তখন করোনা মহামারির ভয়াবহ প্রভাব সারা দুনিয়ায়। ২০২০ সালের ১৪ জুন। সেদিন বলিউডে বড় ধাক্কা, সবাইকে চমকে অকালে বিদায় নেন বলিউডের তরুণ তুর্কি সুশান্ত সিং রাজপুত। দেখতে দেখতে চার বছর কেটে যাচ্ছে। আজ এ অভিনেতার জন্মদিন। যদি তিনি বেঁচে থাকতেন, তাহলে ২১ জানুয়ারি ৩৮তম জন্মদিন উদ্যাপন করতেন এই অভিনেতা। হয়তো এখন বলিউডে দাপুটের সঙ্গে নিজের অবস্থান বজায় রাখতেন।
১৪ জুন মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় নিজ বাসায় সুশান্তর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে বলা হয়েছে, আত্মহত্যা করেন সুশান্ত সিং রাজপুত। মৃত্যুর এত বছর পরও প্রিয় তারকার আত্মহত্যার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না সুশান্তর ভক্তরা। আজও সুশান্তর ভক্তরা বিশ্বাস করতে চান না যে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন। অভিনেতার মৃত্যুতে অভিযোগের তির তাঁর প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীর দিকে। বেশ কয়েক দিন জেলও খেটেছেন রিয়া।
২০২০ সালে বলিউডের সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের অপমৃত্যু। তাঁর মৃত্যুর পর ২০২১ সালের ২১ জানুয়ারি সুশান্তর বোন শ্বেতা সিং সুশান্তর ডায়েরির একটি পাতা শেয়ার করেন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এক্সে (সাবেক টুইটার) শ্বেতা লেখেন, ‘আমরা কীভাবে সুশান্তর জন্মদিন উদ্যাপন করতে পারি? আপনাদের মাথায় কোনো আইডিয়া থাকলে জানাবেন।’
তারপর নিজেই লিখেছেন, ‘সুশান্তর মৃত্যু নিয়ে শোক তো আর কম হলো না। আসুন, আমরা এবার তাঁর জীবনকে উদ্যাপন করি। চলুন, ২১ জানুয়ারি আমরা সবাই সুশান্তর গানে নাচি। আর সেই ভিডিও পোস্ট করি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। হ্যাশট্যাগে থাকবে “সুশান্ত বার্থডে সেলিব্রেশন”। এভাবেই আমরা আনন্দ করব, আনন্দ ছড়িয়ে দেব।’
জন্মদিন উদ্যাপনের আরও উপায় বলেছেন সুশান্তর এই বোন। লিখেছেন, ‘আচ্ছা, সুশান্তর জন্মদিনে তিনজন ব্যক্তিকে নিঃস্বার্থভাবে সাহায্য করলে কেমন হয়? এভাবে আমরা তার আত্মার শান্তি কামনা করতে পারি।’
সেই স্ট্যাটাসে সুশান্তর ৩০তম জন্মদিনে লেখা ডায়েরির একটি পাতাও শেয়ার করেন। সেখানে সুশান্ত লিখেছেন, ‘জীবনের প্রথম ৩০ বছর পার করে ফেললাম। এই ৩০ বছর আমি খরচ করেছি পরীক্ষায় ভালো নম্বর আনতে, ভালো টেনিস খেলোয়াড় হতে, ভালো অভিনয় করতে, ভালো নাচতে। অথচ ৩০টা বসন্ত পেরিয়ে এসে আমার মনে হচ্ছে, জীবনের মানে কেবল এটাতে–সেটাতে ভালো করতে শেখা না। বরং আমি সব সময়ই কিসে ভালো, সেই অনুসন্ধানের নামই জীবন।’
সুশান্তের মৃত্যু ভয়
অভিনেতার অকাল মৃত্যুতে সেই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয় তাঁর পুরোনো একটি সাক্ষাৎকার।
সেখানে সুশান্ত জানিয়েছিলেন, তিনি মৃত্যুকে সবচেয়ে বেশি ভয় পান। সমালোচক কোমল নাহাতাকে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন প্রয়াত অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল জীবনে তিনি কোন জিনিসটিকে সবচেয়ে ভয় পান?
অভিনেতার উত্তর শুনে সবাই চমকে গিয়েছিলেন। কী উত্তর দিয়েছিলেন সুশান্ত? সুশান্ত বলেছিলেন, ‘আমি মৃত্যুকে খুব ভয় পাই। যদি আমি তিন ঘণ্টা ঘুমাই তাহলে আমি বুঝতে পারি না যে কোথায় রয়েছি। আমার চারদিকে কে রয়েছে? কী হচ্ছে? যখন মৃত্যু দরজায় কড়া নাড়ে, তখন ঠিক এই রকমই কিছু মনে হয়। এটা ভাবলেই আমি যেন শিউরে উঠি। প্রচণ্ড ভয় লাগে আমার।’ সুশান্ত যেহেতু মৃত্যুকে এতটা ভয় পেতেন সেই জন্যই অভিনেতার মৃত্যুর পর তাঁর আত্মহত্যার ঘটনা পরিবার ও ভক্তরা মেনে নেননি।
পাটনার ছেলে সুশান্তর জন্ম ১৯৮৬ সালের ২১ জানুয়ারি। একসময় দিল্লিতে চলে আসে তাঁর পরিবার। দিল্লি কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়েও ভর্তি হন। কিন্তু সেই সময় থেকে থিয়েটারের দিকে ঝোঁকেন তিনি। নাচও শেখেন। এ জন্য পড়ালেখা শেষ করতে পারেননি।
ছোট পর্দায় অভিনয়ের মধ্যে দিয়েই রূপালি দুনিয়ায় হাতেখড়ি সুশান্ত সিং রাজপুতের। টেলিভিশনের জনপ্রিয় হিন্দি ধারাবাহিক ‘পবিত্র রিস্তা’ ছিল সুশান্ত অভিনীত অন্যতম হিট ডেইলি সোপ। ট্যালেন্টে ভর করে ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দায় নাম লেখান সুশান্ত। ২০১৩ সালে ‘কাই পো চে’ ছবি দিয়ে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক। নিজের প্রতিভার সাক্ষর রেখে দর্শকের মনে জয় করলেন। আকাশ দেখতে ভালোবাসতেন। প্রিয় ছিল দূর আকাশের নক্ষত্র। প্রিয় টেলিস্কোপে দুচোখ রেখে রাতের তারার আনাগোনা দেখা ছিল নেশা। তারপর যেন এই দূর আকাশের তারা হয়ে গেলেন সুশান্ত সিং রাজপুত।