ক্যারিয়ার শুরু হয়েছিল সিনেমার পর্দা দিয়ে। তিনি নাম লিখিয়েছিলেন অভিনয়ে। কিন্তু ভাগ্য সুপ্রসন্ন হয়নি। শুরুতেই নায়ক হিসেবে ব্যর্থ। নামের আগে যুক্ত হয়েছিল ফ্লপ নায়ক। চেষ্টা করেও পরে আর টিকতে পারেননি সিনেমায়। মিডিয়ায় অঙ্কের হিসাব না মিললেও মিলিয়েছেন রাজনীতির মাঠে। সম্প্রতি নির্বাচনে বিহার থেকে তিনি বিপুল ভোটে জয়ী হন। পান মন্ত্রিত্ব। ফ্লপ থেকে রাজনীতির মাঠে নাম লেখানো এই অভিনেতার নাম চিরাগ পাসোয়ান।
চিরাগকে ২০১১ সালে বর্তমান সংসদ সদস্য অভিনেত্রী কঙ্গনা রনৌতের সঙ্গে জুটি বেঁধে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। ২০১১ সালের নভেম্বরে ‘মিলে না মিলে হাম’ নামের সেই সিনেমা মুক্তি পায়। সিনেমায় মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল চিরাগকে। তিনি নিজের নামেই সেই সিনেমায় অভিনয় করেন। ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে তাঁকে দেখা গিয়েছিল। যদিও ছবিটি বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে। সিনেমার মান এতটাই খারাপ ছিল যে এর আইএমডিবি রেটিং ১০–এ সাড়ে ৩। বছর বছর তিন চেষ্টা করে সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ পাননি। পরে ফ্লপ নায়কের তকমা নিয়েই মিডিয়া থেকে বিদায় নেন।
পরবর্তীকালে বিভিন্ন সময় সিনেমা নিয়ে কথা বললেও অভিনয়ে ফেরার আর ইচ্ছা তেমন ছিল না চিরাগের। তাঁর বাবা ছিলেন রাজনীতিবিদ। এ কারণে চিরাগ পরে যোগ দেন রাজনীতিতে। বাবার পথে হেঁটেই তিনি সফল হন। বাবার হাত ধরেই রাজনীতির মাঠে সফল হতে থাকেন। বাবার পরামর্শে ২০১৪ সালে জামুই থেকে লোকসভা নির্বাচনে লড়েন চিরাগ। জিতেও যান। সুদর্শন এই যুবককে নিয়ে ধীরে ধীরে আগ্রহ বাড়তে থাকে বিহারের রাজনীতিতে। পরেরবারও সফল হন। ২০১৯ সালের সাধারণ নির্বাচনেও জামুই কেন্দ্র থেকেই নির্বাচন লড়ে আসন ধরে রাখেন তিনি।
আরও জানা যায়, বাবা রামবিলাসের মৃত্যুর পর রাজনৈতিক উত্তরাধিকার নিয়ে চিরাগ ও তাঁর কাকা পশুপতির মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়। ২০২০ সালের বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এনডিএ ছাড়েন চিরাগ। রাজনীতের মাঠে তাঁকে বারবার কোণঠাসা করা হয়। তবু তিনি হাল ছাড়েননি। বাবার ভোটব্যাংক সব সময়ই তাঁর সঙ্গে ছিল। এটাই ছিল তাঁর বড় শক্তি। অন্যদিকে তাঁর জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগায় বিজেপি। চিরাগের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তাকে স্বীকৃতি দিয়ে ২০২৩ সালে তাঁকে স্বাগত জানায় বিজেপি।
সম্প্রতি ভারতের জাতীয় নির্বাচনে এনডিএর শরিক দল লোক জনশক্তি পার্টির (রামবিলাস) হয়ে নির্বাচনে অংশ নেন চিরাগ। নির্বাচনী ফলাফলে জানা যায়, হাজিপুর কেন্দ্র থেকে চিরাগ ছয় লাখের বেশি ভোটে জিতেছেন। আরজেডির প্রার্থীকে হারিয়েছেন প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার ভোটে। তাঁর বাবা রামবিলাস পাসোয়ান ছিলেন এই আসনের আটবারের জয়ী জনপ্রিয় নেতা।
আনন্দবাজারের তথ্যমতে, প্রথম দিকে জাতীয় রাজনীতিতে বাবা রামবিলাসের মতো ততটাও সমাদৃত ছিলেন না চিরাগ। তবে নিজেই নিজের ভাগ্য পাল্টালেন। রাজনীতি পরিবারে বেড়ে ওঠায় সাহস নিয়ে সবকিছু মোকাবিলা করেছেন। বিহার থেকে এখন তিনি জাতীয় রাজনীতির জনপ্রিয় নেতা। মোদির শপথ অনুষ্ঠানের পরই জানা যায়, চেরাগ এবার খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ মন্ত্রণালয় দায়িত্ব পেয়েছেন। তাঁর সফলতাকে ঘিরে এখন আনন্দের বাতাস বইছে বিহারের রাজনীতিতে।