পদ্মশ্রী পাওয়া দর্শনম মগুলাইয়ায় দিন কাটছে দিনমজুর হিসেবে
পদ্মশ্রী পাওয়া দর্শনম মগুলাইয়ায় দিন কাটছে দিনমজুর হিসেবে

রাস্তায় দিনমজুরের কাজ করছেন পদ্মশ্রীপ্রাপ্ত এ শিল্পী, হারিয়েছেন তিন সন্তান

দুই বছর আগে বাদ্যযন্ত্র কিন্নরকে নতুনভাবে আবিষ্কার করে ভারতের মর্যাদাপূর্ণ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক সম্মাননা পদ্মশ্রী পেয়েছিলেন তেলেঙ্গানার লোকশিল্পী দর্শনম মগুলাইয়া। সম্মাননা স্মারকের সঙ্গে ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে ১ কোটি রুপি পেয়েছিলেন তিনি। তবে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, তিন সন্তানের চিকিৎসায় এখন নিঃস্ব দর্শনম। তাঁর দিন কাটছে হায়দরাবাদে একটি কন্সট্রাকশন সাইটে দিনমজুর হিসেবে।
টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতীয় সরকারের কাছ থেকে দর্শনম যে ১ কোটি রুপি ক্যাশ পেয়েছিলেন, তাতে সংসারের খরচ এবং ধার শোধ করতেই শেষ হয়ে গেছে। ফলে বর্তমানে ৭৩ বছর বয়সে এসেও পরিবারের খরচ চালাতে কঠিন পরিশ্রম করতে হচ্ছে তাঁকে।
টাইমস অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দর্শনম জানিয়েছেন, ‘আমার এক ছেলে ভীষণ অসুস্থ। ওর আর আমার চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে সাত হাজার রুপির ওষুধ লাগে। এ ছাড়া নিয়মিত ব্লাড টেস্টের খরচও আছে।’ সংবাদমাধ্যমটিকে তিনি আরও জানিয়েছেন যে তাঁর ৯ সন্তানের মধ্যে ৩ জন ইতিমধ্যেই অসুস্থতার কারণে মারা গেছেন।

বাকি তিনজন বিবাহিত; তিনজন এখনো ছাত্র, তারা দর্শনমের ওপর নির্ভরশীল। চার বছর আগে শিল্পীর স্ত্রীও মারা গেছেন।

তেলেঙ্গানার লোকশিল্পী দর্শনম মগুলাইয়া

দর্শনমের কথায়, ‘একটা কাজের জন্য আমি অনেক লোকের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু তাঁরা সহানুভূতি এবং বিনয়ের সঙ্গে আমাকে ফিরিয়ে দিয়েছেন। সবাই আমাকে আমার গৌরবময় অতীতের জন্য প্রশংসা করেছেন ঠিকই এবং এমনকি অনেকে আমাকে অল্প পরিমাণে সাহায্যও করেছেন, কিন্তু কোনো কাজ আমি পাইনি।’

কিন্তু দুই বছরে এক কোটি রুপি শেষ! এই বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, শুধু চিকিৎসা নয়, ওই টাকায় তিনি তিন সন্তানের বিয়ে দিয়েছেন। আর হায়দরাবাদের মফস্বল এলাকায় একটু জমি কিনেছেন। সেখানে বাড়ি বানাতে বানাতে তাঁর বাকি অর্থ ফুরিয়ে যায়। ফলে সেই কাজও মাঝপথে বন্ধ হয়ে রয়েছে।
তবে কেবল এক কোটি রুপি নয়, ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে ৬০০ স্কয়ার গজ–এর জমিও পাওয়ার কথা ছিল দর্শনমের। কিন্তু সেই জমি তিনি এখনো বুঝে পাননি।

এ বিষয়ে দর্শনম বলেন, ‘জায়গাটার জন্য আমি সরকারি দপ্তরে ঘোরাঘুরি করেছি এবং সে সময় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গেও আমার সাক্ষাৎ হয়েছে। সবাই ইতিবাচক সাড়া দেওয়ার পরও কিছুই হয়নি।’
দর্শনম মগুলাইয়ার পূর্বপুরুষেরা প্রায় ৪০০ বছর আগে ওয়ানাপার্টি রাজার দরবারে বাদ্যযন্ত্র কিন্নর বাজিয়েছিলেন বলে জানা যায়। বংশের পঞ্চম প্রজন্মের ধারক হিসেবে তিনি যন্ত্রটি দিয়ে শ্রোতাদের মন্ত্রমুগ্ধ করেছেন।