তরুণ অভিনেত্রী নূর মালবিকা দাসের আকস্মিক মৃত্যুতে তাঁর গোটা পরিবার শোকস্তব্ধ। বলা হচ্ছে গলায় ফাঁস লাগিয়ে ‘আত্মহত্যা’ করেছেন মালবিকা। আপাতদৃষ্টে এটা আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনে হচ্ছে। তবে পুলিশ হত্যার সম্ভাবনা পুরোপুরি উড়িয়ে দিচ্ছে না।
মুম্বাইয়ের ওশিওয়াড়া এলাকার এক বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে মালবিকার ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। ৬ জুন তাঁর মৃত্যু হয়েছে। মৃত্যুর চার দিন পর পুলিশ মালবিকার পচাগলা ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করেছে। বাড়ির সিলিং ফ্যান থেকে ঝুলছিল তাঁর দেহ। চার দিন ধরে মৃত অবস্থায় পড়ে ছিলেন মালবিকা। প্রতিবেশীরা এই অভিনেত্রীর ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে পুলিশকে জানান। পুলিশ দরজা ভেঙে ঢুকে মালবিকার মৃতদেহ উদ্ধার করেছে। এই ফ্ল্যাটে নিজের পরিবারের সঙ্গে থাকতেন তিনি।
এই ঘটনার বেশ কিছু দিন আগে আসামের করিমগঞ্জে নিজেদের বসতবাড়িতে ফিরে গেছেন অভিনেত্রীর পরিবার। ভারত-বাংলাদেশ সীমানার নিকটে অবস্থিত করিমগঞ্জের মেয়ে মালবিকা। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে যে মালবিকা মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন। আর তাই তিনি এমন চরম পদক্ষেপ বেছে নিয়েছেন। করিমগঞ্জে মালবিকার এক আত্মীয় টাইমস অব ইন্ডিয়াকে জানিয়েছেন, ‘নূর অভিনেত্রী হওয়ার আশায় মুম্বাই গিয়েছিল। অনেক আশা নিয়ে ও ওই শহরে গিয়েছিল আর তার জন্য কঠোর পরিশ্রম করছিল মালবিকা। আমরা জানি, মালবিকা তার সাফল্যে সন্তুষ্ট ছিল না আর তাই ও এ রকম পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে।’
মালবিকার আত্মহত্যার ঘটনার পর অল ইন্ডিয়া সিনে ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এআইসিডব্লুএ) পক্ষ থেকে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্দে এবং উপমুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবিসের কাছে এই মামলার গভীর তদন্তের দাবি তোলা হয়েছে। পুলিশের অনুমান যে নূর মালবিকাকে হত্যা করা হয়েছে আর তাই মুম্বাই পুলিশ এই মামলার গভীরে গিয়ে তদন্ত করছে। সবদিক থেকে তারা খতিয়ে দেখছে।
পুলিশ মালবিকার ক্ষতবিক্ষত দেহ ময়নাতদন্তের জন্য গোরেগাঁওয়ের সিদ্ধার্থ হাসপাতালে পাঠিয়েছিল। কিন্তু মময়নাতদন্তের রিপোর্ট এখনো হাতে পায়নি পুলিশ। ময়নাতদন্তের রিপোর্টে তাঁর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে নিশ্চিত হবে পুলিশ। মালবিকার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অলোক নাথ পাঠকের হাতে অভিনেত্রীর মৃতদেহ বুঝিয়ে দেওয়া হয়৷ অলোক নাথ এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহযোগিতায় ৯ জুন মালবিকার মরদেহ দাহ করেছেন। পুলিশ আসামে তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন।
কিন্তু মালবিকার মৃতদেহ নিতে কোনো আত্মীয়-পরিজন আসেননি। পুলিশ মালবিকার ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মুঠোফোন, ডায়েরি, আর বেশকিছু ওষুধপত্র উদ্ধার করেছে। মালবিকার মুঠোফোন থেকে ডিলিট হওয়া নানা চ্যাট উদ্ধার করছে মুম্বাই পুলিশের সাইবার সেল।
ইনস্টাগ্রামে মালবিকার অনুসরণকারীর সংখ্যা দেড় লাখের বেশি। মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেষ পোস্টটি করেছিলেন। মালবিকা নজর কেড়েছিলেন ডিজনি প্লাস হটস্টারের ওয়েবসিরিজ ‘দ্য ট্রায়াল’-এ। এই সিরিজে তাঁকে কাজল এবং যিশু সেনগুপ্তর মতো অভিনেতাদের সঙ্গে দেখা গিয়েছিল। এ ছাড়া আসামের এই বাঙালিকন্যা বেশ কিছু ছবি এবং সিরিজে কাজ করেছেন। ৩৭ বছরের মালবিকা এর আগে কাতার এয়ারওয়েজের বিমানসেবিকা ছিলেন।