চাপে পড়ে এক দিনের মাথায় বোল পাল্টাতে হলো পোশাক ব্যবসায়ী ও ঢালিউডের আলোচিত-সমালোচিত নায়ক অনন্ত জলিল। ধর্ষণে নারীর অশালীন পোশাককে দায়ী করে যে ভিডিও বার্তাটি প্রকাশ করেছিলেন, সেটি প্রত্যাহার করে সোমবার আরেকটি ভিডিও বার্তা দিয়েছেন তিনি। এই ভিডিও বার্তার ক্যাপশনে জলিল লিখেছেন, ‘ধর্ষণের জন্য নারীদের পোশাক না, পুরুষদের বিকৃত মানসিকতাই দায়ী।’ এক দিনের মাথায় এমন একটি ভিডিও বার্তা পোস্ট করার বিষয়কে অনেকে জলিলের কৌশল বলতে চাইছেন। তাঁদের মতে, আলোচনায় থাকার জন্য পরিকল্পিতভাবে এ ভিডিওগুলো আগেই বানিয়েছেন তিনি।
ধর্ষণে নারীর অশালীন পোশাক দায়ী, ফেসবুকে এই ধরনের কথা বলে ভিডিও বার্তা দেওয়ায় মন্তব্যের ঘর ভরে উঠেছিল ক্ষুব্ধ মন্তব্যে। সাধারণ ও বিনোদন অঙ্গনের মানুষের ক্ষোভের মুখে ফেসবুক ও ইউটিউব থেকে নিজের ওই ভিডিও সরিয়ে ফেলেন জলিল।
সোমবার সকালে পোস্ট করা ভিডিও বার্তায় জলিল বলেছেন, ‘আমি মেয়েদের সম্মান করি। শুধু মেয়েদের নয়, সারা দেশের মানুষকেই সম্মান করি। এটা মুখে বলার কথা নয়। ২০০৮ সাল থেকে আমি মিডিয়াতে আছি, অনন্ত জলিলের ক্যারেক্টার সবার জানা। মেয়েরা মায়ের জাত, তাঁদের সম্মান করি।
রবিবার সন্ধ্যায় আমি সবার সঙ্গে একটি ভিডিও শেয়ার করেছিলাম, সেই ভিডিওতে আমি সম্প্রতি ঘটে যাওয়া এবং বেড়ে চলা ধর্ষণের বিরুদ্ধে কিছু কথা বলেছিলাম। নারীরা কী করলে ধর্ষণের শিকার হবেন না, এটা নিয়েও কিছু মতামত ব্যক্ত করেছিলাম। পরবর্তী সময়ে নারীদের পোশাক নিয়ে বলা কথার অংশটুকু বাদ দিয়ে ভিডিও এডিট করে পুনরায় প্রকাশ করি।’
ধর্ষণকারীদের দৃষ্টান্তমূলক বিচারের দাবিতে সারা দেশ যখন সোচ্চার, ঠিক তখনই নারীর পোশাক নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে বসেন অনন্ত জলিল। নারীদের নিয়ে গতকাল জলিলের এমন মন্তব্যে চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেক পরিচালক ও অভিনয়শিল্পী ভীষণ ক্ষুব্ধ হয়েছেন। তারকাদের কেউ কেউ তাঁকে বয়কট করারও আহ্বান জানান।
গত রোববার পোস্ট করা ৬ মিনিট ১৭ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে জলিল বলেছিলেন, ‘অশালীন পোশাক ধর্ষণের কারণ’, ‘শালীন পোশাক পরা নারী কখনোই ধর্ষণের শিকার হন না’, ‘পোশাক ভালো না হলে নারীর ফিগার দেখে বাজে স্বভাবের লোকজন ধর্ষণে উসকানি পায়।’ গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে এ রকম বক্তব্যসংবলিত এক ভিডিও প্রকাশ করেছিলেন তিনি।
সেখানে তরুণীদের উদ্দেশে জলিল বলেছিলেন, ‘তোমাদের ভাই হিসেবে কিছু কথা বলতে চাই। নাটক, সিনেমা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম অনুসরণ করে অন্য দেশের মেয়েদের মতো মডার্ন হতে গিয়ে বিদেশি সংস্কৃতির পোশাক পরছ। এসব পোশাকের জন্য রাস্তার বখাটেরা তোমার চেহারার দিকে না তাকিয়ে তোমার শরীর ও ফিগারের দিকে নজর দেয়। তোমাদের পোশাক দেখেই তারা তোমাদের ফিগার নিয়ে নানা কথা বলে। আর তাদের মাথায় ধর্ষণের চিন্তা আসে।’
একই দিনে ক্ষমা চেয়ে দেওয়া পোস্টে অনন্ত জলিল লিখেছেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে দেশে ধর্ষণ, বিশেষ করে শিশু ধর্ষণ ও ধর্ষণ-পরবর্তী হত্যার মতো ঘৃণ্য অপরাধ বেড়েই চলেছে। এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত অপরাধীর দ্রুততম সময়ে বিচার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার বিকল্প নেই।’