২০১৬ সালে চলচ্চিত্র নির্মাতা আবু সাইয়ীদ গণ–অর্থায়নে নির্মাণ শুরু করেন ‘সংযোগ’ নামে একটি সিনেমা। সেই সময় ছবিটিতে অভিনয় করেন সৈয়দ শামসুল হক, ইনামুল হক, কে এস ফিরোজসহ আরও চারজন টেলিভিশন প্রতিবেদক। প্রথম ধাপ শুটিং করার পর তহবিল সমস্যাসহ কিছু কারণে ছবিটির শুটিং বন্ধ হয়ে যায় সে সময়। প্রায় ছয় বছর পর ছবির বাকি কাজের শুটিং শুরু হতে যাচ্ছে। চলতি মাসে বগুড়ার লোকেশনে শুরু হবে এই শুটিং। ছবির নতুন শিল্পী হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ছোট পর্দার অভিনেতা সজল ও নবাগত সায়মা স্মৃতি।
ছবির পরিচালক আবু সাইয়ীদ বলেন, ‘মাঝের সময়টা এই ছবির শুটিংয়ে ফান্ডিংয়ে খুব একটা সুবিধা হচ্ছিল না। তা ছাড়া গ্রামে একটা আর্ট অ্যান্ড সায়েন্স সেন্টার করলাম। আরও কয়েকটি ছবির কাজও করেছি মাঝে। বিশেষ করে মাঝের সময় ২০১৭ সালে “একজন কবির মৃত্যু” নামে আরেকটি গণ–অর্থায়নের কাজ শেষ করেছি। এসব করতে করতে করোনা চলে এল আর “সংযোগ”–এর কাজ শেষ করা গেল না। এখন শুরু করতে যাচ্ছি।’
বৈজ্ঞানিক কল্পনা কাহিনির পাশাপাশি সমাজ বাস্তবতার কল্পকাহিনি নিয়ে ছবির গল্প। জানা গেছে, প্রথম ধাপে ‘সংযোগ’ ছবিটির ছয় দিনের শুটিং হয়েছিল। এখন ২১ মার্চ থেকে টানা ১০ দিন শুটিং হবে বগুড়ায়। এরপর আরও দুই দিন ঢাকাতে। তাহলে ছবির কাজ শেষ হবে।
পরিচালক জানালেন, তাঁর নিজ বাড়ি বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার ভাণ্ডারবাড়ি গ্রামে একটি গবেষণাগারের সেট ফেলা হয়েছে। সেখানে টানা শুটিং হবে ছবিটির। তিনি বলেন, ‘বেশ কিছুদিন ধরে গ্রামে একটি বিজ্ঞান গবেষণাগারের কন্ট্রোল রুমের সেট তৈরি করছি। শুটিং শুরুর আগেই সেট নির্মাণ শেষ হয়ে যাবে। সজল, সায়মা স্মৃতিসহ বেশ কয়েকজনের শুটিং হবে এই সেটে। বর্ষার আগেই শুটিং শেষ করতে হবে। বৃষ্টির দিন শুরু হয়ে গেলে সেট নিয়ে সমস্যা হবে।’
এই ছবিতে একজন উদ্ভাবকের চরিত্রে অভিনয় করবেন সজল। সহযোগী থাকবেন নবাগত সায়মা স্মৃতি। এ ব্যাপারে পরিচালক বলেন, ‘উদ্ভাবক হিসেবে সজল ভালো করবে আশা করছি। কারণ, সজলের অভিনয় দক্ষতা, আন্তরিকতা ও কাজে কো-অপারেশন ভালো। সায়মা নতুন। তবে তাঁর সঙ্গে কথা বলে মনে হয়েছে, করাতে পারলে ভালোই করবেন।’
আগে এ ধরনের চরিত্রে কাজের অভিজ্ঞতা নেই সজলের। তিনি বলেন, ‘এটি খুবই সেনসিটিভ একটি চরিত্র। নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলতে হবে। বৈজ্ঞানিক কারিগরি সম্পর্কে টুকটাক ধারণাও থাকবে হবে। শুটিংয়ের আগে সেগুলো সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার চেষ্টা করছি। একটা জিনিস ভালো লাগছে, এই কাজের ভালো সোশ্যাল মেসেজ আছে। তা ছাড়া আবু সাইয়ীদ ভাইয়ের হাত ধরে একটা ভালো কাজ করার সুযোগ পাচ্ছি।’
গণ–অর্থায়নে খুব সহজে কি সিনেমা তৈরি সম্ভব? জানতে চাইলে পরিচালক আবু সাইয়ীদ বলেন, ‘সম্ভব। প্রথম প্রথম একটু সমস্যা তো হবেই। এটি বাংলাদেশে একটি নতুন ধারণা। আমারবেলায় মাঝে সমস্যা হলেও এই ‘সংযোগ’ ছবিটি তৈরিতে এখন ফান্ডে বেশ সাড়া পাচ্ছি। শুরুর দিকে এই ছবিতে কেউ কেউ প্রযোজক হতে চেয়েছেন, আমি রাজি হইনি। কারণ, গণ–অর্থায়নের শর্তে এটি পড়ে না। বন্ধুবান্ধব থেকে শুরু করে পরিচিত, অপরিচিত অনেকে এগিয়ে এসেছেন। অনেক ছাত্র-ছাত্রী এক শ টাকাও ফান্ডে দিয়েছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘গণ–অর্থায়নের সিনেমা বানানোর ধারণা বাংলাদেশে এখনো গড়ে ওঠেনি। তবে আমার বিশ্বাস “সংযোগ” ও “একজন কবির মৃত্যু” ছবি দুটি মুক্তির পর বাংলাদেশে এই অর্থায়নে সিনেমার নতুন দরজা খুলে যাবে। অনেকে এই পথে সিনেমা নির্মাণ করতে আসবেন।’
গণ–অর্থায়নের ছবিতে শিল্পী, কলাকুশলীদের পারিশ্রমিকের বিষয়টি কীভাবে নির্ধারণ হয়? এ ব্যাপারে আবু সাইয়ীদ বলেন, ‘গণ–অর্থায়ন ফান্ডের সিনেমাতে বিনা পারিশ্রমিকে কাজের কোনো সুযোগ নেই। অবশ্যই পারিশ্রমিক থাকতে হবে। যেমন আমার সিনেমার জন্য সবাইকে পারিশ্রমিক দিচ্ছি। তবে একটু কম কম করে। ফান্ডের কারণে আমি নিজেই এখন কোনো পারিশ্রমিক রাখছি না। একটা সময় হয়তো আমিও পারিশ্রমিক পাব। ব্যাপারটা এমন।’
পরিচালক জানান, আগামী জুন মাসের মধ্যে ‘সংযোগ’ মুক্তির জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে। চলতি বছর মুক্তির কথা আছে। ছবির গল্প ও চিত্রনাট্য লিখেছেন পরিচালক নিজেই।