‘ওরা কিসের মডেল! কিসের অভিনয়শিল্পী। এত বছরের অভিনয়জীবন, কারও নামই তো শুনলাম না। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংবাদমাধ্যমকে অনুরোধ—কাউকে মডেল ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে প্রচারের আগে অবশ্যই খতিয়ে দেখবেন। সমাজে এই ধরনের অপকর্মের কারণে সেনসেশন তৈরি হয়। দেশ–বিদেশের মানুষের কাছে সত্যিকারের শিল্পী ও মডেল সম্পর্কে নেতিবাচক ভাবমূর্তি হয়।’ ক্ষোভের সঙ্গে কথাগুলো বলছিলেন জনপ্রিয় অভিনয়শিল্পী ও অভিনয় শিল্পী সংঘের সভাপতি শহীদুজ্জামান সেলিম।
মডেল ও অভিনয়শিল্পী পরিচয়ধারী দুই নারী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসা ও মরিয়ম আক্তার মৌকে গত রোববার রাতে ঢাকার বারিধারা ও মোহাম্মদপুর থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। গতকাল সোমবার মাদক মামলায় পিয়াসা ও মৌকে তিন দিন করে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত। পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত গতকাল এ আদেশ দেন। মডেল ও অভিনয়শিল্পী হিসেবে তাঁদের প্রচারের কারণে বিনোদন অঙ্গনের বেশির ভাগ সদস্যের মধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
শহীদুজ্জামান সেলিম বলেন, ‘এদের আমরা একদমই চিনি না। এরা কী কাজ করেছে, কখনো সেটাও জানি না। এখানে আমাদের একটা বক্তব্য, সব শিল্পীই শিল্পী নয়, সব মডেলই মডেল নয়। একটা প্রবণতা আমরা ইদানীং দেখছি, একটা ছেলে বা মেয়ে কোথাও অপরাধ করে নিজেদের মডেল বা অভিনয়শিল্পী দাবি করছে। যাঁরা গ্রেপ্তার করেন, তাঁরাও মনে হয়, এসব পরিচয়ে গ্রেপ্তার করতে পুলকিত হন। মডেল অমুক ধরা পড়েছে, সংবাদমাধ্যমেও সেভাবে লেখা হয়। এভাবে লেখা বা প্রচারের কারণে সত্যিকারের শিল্পীরা বিব্রত হন। সমাজের মানুষের কাছে তাঁদের নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়। অসম্মান করা হয়!’
কথায় কথায় সেলিম বলেন, ‘তার পরিচয় কী? মডেল। সে কি মডেলিং করেছে, কেউ কিন্তু জানি না। তার পরিচয় অভিনয়শিল্পী, কিন্তু সে কিসে অভিনয় করেছে, কেউ বলতে পারবে না। একজন মানুষকে হুটহাট অভিনয়শিল্পী বা মডেল বলাটা সত্যিকারের শিল্পী ও মডেলদের অপমান। এমন ঘটনার কারণে আমাদের আগেও বিড়ম্বনার সম্মুখীন হতে হয়, এখনো হচ্ছে। সংবাদ পরিবেশন এবং গ্রেপ্তারের সময় কেউ যদি অভিনয়শিল্পী বা মডেল দাবি করে, তাহলে কী করেছে তা জানতে চাওয়া অবশ্যই উচিত। সত্যিকারে মডেল ও অভিনয়শিল্পীকে প্রমাণ করারও তো কিছু নাই, তারা সবার কাছে পরিচিত। অখ্যাতরা অপরাধ করে ইন্ডাস্ট্রির সুনাম নষ্ট করছে, এটা তো মানা যায় না।’
শহীদুজ্জামান সেলিম জানালেন, তাঁদের কয়েকটি সংগঠন রয়েছে। অভিনয়শিল্পী, মডেল, প্রযোজক, পরিচালক, কলাকুশলীরা এসব সংগঠনের সদস্য। সবাই সবাইকে চেনেন। সবার পরিচয়পত্রও আছে। সেলিম বলেন, ‘কোথাও কেউ নিজেকে মডেল বা অভিনয়শিল্পী দাবি করলে আমাদের সংগঠনের যে কাউকে ফোন করলে নিশ্চিত হতে পারবেন। যথার্থতা যাচাই করতে পারবেন, আদৌ তারা অভিনয় বা মডেলিংয়ের সঙ্গে যুক্ত কি না। সমস্ত পরিচালক, প্রযোজক অভিনয়শিল্পী, কলাকুশলীর সাংগঠনিক পরিচয়পত্র আছে।’
অন্যদিকে ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি ও অভিনয়শিল্পী সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘আমাদের সময়ে অনলাইন টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক এসবের ছড়াছড়ি ছিল না। এক্সপোজারের একমাত্র উপায় ছিল টেলিভিশন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অনলাইনে এখন কোথা থেকে কে কী বানাচ্ছে—লাইকি, টিকটক আরও কী কী অ্যাপ যেন রয়েছে। এসবের মাধ্যমে অনেকে নিজেদের তারকা ভাবা শুরু করছে। এদের নিয়ে আবার বিভিন্ন পণ্য প্রতিষ্ঠানের মাতামাতির শেষ নাই। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যারা খারাপ কাজে লিপ্ত থাকবে, তাদের ধরবে, সাংবাদিকেরা তাদের নিয়ে লিখবে—কিন্তু পরিচয় প্রকাশের আগে একটুখানি খোঁজখবর ও যাচাই–বাছাই নিয়ে দেওয়া উচিত।
আমরা দেখছি, কোনো মডেল ও অভিনয়শিল্পী পরিচয়ধারী কেউ যখন এই ধরনের ঘটনা ঘটায়—আমাদের অঙ্গনের সত্যিকারের শিল্পী ও মডেলদের বিব্রত হতে হয়। সামাজিকভাবে হেয় হতে হয়। মানুষও ঢালাওভাবে নেতিবাচকভাবে দেখা শুরু করে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের তো কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, যার যা খুশি মুখে আসে লিখে চলছে!’
সালাহউদ্দিন লাভলু বলেন, ‘গ্রেপ্তার দুজনের কাউকে আমরা কখনোই মডেল বা অভিনেত্রী হিসেবে দেখিনি। চিনিও না। শিল্পী সমিতির নেতৃবৃন্দের সঙ্গেও কথা হয়েছে, তারাও বলেছে, এদের চেনে না, জানেও না। বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের মধ্যে যদি ধরে নেই ১০–১২ কোটি টেলিভিশন দেখে, তারা কিন্তু এই অঙ্গনের মানুষকে অনেক সম্মান করে। এটা অর্জন করতে অনেক বছর ধরে সময় লেগে যায়। গুটিকয়ের অপকর্মের দায় যেন বিনোদন অঙ্গনের সবার ওপর না পড়ে।’