গ্যালারিতে বসে দেখা 'রানআউট'

রানআউট
রানআউট

সিনেমায় দেখানো চুম্বনদৃশ্যের কিছুটা প্রাসঙ্গিকতা থাকা চাই। ‘রানআউট’ যে আসলেই ‘১৮ ‍+’ (তাদের পোস্টারে বর্ণিত) ছবি, তা প্রমাণের জন্যই কী এমন দৃশ্য! অবশ্য বিষয়টা পরিচালক তন্ময় তানসেন হয়তো জানতে পারেন।

একটি প্যাকেজ নাটক দেখতে হবে এমন শঙ্কা নিয়েই রাজধানীর বলাকা সিনেমায় যাওয়া। অবশ্য এই শঙ্কা অপ্রাসঙ্গিক কিছু নয়। এ ছবির নায়ক ও দুই নায়িকা নাটকের মাধ্যমেই পরিচিতি পেয়েছেন।
আসলে ‘রানআউট’ ছবিটি নিয়ে কিছুটা অন্যরকম চাওয়া ছিল। দীর্ঘদিন ধরে শহরে রহস্যময় এক ইশারা ছড়াচ্ছিল এ ছবির বিলবোর্ড। পোস্টারে আবেদন ছড়িয়েছেন উদীয়মান এক নারী মডেল। বাংলা ছবিতে হালের আইটেম গানের হাওয়া লেগেছে অবশ্য আরও আগে। আর আইটেম গান এবারে বোধ হয় তার আসনটা পাকা করেই নিল। এরই মধ্যে ঢাকাই ছবিতে ‘আইটেম কন্যা’র একটি রগরগে চরিত্র ও চাহিদা তৈরি হয়ে গেছে। হয়তো ‘প্রযোজক পিঠ চাপড়ে বলেন, ওটাই ছবির প্রাণ।’ কিন্তু যারা নিয়ম করে বলিউডের ছবি দেখেন, আইটেম গানের সৌকর্যটা তাঁদের জানা। সে বিবেচনায় ‘আইটেম কন্যা’ নায়লা নাঈমের নড়াচড়ার জড়তা কাটেনি এখনো। যদিও পোশাকের জড়তা কেটেছে।
নায়ক সজল আর নায়িকা মৌসুমী নাগ চমৎকার অভিনয় করেছেন। বলা যায়, খানিকটা ‘গুলশান অ্যাভিনিউ’ নাটকের মতো চরিত্র পেয়ে মৌসুমীর যেন একটু সুবিধেই হয়েছে। পোশাকেও বেশ উদারতার পরিচয়ই দিয়েছেন পরিচালক। আর এ ছবির নায়িকাও তা ধারণ করেছেন সাবলীলভাবে। ছবির প্রতিটি পুরুষ চরিত্রের সঙ্গে এ ছবির পোস্টারে উল্লিখিত সেই ‘১৮ ‍+’ সব দৃশ্যে পেশাদারি পরিচয় দিয়েছেন তিনি। তবে মৌসুমী নাগের অভিনয়ে মনে হয়েছে, ভবিষ্যতে খলনায়িকা চরিত্রেই বোধ হয় তিনি ভালো করবেন।
যদিও ঢাকাই ছবিতে নতুন কিছু দেখানোর প্রত্যাশা পূরণে খানিকটা সফল হয়েছেন পরিচালক তন্ময় তানসেন। নয়নাভিরাম শুটিং স্পট, দৃশ্যধারণ, এডিটিং, রক ধাঁচের গান—রানআউটে এর সবই ভালো। বেশ কজন তরুণ দর্শকের সঙ্গে কথা বলেও এমনটি জানা গেছে। তাঁরা বলেছেন, ‘বেশ ভালো।’
তবে, গল্প নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ। শীর্ষ সন্ত্রাসী পালন করে গডফাদারদের ফায়দা লোটার গল্প ঢালিউডে নতুন নয়। এমনকি চলচ্চিত্রে সিকোয়েন্সগুলো যত দ্রুত পার হয়ে গেছে; ছবির গল্পটি ততটাই ধীর গতির। দর্শকের মন পর্দায় ধরে রাখতে পারেনি ছবিটি।
১৬ অক্টোবর মুক্তি পাওয়া ‘রানআউট’ ছবিটি কৌতুকও ছড়িয়েছে খানিকটা। মৌসুমী নাগের টপস্ কিংবা রোমানা স্বর্ণার গরমকালের পোশাকের বিপরীতে নায়ক সজল ছিলেন ‘হট’! কেননা গায়ে তাঁর শীতের জ্যাকেট, গলায় মাফলার, কখনো স্কার্ফ।
সম্পূর্ণ সিনেমাতেই নাচের ধারণা মার খেয়েছে প্রচণ্ডভাবে। তবে গানগুলো দারুণ। যদি কারও জানা না থাকে যে, পরিচালক তন্ময় নব্বইয়ের দশকের জনপ্রিয় ব্যান্ড ভাইকিংসের ভোকাল—তাঁদের জন্য এটা একটা চমক। ব্যান্ডদলের ভোকাল পরিচালনা করেছেন সিনেমা, এও এক নতুন ঘটনা। তন্ময়ের গান যারা ভালোবাসেন, তাঁদের জন্য এ এক বাড়তি পাওয়া বটে।
পরিচালককে অভিবাদন। আপনি এগিয়ে গেলে বাংলা ছবি নতুন কিছু পাবে। তবে, একটু থামতে হবে। কোথায় থামতে হবে তা অবশ্য নিজেকেই বের করে নিতে হবে। এখন ইউটিউবের যুগ। গতকাল পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে মুক্তি পাওয়া নতুন ছবিটি কিন্তু নিমেষেই পৌঁছে যাচ্ছে তরুণদের হাতে। আর তাঁরা ভীষণ আপডেটও। কাজেই আপনাকে তাঁদের চেয়েও আপডেটেড হতে হবে। রানআউটের জন্য শুভ কামনা।