমি যখন কাজ করেছি, তখন নিজেকে চাকরিজীবী নায়িকা মনে করেছি। প্রতি মুহূর্তে আমি তা অনুভব করেছি। সবকিছু এই প্রতিষ্ঠানের অনুমতি নিয়ে করতে হয়। এটা আমার জন্য খুব কষ্টের অভিজ্ঞতা। কারণ, আমি খুব স্বাধীনচেতা একজন মানুষ। ধরেবেঁধে কোনো কাজ আমাকে দিয়ে করানো সম্ভব না। বাধ্য হয়ে কোনো কাজ করতে আমি কখনোই রাজি না।’

বাধ্য হওয়ার প্রসঙ্গ আসছে কেন? উপস্থাপকের এমন প্রশ্নে পরীমনি বলেন, ‘বাধ্য হয়ে তো অবশ্যই। এই যেমন আমাকে বলা হয়েছিল, এই ছয় মাসের মধ্যে প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে দৌড়াতে হবে। এই এই খাবার খেতে হবে। এসব আমাকে করানো হয়েছিল। তবে ফাইনালি আমার জন্য ব্যাপারটা ভালো হয়েছিল। আমি যে অ্যাকশনধর্মী ছবি করতে পারি, মারামারি করতে পারি, তা “রক্ত” সিনেমায় দর্শক টের পেয়েছেন।’

জাজ মাল্টিমিডিয়ার নায়িকা হলে কোনো কথা বলা যায় না। কিন্তু তিনি এসব মানতেন না বলেই নাকি প্রতিষ্ঠানটির সঙ্গে নিয়মিত কাজ করতে পারেননি। পরীমনি বললেন, ‘ওই ঘরের নায়িকা হলে কোনো রিঅ্যাক্ট করা যাবে না। আমি রিঅ্যাক্ট করেছিলাম বলে ওই ঘরের নায়িকা হতে পারি না। “রক্ত” ছবিটি করার সময় আমি মানসিকভাবে ডিস্টার্ব ছিলাম। দেখা যেত, দৃশ্য আর গানের শুটিংয়ে সময় বেঁধে দেওয়া হতো, এই সময়ের মধ্যে গান ও দৃশ্যের শুটিং হলে হবে, তা-না হলে গান ও দৃশ্য বাদ। এই কথাটা শোনা একজন শিল্পীর জন্য খুবই কষ্টের!’

তিন বছর আগে বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে খুব সম্ভাবনাময় নায়িকা হিসেবে অভিষেক ঘটে পরীমনির। সৌন্দর্য, নাচ আর অভিনয় পারদর্শিতার কারণে পরীমনিকে নিয়ে একাধিক চলচ্চিত্র পরিচালক ও প্রযোজক বলেছিলেন, নিজের দিকে একটু মনোযোগী হলেই পরীমনি বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের সবচেয়ে জনপ্রিয় নায়িকা হতে পারবেন। কিন্তু মনের মতো গল্প আর পরিচালক না পাওয়ায় নিজেকে কাজ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছেন পরীমনি। কয়েক বছরের অভিনয়জীবনে এই পর্যন্ত ১৩টি ছবি মুক্তি পেলেও মাত্র দুটি ছবিকে নিজের ছবি বলতে ভালোবাসেন এই নায়িকা। ছবি দুটি হচ্ছে মালেক আফসারীর ‘অন্তর জ্বালা’ আর গিয়াসউদ্দীন সেলিমের ‘স্বপ্নজাল’। বললেন, ‘কারণ এই দুটি ছবিতে আমি চরিত্র হয়ে উঠতে পেরেছি, যেমনটা আসলে আমি চাই।’