বর্তমান সময়ের নানা শ্রেণির মানুষের সমাজবাস্তবতার গল্প ‘পাপ পুণ্য’—এভাবে গল্পের বর্ণনা দিলেন ছবির পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিম। যেখানে মানুষের ইগো ও অনুশোচনাবোধ ধরা দিয়েছে। গিয়াস উদ্দিন সেলিম বলেন, গল্পটি সমসাময়িক এবং এর বিচরণ আছে সমাজে। আর সেটিই ধরার চেষ্টা এখানে।
পরিচালক জানালেন, এটি একটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে তৈরি। ২০১৭ সালের কথা, স্বপ্নজাল ছবির কাজ চলাকালীন এক বন্ধুর মুখ থেকে গল্পটি শোনেন তিনি। সিনেমা তৈরির ভাবনা থেকে ২০১৯ সালের শেষের দিকে এসে চিত্রনাট্য লিখে ফেলেন। এরপরই টানা শুটিং করে সিনেমা বানান এই নির্মাতা।
গতকাল শুক্রবার দেশের ২০টি প্রেক্ষাগৃহে এবং উত্তর আমেরিকার ৯১টি হল এবং সিনেপ্লেক্সে মুক্তি পেয়েছে ছবিটি। গতকাল রাজধানীর মাল্টিপ্লেক্সগুলোতে ‘পাপ পুণ্য’র প্রদর্শনীতে উল্লেখযোগ্য দর্শকের উপস্থিতি দেখা গেছে। ২৭ মে উত্তর আমেরিকার আরও ২১টি হলে মুক্তি পাবে। মুক্তির আগে গত বৃহস্পতিবার কথা হয় ছবির পরিচালক গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে। ছবিটি নিয়ে তাঁর প্রত্যাশার কথা বললেন পরিচালক, ‘ছবিটি দেখে দেশের একটি মানুষও যদি সংবেদনশীল হন, তাহলে আমার কাজের সার্থকতা পাব। পরিচালকের চাওয়া, দর্শক যেন এই সিনেমাটি হলে গিয়ে দেখেন এবং তাঁদের প্রতিক্রিয়া যেন পরিবার, বন্ধুবান্ধবের কাছে বলেন।’ এই সিনেমার চরিত্রগুলোতে যাঁরা অভিনয় করেছেন, সবাই ছোট পর্দা ও বড় পর্দার পছন্দের মুখ। সবার কাছে চরিত্রগুলো নতুন, আলাদা রঙের, চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন তাঁরা।
‘মনপুরা’ ছবির প্রায় এক যুগ পর গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে এই ছবিতে কাজ করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। এই অভিনেতা বলেন, ‘মনপুরা ছবির পর সেলিম ভাইয়ের কোনো সিনেমায় আমার আর কাজ হয়নি। হঠাৎ একদিন সেলিম ভাই ফোন করে চ্যানেল আইতে আসতে বলেন এবং আমাকে নিয়ে আরেকটা সিনেমা বানাতে চান। চ্যানেল আইতে এসে আমি গল্পটা শুনি। এরপর বাসায় এসে চিত্রনাট্যটি পড়ে ভালো লেগে গেল।’ একজন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান চরিত্রে অভিনয় করেছেন চঞ্চল চৌধুরী। চরিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘চরিত্রটি আমার কাছে নতুন অভিজ্ঞতা। এটি কোনো সরল চরিত্র না। চরিত্রটির বাঁকে বাঁকে নতুন গল্প তৈরি হয়। চ্যালেঞ্জিং ছিল চরিত্রটি।’
ছবিটি দেখতে প্রেক্ষাগৃহে দর্শক কেন যাবেন, জানতে চাইলে চঞ্চল বলেন, ‘এই ছবিতে দর্শকের নতুন অভিজ্ঞতা হবে। প্রেক্ষাগৃহে বসে একটা চমৎকার জার্নি করবে দর্শক এবং পাপ পুণ্যর বিচার–বিশ্লেষণ প্রেক্ষাগৃহে বসেই করতে পারবেন দর্শক।’
সিয়ামের বাণিজ্যিক ঘরানার বাইরে একটু ভিন্নধারার কাজ এটি। তাঁর চরিত্রের নাম আলামিন। চরিত্র প্রসঙ্গে সিয়াম বলেন, ‘আমি যে ধরনের চরিত্রে কাজ করি, তা থেকে বেরিয়ে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজটি করেছি। লুক পরিবর্তন, ওজন বাড়ানো—সবই করতে হয়েছে আমাকে।’ এই অভিনেতা জানালেন, সিনেমাটি তাঁর কাছে একটা নস্টালজিক ব্যাপার। তিনি বলেন, ‘আমি তখন স্কুলের ছাত্র। মা–বাবার সঙ্গে মনপুরা ছবি দেখতে গিয়েছিলাম। সেই মনপুরা ছবির পরিচালক, শিল্পীদের সঙ্গে এক ফ্রেমে কাজ করেছি এই ছবিতে। স্মরণীয় হয়ে থাকবে ছবিটি।’
সিয়ামের নায়িকা সাহানাজ সুমী। সুমী আগে স্বল্পদৈর্ঘ্য, নাটক ও বিজ্ঞাপনে কাজ করলেও বড় পর্দায় এটি প্রথম কাজ তাঁর। চরিত্রের নাম সাথি। সুমী বলেন, ‘ওই সময় আমার একটি বিজ্ঞাপন আলোচিত হয়েছিল। তা দেখে সেলিম ভাই আমাকে অডিশনে ডাকেন। এরপর প্রায় এক মাস ধরে বিভিন্ন আঙ্গিকে চারবার অডিশন দিয়েছি। দুই মাস চরিত্রটির ওপর কর্মশালা করি। তখনো আমাকে চূড়ান্ত করা হয়নি। ভেবেছিলাম, হয়তো কাজটি করার সুযোগ থাকছে না। শুটিং শুরুর ১৫ দিন আগে হঠাৎ করেই আমাকে চুক্তির জন্য ডাকা হলো।’
এই নবাগত জানালেন, কাজটির জন্য তাঁকে ধৈর্য ও শ্রম দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এত বড় পরিচালক, সহশিল্পীদের সঙ্গে কাজ, কতটুকু পারব—বিষয়টি আমাকে ভাবিয়েছে। তবে কাজ করতে গিয়ে দেখলাম, যত বড় বড় শিল্পীর সঙ্গে কাজ হয়, কাজটি ততই সহজ হয়। কারণ, বড় মাপের শিল্পীরা পুরো দলকে নিয়ে এগোন।’ ছবিতে আরও অভিনয় করেছেন মামুনুর রশীদ, ফজলুর রহমান বাবু, গাউসুল আজম শাওন, মনির খান শিমুল, নাজনীন চুমকি প্রমুখ।