ফেরার মতোই ফিরলেন রজনীকান্ত

‘জেলার’–এ তামান্না ভাটিয়া ও রজনীকান্ত
টুইটার

বয়স তাঁর ৭২। ছোটখাটো গড়ন। মাথায় টাক। সব মিলিয়ে মোটেও উপমহাদেশীয় নায়কোচিত চেহারা নয়। কিন্তু নামটা যে রজনীকান্ত। তাঁর নামটাই যথেষ্ট। আজও তিনি অপ্রতিরোধ্য। তাঁর নতুন সিনেমা মুক্তির আগে তামিলনাড়ুর অফিসে অফিসে ছুটি ঘোষণা করা হয়। তাঁর সিনেমা দেখা তো কেবল সিনেমা দেখা নয়, যেন পর্দায় তাঁর উপস্থিতি উদ্‌যাপন করা। রজনীকান্ত কত বড় তারকা, সেটা আরও একবার প্রমাণিত হলো ‘জেলার’ দিয়ে। গত বৃহস্পতিবার মুক্তি পাওয়া ছবিটি মাত্র ৪ দিনেই ৩০০ কোটি রুপি আয় করেছে।

রজনীকান্তর ছবিতে কেবল রজনীকান্তই থাকেন, গল্প নিয়ে কেউ মাথায় ঘামান না—অভিনেতাকে নিয়ে এই প্রচলিত প্রবাদ কমবেশি সবাই জানেন। রজনীকান্তর ছবি দেখতে গিয়ে কেউ নির্মাণ, চিত্রনাট্য বা খুঁটিনাটি কারিগরি দিক নিয়ে মাথা ঘামান না। দর্শকেরা যান পর্দায় অভিনেতার নায়কোচিত পারফরম্যান্স দেখতে। তবে শেষ কয়েকটি সিনেমায় ‘রজনী-জাদু’ যেন কিছুটা ফিকে হয়ে এসেছিল। তাঁর পাঁড় ভক্তরাও সিনেমাগুলো দেখে খুব একটা সন্তুষ্ট হতে পারেননি।

তবে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে যখন রজনীকান্তর ১৬৯তম সিনেমার ঘোষণা আসে, তখন আশায় বুক বাঁধেন চলচ্চিত্রপ্রেমীরা। কারণ, নির্মাতার নাম যে নেলসন দীলিপ কুমার! তরুণ এই তামিল পরিচালক ক্যারিয়ারের শুরুতেই ‘কোলামাবু কোকিলা’, ‘ডক্টর’-এর মতো দর্শক ও সমালোচকপ্রিয় সিনেমা উপহার দিয়েছেন। তাঁর মতো পরিচালক যখন রজনীকান্তর মতো বড় তারকার সঙ্গে জুটি বাঁধেন, প্রত্যাশার পারদ যে ওপরে উঠবে, তা বলাই বাহুল্য। ছবিটি মুক্তির পর সে প্রত্যাশা কড়ায়-গন্ডায় মিটিয়েছেন রজনী-নেলসন জুটি।

রজনীকান্ত

তামিল, তেলেগু, কন্নড়, হিন্দি—এই চার ভাষায় মুক্তি পেয়েছে জেলার। ছবিটি মুক্তির প্রথম দিনই বক্স অফিস থেকে আয় ছিল ৪৮ দশমিক ৩৫ কোটি রুপি। দ্বিতীয় দিন এই অঙ্ক ছিল ২৫ দশমিক ৭৫ কোটি। তবে তৃতীয় দিন রজনীর এই ছবির আয়ের অঙ্ক কমে দাঁড়িয়েছিল ৫ দশমিক ৯৫ কোটিতে। চতুর্থ দিন আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে ‘জেলার’। গত রোববার ছবিটি আয় করেছে প্রায় ৩৮ কোটি রুপি। ছবিটি কেবল ভারত থেকেই ১৪৬ দশমিক ৪০ কোটি রুপি আয় করেছে। ৩০ কোটির বাকি আয় এসেছে ভারতের বাইরে থেকে।

তবে রজনীর জাদু এবার হিন্দি বলয়ে অনেকটাই কম। হিন্দিতে প্রথম দিন ৩৫ লাখ, দ্বিতীয় দিন ১৫ লাখ আর তৃতীয় দিন ২৫ লাখের কাছাকাছি আয় করেছে ‘জেলার’। রজনীর এই ছবি সবচেয়ে বেশি আয় করেছে তামিলনাড়ু থেকে। হিন্দিতে আয়ের অঙ্ক কম হওয়ার বড় কারণ হলো সানি দেওলের ‘গদার ২’। সানির এই ছবি ঝড়ের গতিতে এগোচ্ছে। মুক্তির মাত্র ৩ দিনের মাথায় ছবিটির আয় ১৩৪ দশমিক ৮৮ কোটি রুপি।

এর পাশাপাশি ৪৩ দশমিক ১১ কোটি রুপির ব্যবসা করে ফেলেছে অক্ষয় কুমার ও পঙ্কজ ত্রিপাঠির ‘ওএমজি ২’। তবে এই দুই হিন্দি সিনেমা মুক্তির আগে জোর তর্ক চলছিল—‘গদার ২’, নাকি ‘ওএমজি ২’ ব্যবসায় এগিয়ে থাকবে! রাজনীকান্ত নিশ্চয়ই তখন মুচকি হেসেছেন। অন্য দুই হিন্দি সিনেমা ভালো আয় করলেও ‘জেলার’–এর আয়ের সঙ্গে পেরে উঠছে না।

শুধু ভারতে নয়, পৃথিবীর নানা দেশে রয়েছেন রজনীর ভক্ত। এক দম্পতি জাপান থেকে শুধু ‘জেলার’ দেখতে ভারতে এসেছেন। তাঁরা রজনীকান্তের বড় ভক্ত। তাঁদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এই দম্পতির বক্তব্য, ‘আমরা থালাইভার এই ছবি দেখার জন্য মুখিয়ে ছিলাম। আমরা দেখেছি আর দারুণ লেগেছে।’

কিন্তু কী এমন আছে ‘জেলার’-এ? দর্শক-সমালোচক কেন ছবিটি নিয়ে এত মাতামাতি করছেন? সমালোচকেরা বলছেন, ছবিটিতে যেমন রজনীকান্তর নায়কোচিত ব্যাপার রাখা হয়েছে, তেমনি জেলার যেন শিল্পের বিচারে মানোত্তীর্ণ হয়, সেদিকেও খেয়াল রেখেছেন পরিচালক। এ জন্য কৃতিত্ব দেওয়া হচ্ছে পরিচালক নেলসনকে।

‘জেলার’ সিনেমার দৃশ্য। টুইটার

এই পরিচালক পর্দায় ডার্ক হিউমার ফুটিয়ে তুলতে দারুণভাবে পারঙ্গম। প্রথম দুই সিনেমায় কাজটি তিনি দারুণভাবে করেছেন। তবে শেষ সিনেমা ‘বিস্ট’-এ যেন কিছুটা পথ হারিয়েছিলেন। কিন্তু ‘জেলার’-এ নিজের ছাপ ভালোভাবেই রেখেছেন এই পরিচালক। দক্ষিণি সিনেমা, বিশেষ করে রজনীকান্তর সিনেমা মানেই ধুন্ধুমার অ্যাকশন। রজনী মারছেন আর শত্রুরা উড়ে গিয়ে অনেক দূরে পড়ছেন—অভিনেতার ছবিতে এটা চেনা দৃশ্য। তবে শুনতে আশ্চর্য হলেও সত্যি, ‘জেলার’-এ রজনী নিজে প্রায় কোনো অ্যাকশনই করেননি! কিন্তু নির্মাণ আর চিত্রনাট্যের গুণে ঠিকই উতরে গেছে ছবিটি। ‘জেলার’-এ রজনীকান্ত বিভিন্ন পুরোনো সিনেমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন।

যেমন ‘জেলার’-এ রজনী অভিনীত চরিত্রটির নাম মুথু পান্ডিয়ান; অভিনেতার ভক্তমাত্রই জানেন, মুথু ও পান্ডিয়ান নামে তাঁর আলাদা দুটি সিনেমাই আছে। এ ছাড়া ‘জেলার’-এর কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দৃশ্যে রজনীর আগের সিনেমা ‘বুলান্দি’ ও ‘রোবট’কে দারুণভাবে শ্রদ্ধার্ঘ জানানো হয়েছে। এটাও সমালোচকেরা পছন্দ করেছেন। ভারতীয় দৈনিক দ্য হিন্দুর সমালোচক গোপীনাথ রাজেন্দ্রান লিখেছেন, দুর্দান্ত লেখনী ও দারুণ রসবোধের সঙ্গে বাণিজ্যিক উপাদান—‘জেলার’ দিয়ে রজনী ও নেলসন দুজনই ফিরে এসেছেন।

‘জেলার’-এ রজনীকান্ত ছাড়াও আছেন জ্যাকি শ্রফ, তামান্না ভাটিয়া, শিব রাজকুমার, মোহনলালের মতো তারকারাও।