শেষ রক্ষা হলো না। চলেই গেলেন চিত্রনায়ক শাহিন আলম। চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন এ অভিনেতা। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। আজ সোমবার রাত ১০টা ৫ মিনিটে তিনি শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৫৮ বছর।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত শাহিন আলমের মরদেহ পুরান ঢাকার একটি হাসপাতালে রয়েছে। সেখান থেকে মরদেহ গুলশান নিকেতনের বাসায় নেওয়া হবে। এ অভিনেতার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তাঁর ছেলে ফাহিম নুর।
ফাহিম হাসপাতাল থেকে জানান, তিনি ও তাঁর মা হাসপাতালে রয়েছেন। হাসপাতালের সব প্রক্রিয়া শেষ করে তাঁরা গুলশানের বাসায় ফিরবেন।
গুলশানে এসে তাঁরা পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত নেবেন কোথায় জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হবে। জানা যায়, গত মাসের শেষের দিকে এ অভিনেতা শরীরে জ্বর ও হালকা ব্যথা নিয়ে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর শারীরিক অবস্থা গুরুতর হলে তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। ফাহিম আরও জানান, তাঁর বাবার কিডনিতে আগে থেকে জটিল সমস্যা ছিল। সে জন্য নিয়মিত তাঁকে ডায়ালাইসিস করানো হতো। সম্প্রতি একটি হাসপাতালে ডায়ালাইসিস করানোর জন্য ভর্তি করানো হয়।
সেখানে চার ঘণ্টা করে ডায়ালাইসিস করানোর পরও শারীরিক কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। পরে তাঁরা জানতে পরেন, এই ডায়ালাইসিস ঠিকমতো হচ্ছিল না। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে পুরান ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে তাঁকে ডায়ালাইসিস করানো হয়। এর মধ্যে অভিনেতা শাহিন আলমের শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে ফাহিম বলেন, ‘বাবার প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে গত শনিবার থেকে তাঁকে দ্রুত লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। তাঁর অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। প্রথম দিকে ডায়ালাইসিস পরিমাণমতো না হওয়ায় বাবা শারীরিকভাবেও অনেক দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত বাবাকে আর বাঁচাতে পারলাম না। আপনারা আমার বাবার আত্মার শান্তি কামনায় দোয়া করবেন।’
পাঁচ বছর ধরে তিনি জটিল কিডনি রোগে ভুগছেন। সম্প্রতি তাঁর অসুস্থতা আরও গুরুতর হয়। বাড়তে থাকে তাঁর ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত কিছু সমস্যা। এ অভিনেতা অসুস্থতা নিয়ে খুব একটা বাইরে বের হতেন না। দীর্ঘদিন ধরে সিনেমা থেকে দূরে আছেন। সিনেমা থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গে প্রয়াত এই অভিনেতা প্রথম আলোকে জানিয়েছিলেন, তাঁর মেয়ের বয়স তখন ১৮।
পড়তেন কলেজে। পরীক্ষায় খারাপ ফল করলেন। আবেগে আত্মহত্যা করেন মেয়ে। একমাত্র মেয়ের মৃত্যুর শোকে তিনি ভেঙে পড়েন। এরপর হাতে থাকা কাজ শেষ করে সিনেমাকে বিদায় জানান।
শাহিন আলম শেষ ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান রকিবুল আলম পরিচালিত ‘দারোয়ানের ছেলে’ ছবিতে। অভিনয় ছাড়ার পর পুরোপুরি গার্মেন্ট ব্যবসায় মনোযোগ দেন তিনি। এরপর শুরু হয় তাঁর শারীরিক অসুস্থতা।
শাহিন আলম ১৯৬২ সালের ৬ ডিসেম্বর জন্মগ্রহন করেন। ঢাকায় বেড়ে উঠেছেন শাহিন আলম। অভিনয় করতেন মঞ্চে। ১৯৮৬ সালে নতুন মুখের কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রবেশ করেন সিনেমায়। তখনই নজরে পড়েন ‘বে-দ্বীন’খ্যাত নির্মাতা এস এম শফির। তিনি তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘মাসুদ রানা’ ছবিতে মাসুদ রানা হিসেবে নির্বাচিত করেন শাহিন আলমকে। এই ছবির কাজ পরে এগোয়নি। ১৯৯১ সালে তাঁর অভিনীত ‘মায়ের কান্না’ ছবিটি মুক্তি পাওয়ার পর একসঙ্গে সাতটি ছবিতে সাইন করেন। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি দেড় শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবি ‘ঘাটের মাঝি’, ‘এক পলকে’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘টাইগার’, ‘রাগ-অনুরাগ’, ‘দাগি সন্তান’, ‘বাঘা-বাঘিনী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আলিফ লায়লা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘অজানা শত্রু’, ‘গরিবের সংসার’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘আমার মা’, ‘পাগলা বাবুল’, ‘তেজী’, ‘শক্তির লড়াই’, ‘দলপতি’, ‘পাপী সন্তান’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘বিগবস’, ‘বাবা’, ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘বিদ্রোহী সালাউদ্দিন’, ‘তেজী পুরুষ’ ইত্যাদি।