ঢালিউড অভিনয়শিল্পী শাহিন আলমের শারীরিক অবস্থা আশঙ্কাজনক। গত শনিবার থেকে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। গত মাসের শেষের দিকে এই অভিনেতা শরীরে জ্বর ও হালকা ব্যথা নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে এই অভিনেতার ছেলে ফাহিম নুর জানান, প্রথম দিকে ঠিকমতো ডায়ালাইসিস না হওয়ায় এই অভিনেতার অবস্থা এখন সংকটাপন্ন।
ফাহিম জানান, তাঁর বাবার কিডনিতে আগে থেকে জটিল সমস্যা ছিল। সে জন্য নিয়মিত তাঁকে ডায়ালাইসিস করানো হতো। সম্প্রতি একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য ভর্তি করানো হয়। সেখানে ৪ ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস করানোর পরও শারীরিক কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। পরে তাঁরা জানতে পরেন, এই ডায়ালাইসিস ঠিকমতো হচ্ছিল না। পরে তাঁকে পুরান ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এর মধ্যে অভিনেতা শাহিন আলমের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ফাহিম বলেন, ‘বাবার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে তাঁকে দ্রুত লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তাঁর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। প্রথম দিকে ডায়ালাইসিস পরিমাণমতো না হওয়ায় বাবা শারীরিকভাবেও অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন।’
পাঁচ বছর ধরে শাহিন আলম জটিল কিডনি রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি তাঁর অসুস্থতা আরও গুরুতর হয়। বাড়তে থাকে তাঁর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কিছু সমস্যা। এ অভিনেতা অসুস্থতা নিয়ে খুব একটা বাইরে বের হতেন না। ফাহিম বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই অসুস্থতার জন্য বাবা বাসা থেকে একদমই বের হতেন না। আমরা সঙ্গে করে ডায়ালাইসিস করিয়ে আনতাম। হাসপাতালে ভর্তি করার পরে বাবার উন্নত চিকিৎসার দরকার হয়ে পড়ে। বাবাকে ভালো চিকিৎসা দিচ্ছি, কিন্তু অর্থনৈতিকভাবে কতটা বহন করতে পারব জানি না। প্রতিদিন আমাদের এক থেকে দেড় লাখ টাকা লাগছে।’ বর্তমানে তিনি এবং তাঁর মা হাসপাতালে রয়েছেন। ফাহিম তাঁর বাবার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছেন।
শাহিন আলম দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা থেকে দূরে আছেন। সিনেমা থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে তিনি প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ের বয়স তখন ১৮। পড়তেন কলেজে। পরীক্ষায় খারাপ ফেল করলেন। আবেগে আত্মহত্যা করেন মেয়ে। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর শোকে তিনি ভেঙে পড়েন। তারপর হাতে থাকা কাজ শেষ করে সিনেমাকে বিদায় জানান। অভিনয় ছাড়ার পর পুরোপুরি গামের্ন্ট ব্যবসায় মনোযোগ দেন তিনি। এর পরে শুরু হয় তাঁর শারীরিক অসুস্থতা।
ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন শাহিন আলম। অভিনয় করতেন মঞ্চে। ১৯৮৬ সালে নতুন মুখের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রবেশ করেন সিনেমায়। তখনই নজরে পড়েন ‘বে-দ্বীন’খ্যাত নির্মাতা এস এম শফির। তিনি তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘মাসুদ রানা’ ছবিতে মাসুদ রানা হিসেবে নির্বাচিত করেন শাহিন আলমকে। এই ছবির কাজ পরে এগোয়নি। ১৯৯১ সালে তাঁর অভিনীত ‘মায়ের কান্না’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর একসঙ্গে সাতটি ছবিতে সাইন করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি ‘ঘাটের মাঝি’, ‘এক পলকে’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘টাইগার’, ‘রাগ-অনুরাগ’, ‘দাগি সন্তান’, ‘বাঘা-বাঘিনী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আরিফ লায়লা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘অজানা শত্রু’, ‘গরিবের সংসার’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘আমার মা’, ‘পাগলা বাবুল’, ‘তেজী’, ‘শক্তির লড়াই’, ‘দলপতি’, ‘পাপী সন্তান’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘বিগবস’, ‘বাবা’, ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘বিদ্রোহী সালাউদ্দিন’, ‘তেজী পুরুষ’ ইত্যাদি।