পাহাড়ের পাদদেশে নিঃসঙ্গ একটি বাড়িতে বাবার সঙ্গে থাকে ছোট্ট সাংতে। নিজে নৌকা চালিয়ে স্কুলে যায়, দূর পাহাড়ের ঝরনা থেকে খাবার পানি সংগ্রহ করে। বাবার মন খারাপ দেখে কারণ জানতে চায়। বাবা বলেন, সব ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। আবার ফসল বোনার মতো অর্থ তার কাছে নেই। হয়তো না খেয়ে মারা যেতে হবে।
সাংতে বলে, ‘আমরা সত্যিই মারা যাব বাবা? কেউ আমাদের সাহায্য করবে না?’ বাবা বললেন, ‘একমাত্র ঈশ্বর পারেন আমাদের বাঁচাতে!’ বাবার কথায় আশা জাগে সাংতের মনে। ঈশ্বরের কাছে নিজেদের অবস্থা বর্ণনা করে চিঠি লেখে।
‘প্রাপক: ঈশ্বর’ লেখা দেখে কৌতূহলী হয়ে ওঠেন ডাকঘরের পোস্টমাস্টার। পড়েন চিঠিটা। নিজেই একটা ফিরতি চিঠি লিখে দেন আর সামর্থ্য অনুযায়ী কিছু অর্থ পাঠান ছোট্ট সাংতের সরল বিশ্বাস ঠিক রাখার জন্য। কিন্তু টাকার অঙ্ক দেখে উল্টো পোস্টমাস্টারকেই অবিশ্বাস করে সাংতে। ভাবে, ‘যেহেতু ঈশ্বরের কোনো অভাব নেই আর তিনি ওদের অবস্থা জানেন, সুতরাং নিশ্চয় তিনি ওদের প্রয়োজনীয় পুরো অর্থ পাঠিয়েছেন। পোস্টমাস্টারই হয়তো টাকাটা সরিয়েছে।’ তাই, পরের চিঠিতে ঈশ্বরের কাছে নালিশ করে পোস্টমাস্টারের বিরুদ্ধে।
‘এ লেটার টু গড’ ছবি মা-হারা শিশু সাংতের গল্প। পরিচালক হেমন্ত সাদিক। চিত্রনাট্য লিখেছেন শাওন কৈরি। ৭ থেকে ১১ নভেম্বর নরওয়েতে অনুষ্ঠিত হলো রিঙ্গেরিক ইন্টারন্যাশনাল ইয়ুথ ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল। এই উৎসবে ‘জুরি মেনশন অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছে ছবিটি। এ ছাড়া ছবিটি যুক্তরাষ্ট্রের লস অ্যাঞ্জেলেসের হলিউডে আয়োজিত গ্লোবাল ইয়ুথ ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে পেয়েছে ‘বেস্ট ড্রামা অ্যাওয়ার্ড’ এবং বাংলাদেশের ঢাকায় অনুষ্ঠিত দশম আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসবে ‘সেরা তরুণ নির্মাতা’র পুরস্কার এবং সিলেট চলচ্চিত্র উৎসব পেয়েছে ‘সেরা স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র’ পুরস্কার। এ ছাড়া ‘এ লেটার টু গড’ ছবিটি চীন, মিসর, ইতালি, ফিলিপাইন, মরক্কো, মেক্সিকো, জর্ডান, বাহামায় আয়োজিত উৎসবে বিভিন্ন বিভাগে মনোনয়ন পেয়েছে।
হেমন্ত সাদিক জানান, তিনি চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটির সদস্য। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। এখন তিনি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছেন। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ২০০৯ সাল থেকে। এ পর্যন্ত ১৫টি চলচ্চিত্র তৈরি করেছেন। ‘এ লেটার টু গড’ ছবিটি নিয়ে বললেন, ‘ছবিটি বিদেশি গল্পের ছায়া অবলম্বনে। এখানে সংলাপ কম, আমরা অভিনয়ের মাধ্যমে অনুভূতিগুলো ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছি।’
জানালেন, নরওয়ের পর ইতালির রোমে আরেকটি উৎসবে যোগ দেন তিনি। সেখানে রোমের একজন নির্মাতার সঙ্গে যৌথভাবে ছবি তৈরির জন্য তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আলোচনা চূড়ান্ত হয়েছে। শিগগিরই আবার রোমে যাবেন তিনি।