সিনেমা হল না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় ঈদে জামালপুরের চারটি মিলনায়তনে মুক্তি পেয়েছিল গলুই। সম্প্রতি ছবিটির প্রদর্শন হঠাৎ বন্ধের নির্দেশ দেয় জেলা প্রশাসন। এ ঘটনায় চলচ্চিত্রাঙ্গনে ক্ষোভ দেখা দেয়। গত সোমবার গলুই-এর পরিচালক এস এ হক অলিক ও প্রযোজক খোরশেদ আলম তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। মঙ্গলবার বিষয়টি আমলে নিয়ে মৌখিক সিদ্ধান্ত জানায় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
পরিচালক অলিক জানান, ‘মন্ত্রী ও সচিব মহোদয়ের নির্দেশে জামালপুরে গলুই প্রদর্শনের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। মৌখিকভাবে জানানো হয়েছে, গলুই-এর প্রদর্শনীতে আর বাধা নেই। মন্ত্রণালয় থেকে ফোন করে জামালপুরের প্রশাসনকে মৌখিকভাবে বিষয়টি জানানো হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। যেহেতু দুদিন প্রদর্শনী বন্ধ ছিল, আবার প্রচারণার মাধ্যমে জানাতে চাই, সবাই এসে গলুই দেখুন।’
বিষয়টি নিয়ে চলচ্চিত্রাঙ্গনের অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী, চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি সোহানুর রহমান সোহান, চিত্রনায়ক সিয়াম আহমেদ, চিত্রনায়িকা পূজা চেরিসহ অনেকে প্রতিবাদ জানিয়েছেন। নিজের সিনেমার প্রদর্শনী বন্ধ নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতিবাদ জানান চিত্রনায়ক শাকিব খান। নিজের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজ থেকে শাকিব খান এই বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন। তিনি লেখেন, ‘করোনায় গত দুই বছর দেশের চলচ্চিত্র অনেকটাই থমকে ছিল। এবারের ঈদে ভালো মানের চলচ্চিত্রের মুক্তিতে গতি আসা শুরু করছিল। সবাই চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্নও দেখছিলেন। প্রযোজক, পরিচালক, শিল্পী–কলাকুশলী থেকে শুরু করে সিনেমা হল মালিক প্রত্যেকের তাই দৃষ্টি ছিল ঈদের চলচ্চিত্রের দিকে। মুক্তির প্রথম দিন থেকেই আমার অভিনীত দুটি চলচ্চিত্র গলুই ও বিদ্রোহীর হল রিপোর্টও দারুণ পাচ্ছিলাম। বিশেষ করে গলুই-এর দর্শকপ্রিয়তা ছিল শুরু থেকেই অন্যরকম ভালো লাগার।’
শাকিব খান লেখেন, ‘সুস্থ ধারার এই চলচ্চিত্র দেখতে মানুষ পরিবার নিয়ে আবার সিনেমা হলমুখী হয়েছেন; সংশ্লিষ্ট সবাই তেমনটাই বলছিলেন। সব শ্রেণির দর্শকদের থেকে ইতিবাচক সব প্রতিক্রিয়া পাচ্ছিলাম। এমনকি দেশের প্রতিষ্ঠিত সব গণমাধ্যমেও সেই খবর উঠে আসছিল। নতুন প্রজন্ম সরকারি অনুদানে তৈরি গলুই চলচ্চিত্রের মাধ্যমে নতুন করে আমাদের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছিল; যা আমাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করছিল।’
শাকিব খান আরও লেখেন, ‘কারও হয়তো অজানা নয় যে, গলুই-এর বেশিরভাগ শুটিং জামালপুর জেলায় হয়েছে। ফলে অন্য যেকোনো জায়গার চেয়ে গলুই নিয়ে সেখানকার মানুষের আগ্রহ সবচেয়ে বেশি থাকবে, এটাই স্বাভাবিক। অথচ এই জেলা শহরে নেই কোনো সিনেমা হল! বাধ্য হয়ে গলুই–সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জেলা শিল্পকলাসহ তিনটি মিলনায়তনে ঈদের দিন থেকে চলচ্চিত্রটি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন। এসব মিলনায়তনে দর্শকেরও উপস্থিতি ছিল উপচে পড়া।’
প্রতিবাদ জানিয়ে শাকিব খান লেখেন, ‘নানান মাধ্যম থেকে জানতে পেরেছি, শত বছর আগের তৈরি সিনেমাটোগ্রাফ অ্যাক্ট-এর দোহাই দিয়ে মিলনায়তনগুলোতে গলুই-এর প্রদর্শনী বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে! যা শুধু আমাকে ব্যথিত করেনি; বরং বিস্মিত ও হতবাক করেছে। ‘গলুই’ চলচ্চিত্রটি যখন সাধারণ মানুষেরা সানন্দে গ্রহণ করেছেন, পরিবার নিয়ে দেখছেন; তখন এর প্রদর্শনী বন্ধের খবরে চলচ্চিত্রের প্রত্যেক মানুষ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষও প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন। অতীতে বিকল্প ব্যবস্থায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একাধিক চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী হয়েছে! সেসব চলচ্চিত্র প্রদর্শনে প্রশাসন সহায়তা করেছে। তাহলে গলুই–এর বিকল্প ব্যবস্থায় প্রদর্শন হতে সমস্যা কোথায়?’
রোমান্টিক গল্পের সিনেমা গলুই ২০২০-২১ অর্থবছরে সরকারি অনুদানে নির্মিত। এতে শাকিব খানের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করেছেন পূজা চেরী। আরো অভিনয় করেছেন আজিজুল হাকিম, সমু চৌধুরী, ঝুনা চৌধুরী প্রমুখ।