নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প শিমু
নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প শিমু

এবার বাংলাদেশে ‘শিমু’

বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন এবং আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনে পোশাকশিল্পের ভূমিকা এবং নারী পোশাকশ্রমিকদের সংগ্রাম ও সাফল্যের গল্প শিমু। শ্রমিকনেত্রী ডালিয়া আক্তার ডলির সঙ্গে ঘটে যাওয়া সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। রুবাইয়াত হোসেন পরিচালিত সাতটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার বিজয়ী চলচ্চিত্র শিমু আজ থেকে ঢাকার স্টার সিনেপ্লেক্স, ব্লকবাস্টার, চট্টগ্রামের সিলভার স্ক্রিন এবং সাভারের চন্দ্রিমা হলে প্রদর্শিত হবে।
সিনেমার মূল চরিত্রের নাম শিমু। সেই চরিত্রে যিনি অভিনয় করেছেন, তাঁর নামও রিকিতা নন্দিনী শিমু। সিনেমার গল্পে ২৩ বছর বয়সী নারী শিমু ঢাকার একটি পোশাক কারখানার শ্রমিক। কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন জটিল পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তিনি। অতঃপর সহকর্মীদের নিয়ে শ্রমিকদের অধিকার ও ন্যায্য পারিশ্রমিক আদায়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শিমু একটি সংগঠন তৈরির চেষ্টা করেন।

রুবাইয়াত হোসেন বলেন, ‘প্রতিকূলতা জয় করে সামনে এগিয়ে চলা প্রতিটি সংগ্রামী মানুষের গল্পই শিমু। সমতার প্রশ্নে “শিমু” একজন সম্মুখযোদ্ধা।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের দর্শক ছবিটিকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করবেন। আর বাংলাদেশের যাঁরা শ্রমজীবী নারী, তাঁরা যদি ছবিটা দেখেন, তাঁদের খুব ভালো লাগবে। কেননা তাঁদের নিজেদের গল্পটাকে পর্দায় দেখতে পাবেন।’

ছবির দৃশ্যে রিকিতা নন্দিনী

ছবির প্রধান চরিত্র শিমু চরিত্রে রূপদানকারী অভিনেত্রী রিকিতা নন্দিনী শিমু মনে করেন, ‘ছবিটি যে নারী শ্রমিকেরা দেখবেন বা যাঁরাই দেখবেন, এই গল্পটাকে তাঁরা নিজের করে ভাবতে পারবেন। যেকোনো পেশার মানুষই এ গল্পের সঙ্গে নিজেকে কানেক্ট করতে পারবেন।’

রুবাইয়াত হোসেনের পাশাপাশি ছবিটির মূল কুশলীদের অধিকাংশই ছিলেন নারী। চিত্রগ্রহণে সাবিন ল্যাঞ্চেলিন, শব্দগ্রহণে এলিশা আলবার্ট এবং শিল্পনির্দেশনায় জোনাকি ভট্টাচার্যের নাম উল্লেখযোগ্য। তা ছাড়া বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন নভেরা হোসেন, দীপান্বিতা মার্টিন, পারভীন পারু, মায়াবি মায়া, মোস্তফা মন্‌ওয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি, সামিনা লুৎফা প্রমুখ। দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী।

ফ্রান্সের সেইন্ট জঁ দ্য-লুজ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতেন রিকিতা নন্দিনী শিমু

২০১৬ সালের লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ওপেন ডোরস ল্যাবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় চলচ্চিত্র ‘শিমু’ চিত্রনাট্যের কাজ। চিত্রনাট্যের জন্য রুবাইয়াত হোসেন জিতে নেন আর্তে ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার। প্রায় দুই বছর চলে সিনেমার শুটিং–পূর্ব ও পরবর্তী কাজ। ছবির ওয়ার্ল্ড প্রিমিয়ার হয় টরেন্টো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে। এরপর ছবিটি প্রদর্শিত হয় ৬৩তম বিএফআই লন্ডন চলচ্চিত্র উৎসবে। এ ছাড়া বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সমাদৃত হয়। পাশাপাশি সাতটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার পেয়েছে চলচ্চিত্রটি।

ফ্রান্সের সেইন্ট জঁ দ্য-লুজ চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার জিতে নেন রিকিতা নন্দিনী শিমু। ইতালির তুরিন চলচ্চিত্র উৎসবে পেয়েছে ইন্টারফেদি পুরস্কার এবং ফ্রান্সের এমিয়েন্স আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে জিতে নিয়েছে সেরা দর্শক পুরস্কার, জুরি পুরস্কারসহ তিনটি পুরস্কার।

এবার বাংলাদেশে ‘শিমু’

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে ফ্রান্স, ডেনমার্ক, কানাডা ও পর্তুগালের বিভিন্ন সিনেমা হলে বাণিজ্যিকভাবে মুক্তি পায় ছবিটি। এরপর ২০২০ সালে আমেরিকার বিভিন্ন হলে দেখানোর পরে ছবিটি বাণিজ্যিকভাবে দেখানো হয় ম্যাক্সিকো, চীন, সিঙ্গাপুর, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক ও জার্মানির সিনেমা হলে। আর মার্চে বাংলাদেশে মুক্তির পরপরই এপ্রিলে চলচ্চিত্রটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে জাপানের বিভিন্ন সিনেমা হলে।
বাংলাদেশের খনা টকিজ ও ফ্রান্সের লা ফিল্মস দ্য এপ্রেস-মিডির ব্যানারে নির্মিত ‘শিমু’ ছবিটির প্রযোজক ফ্রঁসোয়া দক্তেমা ও আশিক মোস্তফা এবং সহ-প্রযোজক পিটার হিলডাল, পেদ্রো বোর্হেস, আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ ও রুবাইয়াত হোসেন। আর ছবিটির পরিবেশনা ও আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি ফ্রান্সের পিরামিড ফিল্মস।