আক্ষেপ থেকেই সিনেমায় অভিনয় করা কমিয়ে দিয়েছিলেন ইলিয়াস কাঞ্চন। সেই আক্ষেপ এখন কষ্টে পরিণত হয়েছে। যাঁর নামের পাশে ‘বেদের মেয়ে জোস্না’র মতো ব্যবসাসফল আর ‘বসুন্ধরা’, ‘ডুমুরের ফুল’ বা ‘সুন্দরী’র মতো শিল্পসফল সিনেমার নাম, সেই অভিনেতার কিসের আফসোস, কিসের কষ্ট!
তরুণ বয়স থেকে একটু একটু করে অভিনয়টা রপ্ত করেছেন তিনি। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে যখন বুঝলেন, অভিনয়ে পটু হয়ে উঠেছেন, তখন দেখা দিল অন্য সংকট। কী সংকট? ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘যখন বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করার মতো জায়গায় এলাম, তখন থেকেই আমার উপযোগী চরিত্র পাচ্ছিলাম না। আমার কষ্ট লাগত। অমিতাভ বচ্চনকে দিয়ে এই বয়সে তাঁর মতো চরিত্র তৈরি করে সিনেমা হচ্ছে, একইভাবে রজনীকান্তের কথা বলা যায়। শিল্পীর অবয়বের ওপর চিন্তা করে চরিত্র তৈরি করতে হয়। কাজের এই ধরন আমাদের দেশে নেই। যে কারণে আমাদের এখানে সময়ের আগেই শিল্পীর মৃত্যু ঘটে।’
কিছুটা থেমে ইলিয়াস কাঞ্চন আরও বলেন, ‘শিল্পী দিন দিন পরিণত জায়গায় আসে। এমন হয়, শেষ জীবনে এসেও সেরা অভিনয়টা করার সুযোগ পান অনেকে। কিন্তু আমাদের এখানে এমন একটা অবস্থা যে গুণ নিয়েও অভিনেতাকে সিনেমায় বাবা বা ভাইয়ের চরিত্রে দুই–চারটি দৃশ্য নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়, যার সঙ্গে মূল গল্পের যোগসূত্র থাকে না। নাটকেও প্রায় একই অবস্থা। ক্যারিয়ারে কিছু সিনেমা করে দর্শকদের কাছে ইলিয়াস কাঞ্চন হয়েছি। সেই জায়গা থেকে এখন কাজ করতে গেলে মনে হয়, সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছি। আমি কেন সিঁড়ি বেয়ে নামব? এভাবে না করার কারণে একসময় গল্পই আসা বন্ধ হয়ে যায়।’
অনেক সময়ই অনুরোধে অভিনয় করতে হয়। অনেক শুটিং সেটে গল্পের দাবি অনুযায়ী ব্যবস্থা থাকে না। আয়োজনেও ঘাটতি থাকে। অভিনয় করার পরও বেশির ভাগ সময় মন খারাপ করে বাসায় ফিরতে হয়। ‘আমি প্রায় পৌনে ৪০০ সিনেমায় অভিনয় করেছি। তারপর সিনেমার হিরো কেন নাটকে যাবে? তারপরও নাটকে এসেছিলাম মূলত এমন কিছু চরিত্র করতে, যা আমি সিনেমায় করিনি। কিন্তু পরে দেখা গেল, ভালো কোনো চরিত্রই আসছে না। আসলেও সিনেমা আর নাটকে একটা দৈন্য আছে, চিত্রনাট্যের দাবি অনেকেই পূরণ না করে ছাড় দিয়ে কাজ করেন। আমি চাই, কাজ করে বাসায় ফেরার সময় যেন মনে কোনো দুঃখ না থাকে। শিল্পীর এই কষ্ট কাউকে বোঝানো যায় না। ভালো চরিত্রের জন্য এখনো অপেক্ষা করি।’