দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে দেশের প্রেক্ষাগৃহে দেখানো হচ্ছে নতুন চলচ্চিত্র ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’। ছবিতে নীরা চরিত্রে অভিনয় করে প্রশংসিত হয়েছেন শার্লিন ফারজানা। এরই মধ্যে খবর এসেছে, মাসের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়ার ব্রিসবেনে প্রদর্শিত হবে ছবিটি। অথচ ছবি মুক্তির আগমুহূর্ত থেকে এখন পর্যন্ত ফেসবুক ছাড়া আরও কোনো ধরনের প্রচারণায় দেখা যায়নি শার্লিনকে। এসব নিয়ে প্রথম আলোর সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
কোথায় ডুব দিলেন? নায়ক, পরিচালকসহ অন্যরা যেখানে ছবির প্রচারণায় ব্যস্ত, তখন আপনি একদম নিরুদ্দেশ ছিলেন।
আমি হাসপাতালে। মা হয়েছি। মা হওয়ার আগমুহূর্তের সময়টুকু আমি নিজেকেই দিয়েছি। তাই শারীরিকভাবে ছবির প্রচারণায় অন্যরা যেভাবে অংশ নিয়েছেন, আমি তা পারিনি। ফেসবুকে যতটা সম্ভব করেছি।
নায়িকা শার্লিনকে তো নিশ্চয় বড় পর্দায় দেখার সুযোগ হয়েছে?
আমি এখনো নিজেকে বড় পর্দায় দেখার সুযোগ পাইনি। বছরের শুরুর দিকে জানতে পারি, আমি মা হতে যাচ্ছি। এরপর থেকে অন্য রকম এক জীবন পার করছিলাম। শেষের দিকে মাতৃত্বের এতটাই কাছাকাছি চলে আসি যে বের হওয়ার সুযোগ হয়নি। একসঙ্গে দুটো আনন্দ উপভোগ করার সুযোগ হলো না।
অনেককে বলতে শুনেছি, প্রথম ছবির মুক্তি প্রথম সন্তানের মতোই আনন্দের। আপনি বাস্তব জীবনে সন্তানের মা হলেন। কেমন ছিল দুটো আনন্দের অনুভূতি?
একটা হচ্ছে আত্মার উত্তরণ, আরেকটা শরীরের পরিস্ফুটন। দুটো একসঙ্গে ঘটায় জীবনের অন্য রকম একটা পূর্ণতা পেয়েছি। আমি উপভোগ করেছি। একজন শিল্পীর উত্তরণ নান্দনিক একটি ছবি দিয়েই যে সম্ভব, তা ‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ দিয়ে অর্জন করতে পেরেছি। চলচ্চিত্রে একটা অসাধারণ অভিষেকের পাশাপাশি দর্শকেরাও যে ছবিটি ভালোভাবে গ্রহণ করেছেন, এটা ভালো লাগছে। মা হওয়ার মধ্য দিয়ে শারীরিকভাবে একজন নারী জীবনের পূর্ণতা পায়। দুটো মিলিয়ে আমিও নিজেকে পরিপূর্ণ মনে করছি। আমি দুই দিক থেকে ভাগ্যবতী। জীবনে এর চেয়ে সুন্দর মুহূর্ত আর হতে পারে না।
তাহলে এ কারণে ছবির প্রচারে আপনাকে দেখা যায়নি?
শুরুতে ছবিটি ফেব্রুয়ারিতে মুক্তি পাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু করোনার কারণে শেষ পর্যন্ত তা আর সম্ভব হয়নি। এবার যখন ছবি মুক্তির দিনক্ষণ চূড়ান্ত হলো, তখন আমি মা হওয়ার একদম কাছাকাছি। এই সময়টার দাবিদার শুধুই আমার অনাগত সন্তান। এ ক্ষেত্রে আমাকে পরিচালক যথেষ্ট সহযোগিতা করেছেন। নীরা চরিত্রটি যেমন বোল্ড, আলাদা ব্যক্তিত্ব আছে—আমার নিজের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গেও তার মিল আছে। আমার মা হওয়ার খবরটি পরিচালক শোনার পর শুধু এইটুকু বললেন, ‘তুমি জীবনের শ্রেষ্ঠতম সময় পার করছ। এখন তোমার ছবির প্রচারণার চেয়ে অনাগত সন্তানের দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া উচিত।’
এর আগে তো একটি সিনেমায় সম্ভবত কাজ করেছিলেন?
‘ইউ গট দ্য লুক’ প্রতিযোগিতার সময়ই আমার কাছে একটি ছবির প্রস্তাব আসে। অডিশনের পর আমাকে বাছাই করা হয়। কিন্তু চুক্তিপত্রে সই করা হয়নি, ছবির পরিকল্পনা সম্পর্কেও আমাদের কাউকে জানানো হয়নি। বিনোদন অঙ্গনে নতুন ছিলাম, হঠাৎ শুটিংয়ের জন্য ডাকে চলে যাই। দেখি, খুব অগোছালো। ‘জাগো’ নামের সেই ছবিতে একদিন অল্প কয়েকটি দৃশ্যে কাজ করেছিলাম আমি, আরিফিন শুভ ও নাঈম। আমরা কেউই ছবিটা পছন্দ করিনি। এতে অবশ্য পরিচালকেরও দোষ ছিল না।
‘ঊনপঞ্চাশ বাতাস’ সেই কষ্ট তাহলে লাঘব করেছে। দর্শক এরই মধ্যে নীরা চরিত্রটি পছন্দ করেছেন। নতুন কোনো স্বপ্ন তৈরি হয়েছে?
অবশ্যই লাঘব হয়েছে। আমি মনে করি এটাই আমার প্রথম সিনেমা। এই ছবিতে কাজ করতে এসে আমি অনেক কিছু শিখেছি। আমি চলচ্চিত্রে যদি সামান্য কিছুও করে থাকি, তা আমার পরিচালকের অবদান। আমি নাটকে কাজ করেছি, সেখানে শেখার জায়গাটা একেবারে ছিল না বললেই চলে। গতানুগতিক কাজ করেছি। ছবিতে কাজ করতে এসে মনে হচ্ছে আমি কাদামাটি, আমাকে পরিচালক গড়ে তুলেছেন। তিনি নীরা চরিত্রটি সুনিপুণ হাতে তৈরি করেছেন। ছবিটি দর্শক পছন্দ করার পর আমার দায়বদ্ধতা অনেক বেড়ে গেল। আগে কাজের সময় অতটা মনোযোগী ছিলাম না, এখন আরও মনোযোগী হব। আমার এখন মনে হয়, ইশ, আর একবার শুটিংটা করার সুযোগ যদি পেতাম, তাহলে মনপ্রাণ উজাড় করে কাজটা করতে পারতাম।
শুনেছি আপনি তখন নাকি পরিচালককে অনেক ভুগিয়েছিলেন?
আমি এখন আর ওসব কথা মনে করতে চাই না। শুধু একটা কথাই বলতে চাই, আরেকবার সুযোগ পেলে এ ভুলটা করতাম না। আমি তখন মিসগাইডেড ছিলাম।
আপনার স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির মানুষেরা ছবিটি দেখেছেন?
আমার স্বামী খুব পড়ুয়া মানুষ। সে সংস্কৃতি অঙ্গনে কাজ না করলেও সংস্কৃতির প্রতি তার আলাদা একটা ভালো লাগা ভালোবাসা কাজ করে। সে আমার ভেতরকার শিল্পসত্তাকে খুবই সম্মান করে। আমাকে অনেক ইন্সপায়ার করে। আমার শ্বশুরবাড়ির অনেকে একসঙ্গে ছবিটা দেখেছে। তারা ছবিটি দেখে খুবই খুশি। এমনকি তারা আমার কোনো ধরনের টেলিভিশন প্রোগ্রাম মিস করে না। আমার ননদের স্বামীও আর্টসেলের সদস্য।
আপনার বিয়েটা ‘গোপনে’ করতে হলো কেন?
প্রথমত আমার সঙ্গে যার বিয়ে হয়েছে, তার সঙ্গে আমার কোনো প্রেমের সম্পর্ক ছিল না। পুরো ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটেছে যে সেভাবে গুছিয়ে বিনোদন অঙ্গনের কাউকে জানানোর সুযোগ পাইনি। পুরো কাজটা খুব তাড়াহুড়ো করে হয়ে গেছে। তবে এটা ঠিক আমাদের পরিকল্পনা ছিল, বিবাহোত্তর সংবর্ধনা অনুষ্ঠান করার। এরপর আবার করোনা মহামারি শুরু হয়ে গেল। তাই হয়ে উঠল না।