মোটেও ভালো কাটেনি গত বছরটা; না বাংলা চলচ্চিত্র, না চলচ্চিত্রের নায়কদের। বর্তমান সময়ে ঢাকাই ছবির নিয়মিত নায়কেরা হলেন শাকিব খান, আরিফিন শুভ, সিয়াম, রোশান, তাসকিন, ইমন, বাপ্পী, সাইমন, নিরবসহ বেশ কয়েকজন। বছরজুড়ে ঢাকাই ছবির এই নায়কদের দু-একজন ছাড়া বেশির ভাগেরই কাজের পরিমাণ ছিল হাতে গোনা। কারও আবার শূন্যের কোঠায়। বিষয়টি নিয়ে এই নায়কেরা ঢাকাই চলচ্চিত্রের মন্দা অবস্থাকে দায়ী করেছেন। তাঁরা বলছেন, ঢাকার চলচ্চিত্রে ছবির সংখ্যা যেমন কমেছে, ছবির মানও কমেছে। পেশাদার প্রযোজক ও ভালো মানের পরিচালকেরা বসে থাকার কারণে কোনো কোনো নায়ক কাজের প্রস্তাব পাওয়ার পরও মানের ভয়ে সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়েছেন।
২০১৯ সালে ঢাকাই ছবির শীর্ষ নায়ক শাকিব খানের মাত্র তিনটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ‘বীর’ ও ‘আগুন’ নামে দুটি ছবির শুটিং চলছে। শীর্ষ নায়ক হিসেবে বছরজুড়ে কাজের পরিমাণ কমই ছিল তাঁর হাতে। বিগত বছরের কাজের পরিমাণ নিয়ে খুশি নন শাকিব খান। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালটা সিনেমার জন্য দুর্যোগ গেছে। আমার নিজেরও কাজের কিছু সমস্যা গেছে। গুছিয়ে কাজ করতে পারিনি। এ কারণে কাজের পরিমাণও কম ছিল। নতুন বছরে তা কাটিয়ে উঠতে পারব বলে আশা করছি।’ কাজের পরিমাণ আশানুরূপ না হলেও ২০১৯ সালে শাকিব খানের ‘পাসওয়ার্ড’ ছবিটি মুক্তিপ্রাপ্ত সব ছবিকে পেছনে ফেলে একাই রাজত্ব করেছে।
আরিফিন শুভর মাত্র একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। ছবির নাম ‘সাপলুডু’। ছবিটি দেশ-বিদেশে মুক্তি পেলেও ব্যবসা হয়নি। এর বাইরে সারা বছরে ‘মিশন এক্সট্রিম’ নামে মাত্র একটি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন। ছবিটির শুটিং শেষ। তবে এই ‘মিশন এক্সট্রিম’ ২০২০ সালে সাড়া ফেলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইমনের মুক্তি পেয়েছে ‘পাসওয়ার্ড’, ‘আকাশ মহল’, ‘বেগমজান’ নামের তিনটি ছবি। ২০১৯ সালে ‘আগামীকাল’ নামের একটি ছবির শুটিং শেষ। ‘সাহসী যোদ্ধা’ নামে আরেকটি ছবির শুটিং চলছে। পাশাপাশি ‘আকবর—ওয়ানস আপন আ টাইম ইন ঢাকা’ ও ‘কানামাছি ও কাপতান’ নামে আরও দুটি ছবিতে চুক্তি হয়েছেন। এ ব্যাপারে ইমন বলেন, ‘ছবির বাজারই তো মন্দ। এই মন্দার মধ্যেও এই কাজগুলো করতে পেরেছি। এটাই কম কী।’
বাপ্পী চৌধুরীরও মুক্তি পেয়েছে তিনটি ছবি। ছবিগুলো হলো ‘দাগ হৃদয়ে’, ‘ডনগিরি’ ও ‘পাগলামি’। শুটিং চলছে ‘ঢাকা ২০৪০’ ও ‘শ্বশুরবাড়ি জিন্দাবাদ ২’ নামে দুটি ছবির। চুক্তি হয়েছেন ‘সিক্রেট এজেন্ট’ এবং রুম্মান রুনী ও আশরাফ শিশিরের নাম ঠিক না হওয়া দুটি ছবিতে।
এবার শূন্য হাতে বছর পার করলেন সাইমন সাদিক। ২০১৯ সালে কোনো ছবি মুক্তি পায়নি। এমনকি কোনো ছবি চুক্তিও করেননি তিনি। সাইমন বলেন, ‘অন্তত ১০টি ছবি ছেড়ে দিয়েছি। গল্প ও পরিচালক পছন্দ হয়নি। চলচ্চিত্রের ক্যারিয়ারে বেশ কিছু খারাপ ছবিতে কাজ করেছি। পুরোই ফ্লপ গেছে ছবিগুলো। ক্যারিয়ারের ক্ষতি হয়েছে। এ জন্য ভালো গল্প, ভালো পরিচালক ছাড়া আর কোনোইভাবে কাজ করতে চাই না। প্রয়োজনে বছরে দু–তিনটি কাজ করব, তাও ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবে—এমন ছবিতে কাজ করব না।’
নায়ক নিরবের মুক্তি পেয়েছে দুটি ছবি—‘আব্বাস’ ও ‘রাঙা মন’। ‘ক্যাসিনো’ ও ‘অফিসার্স রিটার্ন’ নামে দুটি ছবির শুটিং চলছে। রোশানের ‘বেপরোয়া’ নামে একটি ছবি মুক্তি পেয়েছে। শুটিং শেষ হয়েছে ‘জিন’ ও ‘মেকআপ’ নামে দুটি ছবির। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ ও ‘ওস্তাদ’ নামে দুটি ছবির শুটিং চলছে। চুক্তিবদ্ধ আছেন ‘সাইকো’ নামের আরেকটি ছবিতে। চলতি বছরটা তাঁর ক্যারিয়ারে জন্য কেমন গেল? জানতে চাইলে রোশান বলেন, ‘আমি মনে করি, চলচ্চিত্রের এই দুর্দিনের মধ্যেও বছরটা আমার জন্য ভালো গেছে। বর্তমান দুটি ছবির কাজ শেষ করেছি, দুটির শুটিং চলছে। আরেকটিতে চুক্তিদ্ধ হয়েছি। আগামী মাসের শুটিং। কাজ নিয়ে আমি খুশি।’
২০১৯ সালে কাজ নিয়ে কিছুটা হলেও এগিয়ে আছেন সিয়াম আহমেদ ও তাসকিন রহমান। সিয়ামের কোনো ছবি ২০১৯-এ মুক্তি না পেলেও বড় বড় বাজেটের পাঁচটি ছবির শুটিং চলছে। ছবিগুলো হলো ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘বিশ্বসুন্দরী’, ‘ইত্তেফাক’, ‘পাপ–পুণ্য’ ও ‘শান’। এর মধ্যে ‘বিশ্বসুন্দরী’ ছবির শুটিং শেষ। ‘স্বপ্নবাজি’ নামে বড় বাজেটের আরেকটি ছবি ছবিতে ২০১৯ সালে চুক্তি করেছেন সিয়াম। আগামী ফেব্রুয়ারি থেকে শুটিং শুরু হবে। কাজ নিয়ে সিয়াম খুশি। তিনি বলেন, ‘পরপর এতগুলো বড় বাজেটের ছবিতে কাজ করছি। সবচেয়ে বড় কথা, একেকটি ছবির চরিত্র একেক রকম। একটির সঙ্গে আরেকটি কোনো মিল নেই। আমি এ ধরনের কাজই বিশ্বাসী। কারণ, দর্শকের ঠকাতে চাই না।’ তিনি আরও বলেন, ‘২০১৯ সালটা আমার জন্য খুবই ভালো গেল। চেষ্টা করছি ভালো করে কাজ করার। ছবির এই মন্দা দিনেও প্রযোজক ও পরিচালকেরা আমাকে নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের প্রত্যাশা পূরণের চেষ্টা করছি।’
২০১৯ সালে ‘বয়ফ্রেন্ড’ ও ‘যদি একদিন’ নামে দুটি ছবি মুক্তি পেয়েছে তাসকিনের। শুটিং শেষ হয়েছে ‘মিশন এক্সটিম’ ছবির। শুটিং চলছে ‘অপারেশন সুন্দরবন’, ‘শান’, ‘ওস্তাদ’, ‘ক্যাসিনো’—এই চারটি ছবির। ‘গিরগিটি’ নামে আরেকটি ছবিতে চুক্তি হয়েছেন। নতুন বছরে শুটিং শুরু হবে। তাসকিন বলেন, ‘২০১৯ সাল একটা চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে গেছে। প্রথম এতগুলো ছবির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। একসঙ্গে সব কটি ছবির শুটিং চলার কারণে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করেছি। কারণ, একটি চরিত্র থেকে বেরিয়ে আরেক চরিত্রে ঢুকে চরিত্র তুলে আনা সহজ না।’ খুব অল্প সময়ে কাজের ব্যস্ততা বাড়ায় খুশি তাসকিন।