‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমাটি নিয়ে কত পরিকল্পনা ছিল সারাহ বেগম কবরীর! ছবিটি করতে কতই না ছোটাছুটি করতে হয়েছিল তাঁকে। কখনো উত্তরা, কখনো আশুলিয়া, কখনোবা কেরানীগঞ্জে। ঢাকার এ প্রান্ত থেকে ওই প্রান্তে ছুটেছেন। করোনার ভয়কে উপেক্ষা করে শুটিংয়ে অংশ নিয়েছিলেন। সরকারি অনুদান পাওয়া ছবিটি যথাসময়ে মুক্তি দেওয়ার তাড়া ছিল তাঁর। শুটিংও প্রায় শেষ করে এনেছিলেন। সব মিলিয়ে আর মাত্র দুদিন শুটিং করলেই শেষ হয়ে যেত শুটিং। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যু থামিয়ে দেয় সবকিছু।
গত বছরের এপ্রিল মাসে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন কবরী। এই হাসপাতাল ওই হাসপাতাল ঘুরে শেষ পর্যন্ত তাঁর আর বাসায় ফেরা হয় না। শেষ করা সম্ভব হয় না সেই ছবির শুটিং। দেখতে দেখতে তাঁর প্রয়াণের এক বছর পেরিয়ে গেছে। কী অবস্থায় আছে সেই ছবির কাজ? আজ রোববার কবরীর ছেলে শাকের চিশতীর সঙ্গে আলাপে জানা গেল, ‘এই তুমি সেই তুমি’র পাঁচটি দৃশ্য ও কিছু প্যাচওয়ার্ক এখনো বাকি। দুই দিন শুটিং করলেই হয়ে যাবে। এ ছাড়া ডাবিং, সম্পাদনা, আবহ সংগীত, কালার কারেকশনসহ শুটিং-পরবর্তী আরও কিছু কাজ এখনো বাকি।
প্রয়াণের দুই মাস আগে শেষবারের মতো শুটিং করেছিলেন কবরী। তিনি নেই, থেমে আছে তাঁর শেষ ছবি ‘এই তুমি সেই তুমি’র কাজ। ছবিটির কাজ এগোবে, নাকি অসমাপ্তই থেকে যাবে? আশ্বস্ত করলেন প্রয়াত অভিনেত্রী ও পরিচালকের ছেলে শাকের চিশতী। তিনি বলেন, ‘মায়ের ছবি “এই তুমি সেই তুমি”র অবশিষ্ট কাজ শেষ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আম্মা মারা যাওয়ার পর কিছু মানুষ আমাদের গুলশানের বাড়িটি দখলের চেষ্টায় নানা ধরনের জটিলতা তৈরি করে। এসব নিয়ে থানা-পুলিশ, আইন-আদালতসংক্রান্ত জটিলতায় অনেক সময় পার হয়ে গেছে। মানসিকভাবে স্থির হতে না পারলে শুটিংয়ের মতো কাজ করা সম্ভব নয়। বাড়ির জটিলতার জন্য থানা-পুলিশ, মেয়র অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি, দেখা যাক কত দ্রুত এসবের সমাধান হয়।’
কবরীর অসমাপ্ত ছবিটির কাজ শেষ করবেন তাঁর ছেলে শাকের চিশতী। তিনি চলচ্চিত্র নিয়েই পড়াশোনা করেছেন। শাকের বলেন, ‘আম্মুর কাজ আমাকেই শেষ করতে হবে। এটা আমার অনেক বড় একটা দায়িত্ব। মায়ের স্বপ্নের ছবিটি তাঁর দর্শকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। আম্মু কিন্তু সব কাজ গুছিয়ে গেছেন। স্টোরিবোর্ড করা আছে। আমার সঙ্গে পুরো ছবির সবকিছু শেয়ারও করেছেন। তাই কাজটা শেষ করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। শুধু অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের শিডিউল মিলিয়ে শুটিংয়ের প্রস্তুতি নেওয়া। তার আগে আম্মুর বাড়িটা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন করতে হবে।’
ছেলেকে নিয়ে কবরীর ছিল অন্য রকম স্বপ্ন। মায়ের উৎসাহ ও আগ্রহে চলচ্চিত্র নির্মাণ নিয়ে পড়াশোনা করেছেন শাকের। ইচ্ছা ছিল, মায়ের সঙ্গে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানাবেন। সে কথা মনে করে আফসোস করলেন শাকের চিশতী, ‘কত স্বপ্ন ছিল আমাদের, কত পরিকল্পনা। ভেবেছিলাম, করোনার এই দুঃসময় শেষ হবে, পৃথিবী আবার আগের মতো হয়ে উঠবে, একে একে সব ইচ্ছা পূরণ হবে। মায়ের সঙ্গে একটি পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমা বানাব। আমার প্রথম সিনেমায় অভিনয় করতে চেয়েছিলেন মা। আমার সঙ্গে কিছু স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রেও কাজ করতে চেয়েছিলেন তিনি। তিনিই আমাকে চলচ্চিত্র নিয়ে পড়তে অনুপ্রাণিত করেছিলেন। মায়ের সঙ্গে একটা সিনেমা বানাতে পারলাম না, জীবনে এই আক্ষেপ থেকে যাবে। এখন মায়ের রেখে যাওয়া কাজটি দিয়েই আমার শুরু করতে হবে।’
‘এই তুমি সেই তুমি’ চলচ্চিত্রে সংগীত পরিচালক হিসেবে তাঁর সঙ্গে কাজ করেছেন বাংলাদেশের বরেণ্য সংগীতশিল্পী সাবিনা ইয়াসমীন। এই চলচ্চিত্রের জন্য নিজেই গান লিখেছেন কবরী, যেটি তাঁর জীবনে লেখা প্রথম গান। সেটি গেয়েছেন এই প্রজন্মের দুই সংগীতশিল্পী কোনাল ও ইমরান। পরিচালনার পাশাপাশি ছবির কাহিনি, চিত্রনাট্য ও সংলাপও লিখেছেন কবরী। ছবির প্রধান দুটি চরিত্রে অভিনয় করেছেন নিশাত সালওয়া, রায়হান রিয়াদ। অসম্পূর্ণ অনেক কাজ, অনেক স্বপ্ন রেখে গত বছরের ১৭ এপ্রিল করোনায় আক্রান্ত হয়ে পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন কবরী। আমৃত্যু চলচ্চিত্রেই সক্রিয় ছিলেন ‘মিষ্টি মেয়ে’ কবরী। ক্যামেরার সামনে পেছনে সর্বত্রই ছিল তাঁর সরব উপস্থিতি। ছিলেন সাংসদও।