দেশের চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীদের পৃথক নির্বাচন আজ শুক্রবার। বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পীদের নির্বাচন হবে এফডিসি প্রাঙ্গণে আর বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে অনুষ্ঠিত হবে টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীদের সংগঠন অভিনয় শিল্পীসংঘের ভোট। দুটিই অভিনয়শিল্পীদের নির্বাচন। কিন্তু পার্থক্য অনেক। চলচ্চিত্র অঙ্গনের তারকাদের নির্বাচন ঘিরে তৈরি হয়েছে থমথমে পরিবেশ। অন্যদিকে আনন্দমুখর পরিবেশে নির্বাচনে শতভাগ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন টেলিভিশনের অভিনয়শিল্পীরা।
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচন
শিল্পীদের আচার–আচরণ, কথা বলা, তাঁদের জীবনবোধ, সবকিছুই ভক্ত ও সাধারণ মানুষের কাছে অনুকরণীয়। অথচ সেই শিল্পীরাই প্রতিপক্ষ শিল্পীদের তির্যক বাক্যবাণে আক্রমণ করছেন। কেউ মানবিক দৃষ্টির জায়গা থেকে কাঁদছেন, সেটাকেই প্রতিপক্ষ বলছে ভোটারদের মন জয় করার রাজনীতি। এ–ও বলছেন, শিল্পীরা নির্বাচনের মাঠেও অভিনয় করছেন। এখানেই শেষ না। একজন চলচ্চিত্র অভিনেতার গায়ে হাত পর্যন্ত তোলা হয়েছে। তাঁদের প্যানেল থেকে বলা হচ্ছে, 'আমরাও হাত গুটিয়ে বসে থাকব না।' কেউ আবার দাবি করেছেন, তাঁকে ফোনে হত্যার হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে সহকর্মীদের বিরুদ্ধে ভোট নিয়ে মিথ্যার অভিযোগ করছেন কেউ কেউ। এসব খবর, স্থিরচিত্র আর ভিডিও এখন ফেসবুকে ভাইরাল। এমন অনেক ঘটনায় শুরু থেকেই আলোচনায় চলচ্চিত্রশিল্পীদের নির্বাচন।
২০২২-২৪ দুই বছর মেয়াদি শিল্পীদের নির্বাচনে চলচ্চিত্রশিল্পী সমিতির ৪৪ অভিনয়শিল্পী ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ৪২৮ জন ভোটার এর মধ্য থেকে ২২ জনকে বেছে নেবেন।
প্যানেল প্রচারণা ও প্রার্থী পরিচিতির পর থেকেই দুই পক্ষের তির্যক কথার আক্রমণ বাড়তে থাকে। গত সপ্তাহের শুরু থেকেই এফডিসিতে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নির্বাচনে সহকর্মী ও দায়িত্বপ্রাপ্তদের ওপর আস্থাহীনতার কথা জানিয়েছেন অভিনেত্রী নিপুণ। তিনি ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। নির্বাচনের এক দিন আগেই তিনি বলেন, 'ভোটের যে পরিবেশ, তাতে ভোটের দিন ভোট বুথে ব্যালট পেপার নিয়ে আমি টেনশনে আছি। যাঁরা ওই জায়গাটা পরিচালনা করছেন, তাঁরা নিরপেক্ষভাবে কাজ করবেন কি না, তা নিয়ে সন্দেহ আছে। কারণ, তাঁদের নিয়োগ দিয়েছে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেল।' অন্যদিকে মিশা–জায়েদ প্যানেলের সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান বলেন, 'একজন সদস্যের ব্যাপারে ইলিয়াস কাঞ্চন-নিপুণ প্যানেল থেকে অভিযোগ দিয়েছিল, তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।' এদিকে নির্বাচন ঘিরে ঝামেলা হতে পারে বলে আগেই জানিয়ে রাখলেন নির্বাচন কমিশনার জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, 'এত মানুষের সমাগম হবে, বিশৃঙ্খলা তৈরি হতে পারে। একটা ছোট্ট ঘটনায় যেকোনো মুহূর্তে গ্যাঞ্জাম লেগে যেতে পারে।'
অভিনয় শিল্পীসংঘ নির্বাচন
ঘরের কথা পরে জানবে কেন—এই যেন টেলিভিশন অভিনয়শিল্পীদের মূলনীতি। অভিনয়শিল্পীদের নির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে দু-একটা প্রশ্ন উঠলেও বয়োজ্যেষ্ঠদের সম্মানহানি হবে বলে ঘটনা আড়াল করেছেন নির্বাচনের প্রার্থীরা। পরিচিতি সভায় তরুণ প্রার্থীদের কেউ কেউ বলেছেন, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে যোগ্য মনে করলে তাঁকেই ভোট দেবেন। কারণ, তাঁরা একটি পরিবার। এই পরিবারে কারও হার নেই, এখানে সবাই জয়ী। অভিনয় শিল্পীসংঘের নির্বাচনের সম্মিলিত স্লোগান 'জিতবে ২১, হারবে না কেউ'।
তাদের এই নির্বাচন ঘিরে নেই কোনো জনসমাবেশ, নেই কথার পাল্টা কথা। নেই কোনো প্যানেল ও দলাদলি। প্রধান নির্বাচন কমিশনার খায়রুল আলম সবুজ বলেন, 'নির্বাচনের পরিবেশ আনন্দদায়ক। কেউ নিয়ম ভাঙার চেষ্টা করেনি। আমরা সবাইকে বলে দিয়েছি, নির্বাচন থেকে আনন্দ নিতে হবে। এখানে আনন্দ ছাড়া পাওয়ার কিছু নেই। আমার সবার সঙ্গে কথা হয়েছে, তাঁরা ভালোবেসে দায়িত্ব নিতে চান। সংগঠনকে সময় দিতে চান।' গতকাল রাতে শিল্পকলার মাঠ থেকে অভিনয় শিল্পীসংঘের সভাপতি পদপ্রার্থী আহসান হাবীব নাসিম বলেন, 'আমরা অলমোস্ট সব প্রার্থীই এখন একসঙ্গে বসে আড্ডা দিচ্ছি। আমরা এমন পরিবেশ সব সময় চাই। আমাদের মধ্যে দলাদলি, কোন্দল, জিততেই হবে, এমন কিছু নেই।'
অভিনয় শিল্পীসংঘের নির্বাচনে ৪৮ প্রার্থীর মধ্যে জিতবেন ২১ জন।